আবরারকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের প্রতি খোলা চিঠি
মুফতানিয়া তানি || রাইজিংবিডি.কম
ডিয়ার তসলিমা নাসরিন,
আমার (এবং আপনার) দেশটা কিছুদিন হলো একটা শোকাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন পরপরই এ দেশ নতুন নতুন শক্ নয়তো শোকে ভাসে। এই পোড়াকপালী দেশের জন্য এটা নিয়ম অথবা নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক আগেই এবং সেকথা আপনার অজানা নয়।
এদেশের রাজনীতিহীন, সাধারণ জনগণ ক্ষমতা বদলের চেয়ার-খেলা আর রাজনীতির মঞ্চ-নাটকের বিনোদনের মাঝেও; সুবিধাভোগ, দুর্ভোগ কিংবা উৎসব-উপভোগের ভিড়েও আতঙ্ক নয়তো অস্বস্তির একটা ছাইচাপা আগুন বুকে ধারণ করে, করেই যায় নিরন্তর। সেই ছাইচাপা স্ফুলিঙ্গ দপ্ করে জ্বলে ওঠার সুযোগ কখনো কখনো আসে- সাধারণত কোন একটা অ-গতানুগতিক মৃত্যুর মধ্য দিয়েই! সেসময় আমরা এক একটা দিয়াশলায়ের কাঠি হয়ে জ্বলে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করি, আশায় ভাসি- যদি এই সুযোগে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ কিছু মৌলিক অধিকার বা দাবি প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু তার মাঝেই হঠাৎ কোত্থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসে- আমরা আস্তে আস্তে নিভে যেতে থাকি। অথচ এই সেনসিটিভ সময়টায় কোন একটা উদ্দীপক গান, কবিতা বা লেখকের এক লাইনের বিচক্ষণ মন্তব্য হতে পারে সেই নিভু নিভু আগুনে ঘৃতাহুতি, অথবা বিপরীত স্রোতের আহ্বান- এটাও আপনার ভালোই জানা আছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের ফলোয়ার ছয় লাখ পেরিয়েছে। আমার মত আটপৌরে মানুষের একটা পোস্ট যদি টেনেটুনে পাঁচশ’ জনের নজরে আসে, আপনারটা আসবে মিনিমাম পাঁচ লাখ লোকের নজরে। এটা নিশ্চয়ই জনগণের একটা বড় অংশ। এই ফলোয়ারের তালিকাজুড়ে আছে মুক্তচিন্তাধারী, অন্ধ ফলোয়ার, যুক্তিবাদী; আছে এপাড়-ওপাড় দুই বাংলারই নানান রঙের মানুষ। জানেন নিশ্চয়ই এদের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী শর্টকার্টে আপনাদের মত সেলিব্রিটি রাইটারদের পোস্ট (মর্টেম) পড়ে যেকোন সিচুয়েশনের নার্ভ বুঝে নেয় এবং সেটা ঠোঁটে রেখে চায়ের কাপে ঝড় তোলাটাকে শ্রেয় মনে করে, তাদের নিজস্ব মতামত বলতে কিছু নেই, থাকলেও সেটা কচুপাতার পানি এভাবেই ভুল ঢেউয়ে ঢেউয়ে তৈরি হয় বিপরীত স্রোত!
চরম স্পষ্টবাদী ও অকুতোভয় একজন লেখকের এই সময়ে কী ভাবনা, সে কী লিখবে তা দেখতে তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ উদগ্রীব হয়ে থাকে। পোস্ট আসে তারা নতুন এঙ্গেলে ভাবতে শুরু করে এবং অনেকে রাতারাতি তাদের মতও পাল্টে ফেলে। তাই একটা বৃহৎ আন্দোলনের পক্ষ স্রোত বা বিরুদ্ধ স্রোত তৈরিতে আপনার দায় আপনি এড়াতে পারেন না! আপনি জেনে বুঝেই হয়তো এটা করেছেন।
