ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের দাপট, আসছে ৫ শৈত্যপ্রবাহ

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২২:৫৪, ২ জানুয়ারি ২০২৫
ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের দাপট, আসছে ৫ শৈত্যপ্রবাহ

নতুন বছরের শুরুতেই শীতে কাঁপছে দেশ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, ঢাকায় তাপমাত্রা ১৬-তে নামতেই শীতে কাঁপছে রাজধানী।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই জানুয়ারিতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৫টি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। কোনো কোনো শৈত্যপ্রবাহের ফলে দেশের তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।

সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, দেশের পশ্চিম, উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং অন্যান্য অঞ্চলে এই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুন:

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. মমিনুল ইসলামের সই করা দীর্ঘমেয়াদি ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক থেকে দুটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে তীব্র (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং দেশের অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো জানায়, জানুয়ারি মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। তবে, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।

এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা ও অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

জানুয়ারি মাসের নদ-নদীর অবস্থায় বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।

কৃষি আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে জানানো হয়, জানুয়ারি মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন এক দশমিক ৫০ থেকে তিন দশমিক শূন্য মিলিমিটার ও গড় সূর্য কিরণকাল পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা থাকতে পারে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। 

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তিনি জানান, হাড় কাঁপানো বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বর্তমানে জেলাজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সন্ধ্যা থেকে শীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়ছে এবং রাতের তাপমাত্রা আরো কমতে শুরু করেছে।

রাজধানীতে শীত

গত দুই দিন ধরে রাজধানীর আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে আছে সূর্য। বুধবারের (১ জানুয়ারি) তুলনায় বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) ২ ডিগ্রি কমে গেছে তাপমাত্রা। হিমেল বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা কমায় শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। 

উত্তরাঞ্চলে শীত

পৌষের দ্বিতীয়ার্ধে এসে দেশে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিম বাতাস। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে।

চলমান শীত উত্তরের জেলাগুলোতে আরো দু-তিন দিন থাকতে পারে বলে রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রার উন্নতি হলেও ফের মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদপ্তরটি।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “ঘন কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে ঠান্ডার অনুভূতি বেড়েছে। এ ছাড়া, দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজ (বৃহস্পতিবার) রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরো দু-তিন দিন এই অঞ্চলে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।’’

রংপুরের তাজহাট এলাকার ভ্যানচালক আতিয়ারুল ইসলাম বলেন, “গত তিন দিন ধরে রংপুরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে। পরিবারের চার সদস্যের ভরণপোষণে বাধ্য হয়েই ঠান্ডার মধ্যে ভ্যান চালাই। তবে, রাস্তায় মানুষ কম থাকায় আয় তেমন হচ্ছে না।’’

এদিকে, কনকনে ঠান্ডায় সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া, গত এক সপ্তাহে দেড় হাজারের মতো শিশু ও বয়স্ক রোগী ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন।

কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, গতকাল তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও কমেনি শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, “গত দেড় মাস ধরেই এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। চলতি মাসে কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

গাইবান্ধার জনজীবন বিপর্যস্ত

শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার মানুষের জীবন।

গাইবান্ধা শহরের মোটরসাইকেলের চালক ফয়সাল রহমান। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে খুব শীত। মোটরসাইকেল চালাতে খুবই কষ্ট হয়। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তায় এত কুয়াশা পড়ে, সামনের কিছুই দেখা যায় না। সঙ্গে তীব্র ঠান্ডা বাতাস একেবারে কাবু করে ফেলেছে।’’  

সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে যে শীত পড়ছে, তাতে আমাদের কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ধানের বীজতলা ঘনকুয়াশায় হলুদ রং ধারণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’  

সদর উপজেলার কুমারপাড়া বাজারের ছোট মুদি দোকান চালান ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘পেটের দায়ে পরিবারের জন্য শীতের মধ্যেও দোকান খুলতে হয়। শীতে বিক্রি একেবারেই নেই। উপায় নাই, কাজ করি খাওয়া লাগবে, তাই বের হইছি।’’ 

খোলাহাটি ইউনিয়নের দশানি গ্রামের অটোরিকশা চালক জিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘এবারের শীতে হাত-পা ব্যথা করে। গাড়ি চালানোর সময় দুই হাত মনে হয় অবশ হয়ে যায়।’’ 

সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কাউন্সিলের বাজার এলাকার ভ্যানচালক খবির উদ্দিন শহরে এসেছিলেন ভাড়া নিয়ে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘ঠান্ডার কারণে রাস্তায় মানুষ কম বের হচ্ছে। আগে সারা দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কামাই (আয়) হতো। এখন ৩০০ টাকাও হয় না। ঠান্ডায় গাড়ি চালানোও খুব কষ্ট।’’ 

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান বলেন, ‘‘উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের জন্য এখন পর্যন্ত দুই ধাপে ২ হাজার ৬৫০টি কম্বল পেয়েছি। স্থানীয়রা ছাড়াও বিভিন্ন এতিমখানায় এসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’’

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন রংপুর প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি মাসুম ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি বাদশাহ সৈকত ]

ঢাকা/সাইফ/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়