ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভ্রমণ সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভ্রমণ সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ

সাজেক ভ্যালি (ছবি: সংগৃহীত)

আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। সত্যিই এই গানের মতো বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় গেলে মনটা সবুজ হয়ে যায়। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া আর বুক উজাড় করা সৌন্দর্য মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় সব ক্লান্তি। পাহাড়ি প্রকৃতির উচ্ছল ঝর্ণার শীতল স্পর্শ জীবনকে আনন্দময় করে। শুধুই কী পাহাড়? নদী, সাগর, দ্বীপ কিংবা প্রাচীন নিদর্শন, দর্শনীয় স্থান ঘুরলে নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় জীবন।

বাংলাদেশে একদিকে যেমন পাহাড়-পর্বত, অন্যদিকে সবুজের সমারোহ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।  প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক দেশের এসব স্থান ভ্রমণ করেন।  দেশ-বিদেশ থেকে আসেন ভ্রমণ অনুরাগীরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে এখন ভ্রমণের হার বেড়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নানাভাবে তৈরি করা হয়েছে।  সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।  সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও পর্যটনকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

দুই.

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস।  জনসাধারণের মধ্যে পর্যটন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজের সুযোগ পর্যটনে।  জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটি পালন করা হয়। এই দিনে পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া নিয়ে নানা আলোচনা, অনুষ্ঠান, সেমিনার, র‌্যালি হয়। যে কারণে দেশে এখন পর্যটন শিল্প অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

তিন.

দেশের পর্যটন বিকাশের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।  দ্রুত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।  গত ২৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ কথা বলেছেন।  পৃথিবীর অনেক দেশের জিডিপির বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে।  এদিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।  আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাত থেকে অবদান রাখতে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হবে।  দেশের পর্যটন খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত হবে। পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।

চার.

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন খাতে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পর্যটনের প্রচার চালাচ্ছে। এশিয়ার মধ্যে অনেক দেশ নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ট্যুরিজমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে।  নেপাল, ভুটানের অর্থনৈতিক কাঠামো ততটা সমৃদ্ধ না হলেও পর্যটন খাতে উন্নতি সাধন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।  হেরিটেজ ট্যুরিজমের মাধ্যমে অনেক দেশ বিপুল রাজস্ব পাচ্ছে।  বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোকে ঘিরে সেই সম্ভাবনা বিপুল। কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। শিক্ষা-গবেষণা ও পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১ দশমিক ৪১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে পর্যটন খাতে।  এই শিল্পের মাধ্যমে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা মূল্য সংযোজন হচ্ছে ১৬ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে গণ্য করা হচ্ছে।  ওয়ার্ল্ড ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৩.৯ ভাগ। ২০২০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে ৪.১ ভাগ হবে বলে সংস্থাটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।  পর্যটন শিল্প অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। আমাদের দেশেও এ শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।


ঢাকা/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়