ঢাকা     শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩২

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ মামলার চার্জশিট প্রস্তুত: আইন উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ১৩ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৮:৩৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ মামলার চার্জশিট প্রস্তুত: আইন উপদেষ্টা

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ফাইল ফটো

ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক ৭ হাজার ১৮৪টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, “অনেকে অনেকভাবে নাম ঢুকিয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত আমাদের আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন। তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছেন। এরচেয়ে দ্রুত কাজ করা সম্ভব কি না আমার জানা নেই। এরপরও আমরা আরো কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে এটাকে আরো দ্রুততর করার চেষ্টা করছি।”

আরো পড়ুন:

তিনি জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৭ হাজার ১৮৪টি মামলা আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। একটা মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে অনেক কাগজপত্র প্রত্যাহার করতে হয়। অনেক সময় এমন মামলা আছে যেগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক নয়।

‘‘৫০ হাজার থেকে এক লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য এসেছে। আমাদের সরকারের মেয়াদের মধ্যে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো,” যোগ করেন তিনি।

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার দ্রুত গতিতে শেষ হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ঘটনা ঘটেছিল। এরই মধ্যে পুলিশ চার্জশিট প্রস্তুত করেছে। আইজিপি অফিস এটা পর্যালোচনা করছে। আমি আশা করছি চার্জশিট আজই আদালতে দাখিল করা হবে।”

‘‘আমরা যে আইনগত পরিবর্তন এনেছি, চার্জশিট দাখিল করার পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। আমরা যেহেতু ফরেন্সিক ও ডিএনএ রিপোর্ট পেয়েছি, ডিএনএতে আলামত মিলেছে, আমার ধারণা এ বিচার কাজ আরো আগে, অনেক দ্রুত গতিতে শেষ হবে,” এমনটাই আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, “শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনের ক্ষেত্রে চারটি জিনিস ঘটেছে। তারা আগের আমলে জামিন পেয়েছিল, এখন বেইলবন্ড নিয়ে বের হয়ে গেছে। অধিকাংশ জামিন হাইকোর্ট থেকে হয়েছে। এই জামিনগুলোর অনেকগুলো আপিল বিভাগে বাতিল হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নিম্ন আদালত থেকে কিছু কিছু জামিন হয়েছে, এটা শোনার পর আমরা হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বের হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রেপ্তার করা গেছে। আপনাদের সঙ্গে আমি একমত, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জামিন আমাদের আরেকটু গভীরভাবে বিবেচনা করে দেওয়া উচিত।”

আসিফ নজরুল বলেন, “এ যে এত জামিন দেওয়া হচ্ছে এই ব্যাপারটা প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগ অবগত আছেন। আমার ধারণা এ বিষয়ে উপযুক্ত করণীয়, তারা আমাদের থেকে ভালো বুঝেন তারা ব্যবস্থা নেবেন। আলোচিত অনেকের জামিন হলেও পরবর্তীতে আপিলে তা বাতিল হয়েছে,” বলেও জানান তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢালাও জামিনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “জামিন হলে খালি বলা হয় আইন মন্ত্রণালয় কি করছে বা আসিফ নজরুল কি করছে! সাংবাদিকদের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানাচ্ছি যে প্লিজ আপনারা বিনীতভাবে বোঝার চেষ্টা করলে আমি খুব খুশি হব। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন মামলায় যে জামিন হয়েছে, আমরা সেগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছি প্রায় সব মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন হাইকোর্ট সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা বা মন্তব্য করার এখতিয়ার আমাদের নেই ।”

তিনি বলেন, “আগাম জামিন দেওয়ার পর হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জামিনপ্রাপ্তরা কেবল অধস্তন আদালতে বেইল বন্ড দাখিল করেন। এ ক্ষেত্রে অধস্তন আদালত যে কাজটি করেছে সেটি হলো আগাম জামিনের মেয়াদ যখন শেষ হয় পুনরায় জামিন চাইতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই আবেদনটাকে খারিজ করে তাদেরকে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে।”

অধস্তন আদালত থেকেও জামিন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা জামিন পেয়েছেন তারা এফআইআর বা এজহারভুক্ত আসামি নন।”

ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিবর্তনমূলক আইনের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “বিশেষ ক্ষমতা আইন বা অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিচার বিভাগীয় যে সংস্কার কমিশন আছে তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছি। আপনারা জানেন রাজনৈতিক ঐকমত্য কমিশনে আলাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের দিকে যাচ্ছি।”

প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এটা প্রবাসীদের অধিকার। এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। ১৫ বছর একটা সরকার ক্ষমতায় থেকে এটা করতে পারেনি। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারাধীন বিষয়। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন-পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে দেওয়া যায় কি না, ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া যায় কি না, প্রক্সি ভোট দেওয়া যায় কি না। আমার মনে হচ্ছে তারা ডিটারমাইন্ড। তারা কোনো না কোনো প্রক্রিয়ায় সীমিতভাবে হলেও এটা করতে বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচন সামনে রেখেই এটা তারা বলেছেন।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়