আপনি লিখেছেন: ‘আবরার ফাহাদের গুণের বর্ণনা করতে গিয়ে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া পড়শি, চেনা পরিচিত সবাই বলছেন আবরার মেধাবী ছিল এবং আবরার ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। মেধাবী হওয়াটা নিশ্চয়ই গুণ কিন্তু ২১ বছর বয়সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা তো গুণ নয়, বরং দোষ। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ব্রহ্মান্ডের উৎপত্তি , বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই! সাত আকাশের ওপর এক সর্বশক্তিমান বসে আছে, সে ছ'দিনে আসমান জমিন বানিয়েছেন এসব আজগুবি অবিজ্ঞান আর হাস্যকর গালগপ্প কোনও বুদ্ধিমান কেউ বিশ্বাস করতে পারে? আবরার পড়তো হয়তো বিজ্ঞানের বই, পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তো। তার বিজ্ঞান মনস্কতা ছিল না। নিজস্ব চিন্তার শক্তি ছিল না। একে আমি পড়ুয়া বলতে পারি, মেধাবী বলবো না। আবরার ছিল নিব্রাস ইসলামদের মতো। একবিংশ শতাব্দির আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, কিন্তু মাথায় চোদ্দশ বছর আগের অবিজ্ঞান আর অনাধুনিকতা।
আবরার অফিসিয়ালি শিবির না করলেও শিবিরের মতো চাল চলন আর চিন্তা ভাবনা বানিয়েছিল। তাতে কী! শিবিরদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাকে যারা পিটিয়েছিল, আমার বিশ্বাস, মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু মাথায় আঘাত লেগেছে, মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল, তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সাবলীল ও পরিষ্কারভাবে উদ্দেশ্যপূর্ণ একটি লেখা।
ধর্ম ও রাজনীতি দুটোই সূক্ষ্ম ও সংবেদী বিষয়, এখনো আপনার কমেন্ট বক্সে সেসব নিয়ে বিতর্ক, আক্রমণ-সমর্থন, যুক্তি-অযুক্তির ঝড় চলছেই, সেসব সুগভীর তর্কে আমি যাবো না। আমি সাধারণ মাথার মানুষ, খুব সাধারণ একটা জিজ্ঞাসা আমার: হঠাৎ করে আবরারকে একজন অমেধাবী, নিছক পড়ুয়া, গুণহীন, অধিকন্তু একজন শিবিরমনা তরুণ প্রমাণের প্রয়োজনই বা পড়ল কেন আপনার?
সার্বিক দিক দিয়ে আপনি প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে আবরারকে নিয়ে সেন্টিমেন্টাল, বোকা পাবলিক যে আক্ষেপ করছে, আসলে তা অনর্থক। একটা মানুষের মৃত্যুর পর সবাই, এমনকি শক্রুও তার পজিটিভ সাইডগুলো নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে। এই মানবিক সৌজন্যটুকু এখনো মানুষের মধ্যে বেঁচে আছে। সেখানে অসময়ে চলে যাওয়া একটি তরুণ প্রাণ, খুন হয়ে যাওয়া একটি বিরল মেধা কেন আপনার সমবেদনা পেল না! কারণ তার থুতনিতে ছিল ফিনফিনে দাড়ি, সে নিয়মিত নামাজ পড়তো, এবং সে এই বয়সে বিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে না ভেবে অসীম, নিরাকার কোন শক্তির কাছে ছিল সমর্পিত?
ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যদি নামাজকে মেডিটেশন হিসেবেও দেখা হয়, সেদিক দিয়েও তরুণ, আড্ডার বয়সে নিয়মিত মেডিটেশন করা কি গুণ নয়!
আচ্ছা, প্রথমত, আপনি তো তাকে মেধাবী বলতেই রাজি নন। বড়জোর পড়ুয়া বলা যায়। আবরারের পড়ার টেবিলের উপর পরে থাকা খোলা খাতার হাফ-ডান ম্যাথস্ এর ছবিটা দেখলাম। আমার মাথায় তো ওটার কিছুই ঢোকেনি, হিজিবিজি আঁকাবুকি লাগছিল। বলতে পারেন- কোন মেধাহীন, পড়ুয়ার পক্ষে ওই ম্যাথসটুকুর সমাধান অব্দি পৌঁছানো সম্ভব যদি তার অংকের বিশেষ ‘মেধা’ না থাকে? শুধু দেশপ্রেমের বাণী নিয়ে না বসে থেকে, দেশের স্বার্থ নিয়ে রিসার্চ করা এবং সেটাকে গুছিয়ে লিখে নিজস্ব মত (সেটা হোক সমর্থিত বা অসমর্থিত) প্রকাশের যে ক্যাপাসিটি, সেটা কি মেধা নয়?
