ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ চায় সংস্কার কমিশন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৬ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৬:৩৭, ৬ জানুয়ারি ২০২৫
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ চায় সংস্কার কমিশন

সোমবার আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কথা বলেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ হওয়া উচিত। এ ছাড়া নির্বাচনের বৈধতার জন্য একটি নির্দিষ্ট শতাংশ ভোট পড়াকে বাধ্যতামূলক করার বিধান আনাসহ একগুচ্ছ সংস্কার চায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব সংস্কারের কথা বলেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ। 

তিনি বলেন, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। একক প্রার্থী থাকলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা উচিত। কত শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন বৈধ হবে সেটি নির্ধারণ করে দিতে হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সব সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন করবেন জনপ্রতিনিধিরা। সরকারি কর্মচারীরা শুধু সাচিবিক ভূমিকা পালন করবেন।’’

‘‘স্থানীয় সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত ও অনুমোদনে জনপ্রতিনিধিরা সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত থাকবেন। সংসদ সদস্যরা তাদের কার্যক্রমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রমের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর শেষে জনপ্রতিনিধির কাজের মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা একটি নীতিমালার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্কুল-কলেজের শিক্ষক বা চাকরিজীবীদের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের নির্বাচনে সুযোগ দিলে তাদের আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে এবং এটা পার্ট টাইম হিসেবে তারা করতে পারবেন।’’ 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সুপারিশ বেশি আসছে। আমাদের কাছে সুপারিশ আসছে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য। মানুষ বলছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ শূন্যতা দূরীকরণের জন্য তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন চাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে এ নিয়ে স্থানীয় লোকদের মতামত আগে নিতে হবে। এক্ষেত্রে একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদেরও মতামত একই।’’

তিনি বলেন, ‘‘পৌরসভার অবস্থা ভালো না। অনেকের বেতন বাকি। এগুলো বিলুপ্ত করা যায় কি না দেখতে হবে। পৌরসভাগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি না সেটাও সংস্কার কমিশন ভাবছে।’’

এ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার নারী প্রতিনিধিরা নানাভাবে বঞ্চিত। কথা বলারও সুযোগ পান না। কাজের ক্ষেত্রও কম। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। নারী আসনে নির্বাচন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে হতে পারে। এ ছাড়া বাজেট সংকটের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা কিছু সামাজিক বাস্তবতার মুখোমুখি হন। নির্বাচন নির্দলীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আদলে করা হলে এ সংস্কৃতির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। স্থানীয় সরকারে পার্বত্য জেলাগুলোর ভূমিকা নিয়ে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে কমিশন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ও দায়িত্ব পরিষ্কার করতে আধুনিক ও সমন্বিত আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। তাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা যাতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য এদের কার্যক্রম মনিটরিং বা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বডি রাখা যেতে পারে। স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে।’’

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানো জরুরি। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া দলীয় সরকারের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার বা নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকে তাদের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে নির্বাচনকালীন যে সরকার দায়িত্বপালন করবে তার মেয়াদও বাড়ানো যেতে পারে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড সদস্য, পৌরসভা ও সিটি করপরোশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করতে হবে। ‘না’ ভোটের পরিমাণ বেশি হলে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে হবে।’’

ঢাকা/হাসান/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়