সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: প্রধান উপদেষ্টা

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা সাম্প্রদায়িক ছিল না বলে সফররত মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্সকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে সিনেটর পিটার্স বলেন, “মিশিগানে, বিশেষত ডেট্রয়ট শহরে, অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।”
মার্কিন এই সিনেটর বলেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে প্রচুর ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এই ভুল তথ্যের কিছু অংশ আমেরিকাতেও পৌঁছেছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।”
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ বা পরিচয় যা-ই হোক না কেন, সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর সংখ্যালঘুদের, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছিল, তা ধর্মীয় কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা সিনেটর পিটার্সকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম পরিদর্শনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য মার্কিন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদেরও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “এর মাধ্যমে তারা ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন। আমরা আপনাদের সাহায্য চাই। দয়া করে আপনার বন্ধুদের বলুন বাংলাদেশ সফর করতে। তাহলে আমরা এই ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়তে পারব।”
আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে মার্কিন সিনেটরকে আশ্বস্ত করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি অল্প সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে দলগুলো যদি বড় সংস্কার প্যাকেজ চায়, তাহলে নির্বাচন কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠিত হবে।
ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
সিনেটর পিটার্স অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর প্রতিবেদন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এবার উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে যেমন দেখা যেতো নির্বাচনের দিনটিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদযাপন করতে, এবারো নির্বাচনের দিন সেভাবে বড় আকারে উদযাপন করা হবে।”
গ্যারি পিটার্স সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, “আমেরিকা বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রত্যাশা করছে।”
বৈঠকে উভয় নেতা সামাজিক ব্যবসা পরিচালনা, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব তৈরি এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