ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৩ ১৪৩১

সচিবালয়ের সামনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের অবস্থান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ৫ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৩:৫৩, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
সচিবালয়ের সামনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের অবস্থান

সচিবালয়ের সামনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের অবস্থান

চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশের ৪০ তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তরা।

রোববার (৫ জানুয়ারি) সচিবালয় এলাকায় সকালে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচি আয়োজকদের একজন মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সবাই আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমাদের পরিবার এই চাকরির জন্য কত কিছুই ত্যাগ করেছে কিন্তু আজ আমরা অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এ যন্ত্রণা বোঝানোর মতো নয়৷”

তিনি বলেন, “আমাদের অন্যায়ভাবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায়না। আমরা সরকারের কাছে আহবান করবো দ্রুত আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার।”

যায়েদুল হাসান নামের আরেকজন বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, আইজিপি স্যার বরাবর এবং গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। কোন সাড়া পাচ্ছিনা। আজ আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। শান্তিপূর্ণ এ অবস্থান কর্মসূচি শেষে সংক্ষিপ্ত একটা সংবাদ সম্মেলন করবো। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।”

শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ৪০ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সারদা থেকে অব্যাহতি পাওয়া এক সাব ইন্সপেক্টরকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়,  “আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই/২০২৩ ব্যাচে গত ২০২৩ সালে ৫ মে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিট হতে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারস ব্যাচ-২০২৩ এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এ সময়ে পুলিশ একাডেমি কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত মেনু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সকল প্রশিক্ষণার্থীকে প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু আপনি (প্রশিক্ষণার্থী এসআই) উক্ত সরবরাহকৃত নাশতা না খেয়ে হৈ চৈ করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। আপনি অন্যান্য প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এছাড়াও আপনি অন্যদের সাথে হৈ চৈ করতে করতে নিজের খেয়াল খুশিমত প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান।

একজন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই হিসেবে এরূপ আচরণ এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলা পরিপন্থি। আপনার এরূপ আচরণ মাঠের সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করেছে এবং অন্য প্রশিক্ষণার্থীদেরকে শৃঙ্খলা ভঙ্গে উৎসাহিত করেছে মর্মে আপনার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) পুলিশ পরিদর্শক (সঃ) মো. মহসিন আলী বরাবরে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের প্রেক্ষিতে ৩ অক্টোবর পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (ফিল্ড উইং) মো. সিদ্দিকুর রহমান এতদসংক্রান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন।

এসব অভিযোগের কারণে প্রিন্সিপালের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। বর্ণিত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আপনি নির্ধারিত তিন দিন সময়ের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করেন। আপনার দাখিলকৃত কৈফিয়তের জবাব পর্যালোচনান্তে সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। পূর্ব নির্ধারিত মেনু অনুযায়ী সরবরাহকৃত নাশতা আপনি না খেয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে হৈ চৈ করে মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান। আপনি ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী তথা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেন। একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে আপনার এ ধরনের আচরণ চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও অসদাচরণের শামিল। আপনার উপরোক্ত শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ হিসেবে বিবেচিত সাব-ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পথে বড় ধরনের অন্তরায় ও অযোগ্যতার শামিল।

এমতাবস্থায় আপনার এহেন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের কারণে মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে ডিসচার্জ করণের বিষয়ে অনুমোদনের জন্য  গত ১২ অক্টোবর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকায় পত্র প্রেরণ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং-২) বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ১৫ অক্টোবর আপনাকে চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে ডিসচার্জ করণের আদেশ জারির বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং পিআরবি-১৯৪৩ এর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করেন। এমতাবস্থায় প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে অদ্য ২১ অক্টোবর পূর্বাহ্নে ডিসচার্জ করা হলো।”

ঢাকা/এএএম/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়