দায়িত্ব পালন করে সমালোচনা করুন
|| ফিরোজ আলম ||
বেশ কয়েক বছর আগে এক বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। একটি কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে গাছের ছায়ায় চেয়ার পেতে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে কিছু মধ্যবয়সী পুরুষ নানা বিষয়ে গল্প করছিলেন। একজন ভদ্রলোক তার টাক মাথার অল্পকিছু চুলের সাথে সাথে পুরোটা কালো রং করে এসেছিলেন। সেই রং টপটপ করে জামার ওপর পড়ছে। যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস! একটু পর একটি ছোট মেয়ে এসে ভদ্রলোকের হাতে একটি গোলাপ ফুল রাখতে বলে চলে গেল। মেয়েটি সম্ভবত তার কন্যা ছিল। লোকটি ফুলটি দু’তিনবার শুঁকেই দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে গেলেন। আমিও আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মনোযোগ দেয়ায় লোকটিকে আর লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ খেয়াল করলাম লোকটি জুতো খুলে মহা উৎসাহে পায়ের নখ খুটছে আর নখের ভেতর থেকে পাওয়া গুপ্তধন পরম আনন্দে বের করে শুঁকে দেখছে। আহা গোলাপের গন্ধ তাকে মোহিত করতে না পারলেও পায়ের নখের নিচে লুকোনো গুপ্তধনের গন্ধ তাকে তৃপ্তি দিচ্ছিল।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। ঢাকা বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। নিশ্চিত করেই লজ্জিত হবার মতো অর্জন। আমি যথেষ্ট লজ্জিত, দুঃখিত এবং অপমানিত। এই অবস্থার জন্য নিশ্চয়ই আমরা সবাই দায়ী। ঢাকাকে সুন্দর বাসযোগ্য করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সামান্য কিছু ট্যাক্স দেয়া ছাড়া আর কি আমরা করেছি, ভাবতে ভাবতেই ফেসবুকে অনেকের ট্রল দেখলাম। বিশ্বাস করুন, এই বাস-অযোগ্য শহরটাকেই ১০ দিনের বেশি ছেড়ে থাকতে পারি না। আমার মতো অনেকের কাছেই এই শহর প্রাণের শহর। অথচ অনেকেই ঢাকা তথা বাংলাদেশকে ছোট করে নানারকম স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
দুঃখজনকভাবে তারাও এ দেশেরই নাগরিক। এদের অনেকেই এ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অপছন্দ করেন। সেই ক্ষোভ কেন যেন তারা বিশ্ব দরবারে দেশকে হেয় করে মেটান। দেশের অর্জনে তারা চুপ করে থাকেন, মন্দ কিছু পেলে নিজেরাই বিশ্বব্যাপী প্রচারের দায়িত্ব নেন। কখনো যদি সামান্য ইস্যু ভেবে বিশ্বমিডিয়া নজর না দেয়, তখন তারা প্ল্যাকার্ড হাতে সেইসব মিডিয়ার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে যান। ভাবখানা এমন, এই যে ভাই দেখে যান আমার মায়ের শাড়ি উড়ে গেছে- ক্যামেরা কই? আরে ভাই এত ভালোবাসা থাকলে আগে এসে মায়ের আঁচল ঠিক করে দিন। মাকে সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে এরপর বিশ্ব মিডিয়াকে ডেকে এনে বলুন, দেখো আমার মা কত সুন্দর! বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন, নাকি খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করবেন সেটা আগে ঠিক করুন। যদি আপনার সেই সময় না থাকে তাহলে দয়া করে চুপ থাকুন। গোলাপের সুবাস ফেলে পায়ের ময়লা শুঁকার অভ্যাসটা নিশ্চয়ই সম্মানজনক নয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৮/তারা
রাইজিংবিডি.কম