ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব

মোস্তফা মোরশেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ১১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব

মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের জীবন ও সার্বিকভাবে অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিপর্যয়ের দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু-তে বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ মারা যান। এছাড়া ১৩৪৭-৫১ সালের প্লেগ কিংবা ১৯৫৭-৫৮ সালের এশিয়ান ফ্লু-এর কারণে মানুষের জীবন ও অর্থনীতি সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা বলছে, একটি বড় রকমের বিপর্যয় বৈশ্বিক জিডিপি ৫ শতাংশ পর্যন্ত (বর্তমান হিসেবে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ছোট ছোট বিপর্যয় যেমন ২০০৯ সালে মেক্সিকোতে শুরু হওয়া সুয়াইন ফ্লু-এর প্রভাবও কম নয়। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ২০০২-০৪ সময়ের সার্স যা করোনা ভাইরাসের মতোই চীনে বিস্তার লাভ করেছিল। সার্সের সংক্রমণে সে সময় ৭৭৪ জন মারা যান এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষতি ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক। ২০০২-০৪ সময়ে সার্স-এর কারণে বৈশ্বিক জিডিপি ০.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। এছাড়া ২০১৪-১৬ সালে ইবোলা ভাইরাসের কারণে ৫৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।

তবে ২০১৯-এর শেষে চীনের উহানে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের ক্ষতি ১৭ বছর আগের সার্সের চেয়ে অনেক বেশি ও ভয়ঙ্কর হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম প্রান্তিকেই (জানুয়ারি-মার্চ) ৬০০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এর তিনটি প্রত্যক্ষ কারণ রয়েছে।

প্রথমত, ২০০৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে এখন তা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ। ২০০৩ সালে ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে চীনের অর্থনীতির আকার এখন ১৩.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতির আকার বড় হবার কারণে অন্যান্য দেশের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ছে। হিসেব বলছে, চীনের অর্থনীতি ১ শতাংশ (১৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো) কমে গেলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি বাজারের মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতির আজ খুবই শক্তভাবে সংযুক্ত। বিগত ২০০১ সালে ডাব্লিউটিওতে যোগ দেবার পর ‘বিশ্ব কারখানা’ বলে পরিচিত চীন এখন বৈশ্বিক কাঁচামাল ও ফিনিশড দ্রব্যের সবচেয়ে বড় সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

তৃতীয়ত, তথ্যপ্রযুক্তিরনির্ভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক প্রভাবের কারণে তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মিথ্যা যেহেতু সত্যের চেয়ে বেশি গতিতে ছড়ায় সেহেতু অনেকসময় মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিশেষ করে, করোনাভাইরাসের কারণ নিয়ে অনেকে মজাদার তথ্যাদি যে যার মতো করে পরিবেশন করছেন। কেউ বলছেন চীনাদের খাদ্যাভ্যাস, আবার কেউ বলছেন বাদুর থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। তবে বেশ স্বীকৃত একটি উৎস বলছে, হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান সিটির পাইকারি সামুদ্রিক জীবখাদ্যের বাজার হতে সাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও গত সপ্তাহে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. রালফ ব্যারিক ২০১৫ সালের নভেম্বরে করোনাভাইরাস বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সে সময় গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ড. রালফ তার গবেষণার নমুনা নিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অণুজীব গবেষণাগার চীনের উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে গবেষণা চালাতে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক সাদ ওলসোন দাবি করছেন জীবাণু অস্ত্রের বিপজ্জনক গবেষণা করতে গিয়ে কোন এক মুহূর্তের অসতর্কতায় করোনাভাইরাস উহান সিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে ১০-১৪ দিন সময় লাগে যা মানুষের জীবন ও বিশ্বের অর্থনীতির জন্য এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

উহান চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। উহান সিটির প্রবৃদ্ধি এ বছরে ৭.৮ শতাংশ হবার কথা থাকলেও তা পুরাটাই এখন অনিশ্চিত। ম্যানুফেকচারিংয়ে শক্তিধর এ শহরকে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বা ডেট্রিওট-এর সাথে তুলনা করা হয়। শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ শহরে চীনের প্রথম সারির দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। তবে কার্যত উহান সিটির ১১ মিলিয়ন মানুষ আজ গৃহবন্দী। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন ডাব্লিউএইচও-কে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে অবহিত করে। ডাব্লিউএইচও চীনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করেনি। চীনের অর্থনীতির জন্য এটি সুখবরই বলতে হবে কারণ জরুরি অবস্থার জারি করলে ব্যবসা ও বাণিজ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের মন্থর অর্থনীতির জন্য এটি আরও ক্ষতিকর হতো।

বলতে দ্বিধা নেই, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেও চীনের অর্থনীতি ভালো যাচ্ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য সমষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ২০১০ সালে যেখানে ১০.২ শতাংশ ছিল সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.১ শতাংশ যা ১৯৯০ সালের পর সর্বনিম্ন। যদিও অর্থনীতির আকার বড় হয়ে যাওয়াই প্রবৃদ্ধি কমে যাবার একটি বড় কারণ। দেশটির ঋণ-জিডিপির হার ৩০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং রিয়েল এস্টেট মার্কেট অনেকদিন ধরেই নড়বড়ে।

২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হলেও করোনাভাইরাসের বিপর্যয়ের পর তা ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তবে এটি হলো প্রত্যক্ষ ফলাফল, পরোক্ষভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ২০০৮-০৯ সালের মন্দা পরবর্তী সময়ের মতোই হোচট খাবে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ অর্থবছরে চীনের প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে ক্ষতির তালিকায় হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। জার্মান অর্থনীতি ০.২ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ০.১ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। জাপানের ক্ষেত্রে যা ০.৩ শতাংশের বেশি।

করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বের অর্থনীতি দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রথমত, চীনের অর্থনীতিতে সার্বিক চাহিদা ঘাটতির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত, সরবরাহ বাজারের বিপর্যয়ের দ্বারা। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার ঘাটতির জন্য সকল খাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। উহানে সৃষ্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শুধু হুবেই প্রদেশেই নয় বরং চীনের অর্থনীতির সমষ্টিক চাহিদা কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো পর্যটন, হোটেল, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। চীনা লুনার নতুন বছরকে সামনে রেখে প্রতি বছর ৭০ লাখ লোক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে। করোনাভাইরাসের কারণে এবার ৩০ লক্ষ কম হয়েছে। সার্সের চিকিৎসা ব্যয় বাবদ যা খরচ হয়েছিল শুধু পর্যটন শিল্পে এর ৩০০ গুণ বেশি ক্ষতি হবে।

এছাড়া দেশের বাইরে ভ্রমণেও চীন পর্যটকদের সুনাম রয়েছে। ২০১৮ সনে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণবাবদ তারা ২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বের অর্থনীতির অবদান রেখেছে। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে তারা গড়ে ১৮ দিনের মতো অবস্থান করে মাথাপিছু ৭০০০ মার্কিন ডলার খরচ করে। উহান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫৫টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পৃথিবীর ২০টি দেশে যাতায়াত করে। ক্যাবে-প্যাসিফিক, আমেরিকান, ডেল্টা তাদের ফ্লাইট সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সমিতি জানিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে যাত্রীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ কমে যাওয়ায় ২০,৯৩০ কোটি ডলারের মত ক্ষতি হবে। কোন না কোন কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ১৩,০০০ ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। শুধু চীনা পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হংকং, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড-এর প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। অস্ট্রেলিয়ার মোট পর্যটকদের ১৫ শতাংশ চীনা পর্যটক; থাইল্যান্ডের জন্য যা ৩০ শতাংশের বেশি। ইতোমধ্যে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় থাইল্যান্ডের রাজস্ব আয় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১.৬ বিলিয়নে নির্ধারণ করা হয়েছে। চীনা পর্যটকদের অন্যদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা থাকায় শুধু নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৮০ কোটি ডলার ক্ষতি হবে।

এ্যাপাল ইনক্ তাদের সকল অফিস এবং ৪২টি সেন্টার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ ব্র্যান্ড বারবেরি তাদের ৬৪ সেন্টারের মধ্যে ২৪টি, স্টার-বাকসের ২০০০ এর অধিক, ম্যাকডোনাল্ড ও ওয়ালমার্ট অনেক দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। সাংহাই ডিজনিল্যান্ড ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চীনা মার্কেটে বলিউডের ছবির টিকেট বিক্রিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজন ঘর হতে বের না হতে পারলে ভোক্তার চাহিদার ঘাটতি পুরা অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে থমকে দিবে।

ক্রুড তেল আমদানিতে চীন বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। চীনের চাহিদা কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে ২০ শতাংশ। তেলের দাম হ্রাসে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ফেজ-১ চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরে চীনের ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য কেনার কথা থাকলেও কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা সময়ই বলে দিবে।

দ্বিতীয় যে কারণে বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা হলো সরবরাহ বিপর্যয়। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কমে যাবে। উহান মূলত বৃহৎ শিল্পের উপর দাঁড়িয়ে আছে যেখানে ৫০ শতাংশের বেশি অটোম্যেটেড শিল্প যার ২৫ শতাংশের বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। চীন টেলিভিশন প্যানেল, এলইডি, চিপ, রেফ্রিজারেটরের কমপ্রেসার, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদির বৈশ্বিক যোগানদাতা। হুন্দাই চীন থেকে প্রাপ্ত কাঁচামালের অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের সকল কারখানা বন্ধ রেখেছে। চীনা কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান সূচক ‘পারচেসিং মান্যেজার ইনডেক্স’ গত ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ ৩৫.৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ সূচক ৫০-এর বেশি না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে না।

উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিশ্বের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপিটাল মার্কেটের সূচকের দরপতন হয়েছে। জানুয়ারি ২০২০ শেষে ডাওজোন্স সূচক ১.৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ও পুর’স ৫০০ সূচক ১.৬ শতাংশ, নাসদাক সূচক ১.৯ শতাংশ এবং সেন্সেক্স সূচক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং যা ক্রমাগত কমেছ। চীনের সেনঝেন এবং সাংহাই সূচক কমেছে যথাক্রমে ৩.৫২ এবং ২.৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল।   ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ এর জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি কমেছে ২ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত বস্ত্রশিল্পের আমদানীকৃত কাঁচামালের ৪৬ শতাংশ চীন থেকে আসে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোশাক রপ্তানী হতে আয় কমেছে ৫.৭৮ শতাংশ। এছাড়া চীন বাংলাদেশের ১২টি প্রকল্পে ৯০,০০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

চীন সরকার তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে অর্থনৈতিক এ বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে। স্থানীয় মুদ্রা বাজার ও ব্যাংকিংয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বেইজিং ইতোমধ্যে ১৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। যদিও আরোগ্য লাভের হার বেশ ভালো তবুও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বের অর্থনীতিতে আবশ্যিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। একুশ শতকে বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের দেশগুলোর নিজেদের নিবিড় সম্পৃক্ততার কারণে সবাই আজ ঝুঁকির মুখোমুখি। চীনের বিপর্যয় শুধু সে দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আঘাত হানবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতির অবস্থা যাই হোক না কেন এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। আর মানবতাকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতি গবেষক


ঢাকা/তারা/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়