তার কোন ফেসবুক পোস্টে ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। ইনফ্যাক্ট, ইসলামি কোন পোস্টই নেই। বরং, বঙ্গবন্ধুর নিরীক্ষার সাথে তার একমত পোষণ আছে। রোহিঙ্গা ইস্যু, রিউমার, হিউমার, ক্লাসওয়ার্ক সবই আছে যা এই বয়সী একটি তরুণের পার্সোনালিটির জন্য আপাতদৃষ্টিতে সুষমই বলা যায়।
তার বিছানায় জায়নামাজ পাওয়া গেছে কিন্তু কোথাও তো জ্বিহাদী বই পাওয়া যায়নি! ২১ বছর বয়সী একটা ছাত্রের টেবিলে সাজানো ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনি, বঙ্গবন্ধুঃ মহাকালের মহানায়ক, মানিক বন্দোপাধ্যায়, মিসির আলির ফিকশন, জীবনানন্দ, শাহাদুজ্জামান... সাহিত্যের কোন ধারার প্রতি আগ্রহ ছিল না তার? সে সবই পড়তো, সে ভাবতো, সে লিখতো- যুক্তি উপস্থাপন করে লিখতো এবং সেটা প্রকাশের সাহস রাখতো, তবুও সে মেধাবী নয়! ব্রহ্মান্ডের উৎপত্তি, বিবর্তনের প্রক্রিয়া যার মাথায় নাস্তিকতার দুয়ার খুলবে না, সেই বুঝি মেধাহীন?
আমার জীবনে অসংখ্য বড় বড় ডাক্তার দেখেছি, যারা ধার্মিক। হিউম্যান এনাটমির বিস্ময়কর নকশা, প্রায় ৬০ হাজার মাইল লম্বা দূরত্বের নার্ভ সিস্টেমের গিট্টুহীন, জড়ামড়ি প্যাঁচের মধ্যে মানব শরীর নিয়ন্ত্রণের নিখুঁত সায়েন্স কিংবা অভিজ্ঞতার শীর্ষে থাকা স্পেশালিস্টেরও পেশেন্টের জীবন জিইয়ে রাখার গ্যারান্টি দেবার অক্ষমতা- এসব প্রাকটিক্যাল যুক্তিই হয়তো তাদের করেছে স্রষ্টামুখী। চিকিৎসা বিজ্ঞানও বিজ্ঞান, মানুষের সবচেয়ে কাছের বিজ্ঞান, তবে আপনার মতে কি তারাও মেধাবী নন!
পরবর্তীতে আবার বলেছেন: ‘ভালো ফল পেত বলে, বা জানি না ৫ বেলা নামাজ পড়তো বলেই কিনা, তার জন্য চোখের জল একটু বেশিই ফেলছে মানুষ। ঠিক যেমন সুন্দরী একটি মেয়ে আহত হলে তার জন্য মানুষের আবেগ উথলে ওঠে, অসুন্দরী মেয়ে আহত হলে খুব বেশী কিছু যায় আসে না।’
একটু চোখের জল পাবলিক যদি কারো জন্য বেশি ফেলেও, সেটা কি খুব সমস্যা? সব মৃত্যুই কষ্টের, সব হত্যাই অগ্রহনীয়। কিন্তু, একটি সাধারণ পাথর আর একটি মূল্যবান পাথর হারানোর আপেক্ষিক পার্থক্য তো আছেই। এমনকি সব স্বজন হারানোতে আমাদের আক্ষেপ, আফসোস সমান হয় না- এই ফ্যাক্টকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আপনার মত মেধাবীকে যখন নির্বাসিত থাকতে হয়, সেটাও আমাদের কাছে বিরাট আফসোস। কারণ যুগ পেরিয়ে যায় তবু একই প্যাটার্নের ধী-শক্তি হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। মেধা বিরল, সাহস বিরল; প্রতিবাদের মানুষ, দেশকে নিয়ে ভাবার মানুষ, নিজের ভাবনাগুলো জনসম্মুখে উত্থাপনের মানুষ দুর্লভ। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে তাই প্রথমে আমাদের এরকম মানুষের বড্ড দরকার। ভিন্ন ভাবনার মানুষের মুখোমুখি হবার সাহস না করে বিরোধী পক্ষ যদি শুধু তাকে সরিয়ে দেয়াকেই সমাধান মনে করে, তবে দেশ একদিন মেধাশূন্য হতে বাধ্য।
‘টর্চার সেল’ টার্মটা শুনলে এখনো ’৭১ এর দিনগুলি চোখে ভাসে, গা শিউরে ওঠে। কারো মতপ্রকাশের সাহস বা বুদ্ধিদীপ্ত মননশীলতাকে অশনি সংকেত ভেবে, তাকে আলতো করে ডেকে নিয়ে কাপুরুষের মত দলবেঁধে পিটিয়ে মেরে ফেলা যেন অবিকল ২৫ মার্চের কালো রাত! আমরা কি পোস্ট ওয়ার ইমপ্রেশন থেকে পুরোপুরি বেরোতে পারিনি নাকি স্বাধীনতার প্রতি গভীর ভালবাসা দেখাতে গিয়ে একাত্তরেরই পুনরাবৃত্তি করছি! যে বাকস্বাধীনতার কারণে আজ আপনি নিজভূমে নিষিদ্ধ, সেই একই কারণে আবরারের মত সম্ভাব্য, মূল্যবান একটা প্রাণ ঝরে গেলো। ঝরলো কি? বাগান থেকে ছিঁড়ে এনে দুমরে-মুচরে-পিষে তার আর কোনদিনও পূর্ণ বিকশিত হবার, বাগান আলো করার সম্ভাবনাকে হত্যা করা হলো। আপনার ভাগ্য ভালো তাই আপনাকে তুলে নিয়ে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসা হয়েছিল চিরতরে দেশ পাড়ি দেবার জন্য। কিন্তু এই ছেলেটার সেই ভাগ্যও হয়নি। নিজ প্রাঙ্গনের বহুল ব্যবহৃত সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়েই তার প্রাণ গেল, অধিকারহীন ভুল রোষে- অবহেলায়। অথচ, দেশে ফেরার শেষ ভরসা হিসেবে আপনি এই তরুণ প্রজন্মের বাকস্বাধীনতা আর প্রতিবাদের অপেক্ষায় আছেন। মিলিবাগের মত টিপে টিপে মারলে কে বাকি থাকবে আর ‘অন্যায়’ নামের ধর্মহীন, দলহীন একটা শব্দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্যে, বলতে পারেন!
এটা কি করে আপনার মাথায় আসছে না যে এখানে আবরার যতটা না মুখ্য, তার মৃত্যুর পেছনের কাহিনী এবং মোটিভ তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আবরার এখানে মডেল যার নিজের ইমেজ, প্রতিষ্ঠানের ইমেজ, সর্বোপরি তার করুণ পরিণতি রাষ্ট্রের সামনে প্রকাশ করেছে অনেক জানা-অজানা ম্যাসেজ। মানুষ সেসব নিতে পারছে না বলেই; যারা অলরেডি ভিকটিম, দেশজুড়ে এ ধরনের ত্রাসের মধ্যে যাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তাদের দমিত ক্ষোভ-অন্তর্বেদনা আগ্নেয়গিরির মত ফেটে পড়েছে বলেই আবরার আজ জ্বলন্ত মশাল, সবার কাছে।
কী করে সেই হত্যাটাকে আপনি তরলীভূত করার চেষ্টা করেন তাকে ব্রেইন ওয়াশড্, মিসইউজড্ একজন জঙ্গী নিবরাসের সাথে তুলনা করে; হত্যাটি পরিকল্পিত ছিল না, ছিল নিছক দুর্ঘটনা- সেটা প্রচার করে; আবরার গুণহীন, মেধাহীন, বৈশিষ্ট্যহীন একটা নাম মাত্র, তাকে নিয়ে এত আক্ষেপের কিছু নেই- এসব যুক্তি দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করে? ম্যাসেজটা আসলে কী?
ব্যক্তি আবরার অথবা তার মৃত্যু আপনাকে সেভাবে নাড়া না দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে আপনি বিষয়টা নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যেতে পারতেন কিন্তু বারবার পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার চেষ্টা কি আগুনে জলক্ষেপণ এর প্রয়াস নয়?
আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন টনক নাড়িয়ে দেয়া একটা মৃত্যুর ইস্যু নিয়ে আন্দোলন শুরু হবার পরও মানুষ খুঁজে খুঁজে ইউটিউব থেকে কলিজাওয়ালা ক্যাপশন যেমন: ‘দেখুন কত বড় কলিজা এই ভাইয়ের/ বাঘের বাচ্চার বক্তৃতা শুনুন/ অমুক ভাইয়ের পুরো বডি জুড়ে খালি কলিজা’ এসব ক্লিপ বের করে মন দিয়ে শুনে, বারবার শুনে নিজের কলিজা ঠান্ডা করে। কারণ স্বীয়-যকৃৎ এত বড় করবার মত স্পৃহা, শক্তি এখনও সে পাচ্ছে না।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, যারা সব সরকারের সাপলুডু খেলাই একসময় বুঝতে পারি কিন্তু সাহস, বিশেষ যোগ্যতা এবং ইচ্ছের অভাবে নিজেরা সে খেলায় যোগদান করতে পারি না, তারা শুধু প্রয়োজনে এই কলিজাটুকু দেখানোর শক্তি চাই। এটি ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে একটি নিরপেক্ষ চাওয়া, একটি সর্বজনীন আবেদন। আমরা একটি সাধারণ মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। বুক দুরু দুরুহীন ঘুম চাই। সিম্পল! এই নিরপেক্ষ চাওয়ার আন্দোলনে নিজের স্ফুলিঙ্গ যোগ না করতে পারুন, বিরুদ্ধ বাতাস হয়ে সেটাকে নিভিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ!
বিনীত
মুফতানিয়া তানি
ঢাকা
ঢাকা/হাসনাত/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন