আধুনিক বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু
ইতিহাসের গভীর প্রজ্ঞায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শেষ বয়সে তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ এ উচ্চারণ করেছিলেন, ‘ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এই ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগ করে যেতে হবে’। আমরা জানি ইতিহাস সাক্ষী, বড় বড় অত্যাচারী শাসকেরা হাজার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত মানুষের শুভবুদ্ধিরই জয় ঘটেছে।
এ কথা ঠিক ইংরেজের অত্যাচারে তৎকালীণ ভারত বর্ষের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। বিশ্বকবি স্বপ্ন দেখেছিলেন, একদিন পাশ্চাত্যের এই লালসার সামনে প্রাচ্যের ত্যাগের বাণীই প্রাচীর হয়ে দেখা দেবে। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য আবির্ভূত হবেন প্রাচ্যের মহামানব। বুদ্ধ, কনফুসিয়াসের মতোই যথার্থ প্রজ্ঞার পথ উদ্ভাসিত হবে পৃথিবীর সামনে। ‘‘আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণ কর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্রলাঞ্ছিত কুটীরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই”। আর তাই এই প্রবন্ধের শেষে বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথের চরম আশাবাদই ধ্বনিত হয়। বলেছিলেন “ঐ মহামানব আসে/ দিকে দিকে আজ রোমাঞ্চ জাগে”।
বাঙালি জাতির এক মনীষী এস ওয়াজেদ আলি ‘ভবিষ্যৎর বাঙ্গালি’তে ইঙ্গিত করেছিলেন এই পূর্বদিগন্তে একজনের জন্ম হবে যিনি বাঙালি জাতির পরিত্রাণ কর্তা হিসেবে আসবেন। সেই মহান পূরুষটি যে আমাদের মহা বিজষের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এস ওয়াজেদ আলির লেখা থেকে উল্লেখ করলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের জন্যে লড়াই করেছেন। ‘‘এ কথা ভুলবেন না যে আপনি মানুষ, আর সেই হিসেবে মানুষের বিশ্বব্যাপী সভ্যতার উত্তরাধিকারী। যুগের পর যুগ ধরে মানুষ তার জীবনের প্রয়োজনের তাগিদে বিরাট, বহুমুখী ব্যাপক এক সভ্যতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সেই বিচিত্র সৃষ্টি কাব্যে সব জাতিরই দান আছে, সব ধর্মেরই দান আছে, আর সব কৃষ্টিরই দান আছে। তাদের সম্মিলিত প্রেরণা মানবজাতিকে উন্নত জীবনের নিত্যনূতন সন্ধান দিয়েছে। সেই প্রেরণা নির্দেশ যদি আমরা মেনে চলি তাহলে হিন্দু-মুসলমানের প্রগতিশীল জীবনের সন্ধান আমরা পাব, আর আশার উজ্জ্বল আলোক তাহলে আমাদের জীবনযাত্রাকে সুগম আনন্দময় করে তুলবে।”
ঠিক এরকম কথা ১৯৭২ সালে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ও ভারতের যুগান্তর পত্রিকার তঃকালীণ সম্পাদক সন্তোষ ঘোষের সাথে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ব্যক্ত করেছিলেন।
১৮২০ সালে ভারতবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। ঠিক তার শতবর্ষ পরে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো মহামানবের আবির্ভাব। বাঙালির দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারতেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতির পিতা, কারণ এ জাতির কল্যাণের কথা তিনি শুধু চিন্তাই করেননি, সে অনুযায়ী আজীবন কাজও করে গেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের একটি দেশে পরিণত করা। তিনি জানতেন যেভাবে পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে, বাংলাদেশকেও সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। যে মানুষটি ১৯৭৫ সালে হত্যার আগে বড়জোর ৩৬ বছর (১৩ হাজার ১৪০ মিনিট) বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুযায়ী তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৩৯ সালে) আর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের আগে সক্রিয় রাজনীতির ৩২ ছর (১১ হাজার ৬৮০ দিন) জীবনের ৪০ শতাংশ জেলে কাটালেন, জীবনের ৪৮ শতাংশ সময় কাটিয়ে দিলেন মিটিং-মিছিল-সভা-সমিতি-বক্তৃতা দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ন্যায্যা আন্দোলনসহ সংগঠন গড়ে তুলতে, মানুষের সঙ্গে জীবন্ত যোগাযোগ স্থাপন নিমিত্ত সব ধরনের যানবাহনে চড়ে (নৌকা, ট্রেন, জিপ গাড়ি, গরু গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা, বাইসাইকেল, ভ্যানসহ হাঁটাপথে), যে মানুষটি তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে মাত্র ১২ শতাংশ সময় (অর্থাৎ দিনে গড়ে ৩-৩.৫ ঘণ্টা) ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন- এ মানুষটি পারবেন কি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে?
বঙ্গবন্ধু খুব ছোটবেলা থেকে শ্রমজীবী মানুষের জন্যে লড়াই করেছেন। একেবারেই স্কুল মাস্টার হামিদ মাস্টারের নেতৃত্বে ‘মুসলিম সেবা সংঘ’ এর মাধ্যমে গরিব-দুঃখী মানুষের জন্যে সেবাব্রত দীক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করার যাত্রা করেছিলেন। যারা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ’ পাঠ করেছেন তারা নিশ্চয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকবেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুর লেখা তৃতীয় বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পাঠকদের হাতে এসেছে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যদার দাবিতে যে আন্দোলন তিনি করেছিলেন সেই আন্দোলনের দিন থেকে বারবার কারাগারে বন্দি হতেন। যখনি মুক্তি পেয়েছেন আবার বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার মর্যদা দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের, ক্ষুধার্ত মানুষের অন্নের দাবিতে আন্দোলন ও ভুখা মিছিল করেন। কৃষক, শ্রমিকদের দাবিসহ বিভিন্ন আন্দোলন যা সাধারণ জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি ছিল, সেই সকল দাবি নিয়ে তিনি আন্দোলন করেছেন। যেখানেই গরিব কৃষক বঞ্চিত হয়েছে তিনি ছুটে গেছেন তাদের কাছে।
১৯৫৩ সালের ২০ জানুয়ারি গাইবান্ধায় এক বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও সোহরাওয়ার্দী খুবই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। পাট ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষানীতির সমালোচনা করে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০-৫১ সালে পাট চাষিরা যে দাম পেত এখন তা-ও পায় না। কুষ্টিয়ায় চিনির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উৎপাদনকারীরা। গরিব চাষিদের ভাগ্যোন্নয়নে কোনো কাজই করছে না মুসলিম লীগ সরকার। উল্টা নিজেদের আরাম-আয়েশের জন্য বিলাসবহুল আবাসস্থল নির্মাণ করছে। শিক্ষানীতির নামে তারা যা করছে, তা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মসকরা করার শামিল। আসলে তারা নিজের সন্তানদের নিয়েই শুধু ভাবছে। তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে স্কুল নির্মাণ করছে। এভাবে তারা সাধারণ জনগণের সঙ্গে উচ্চ শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। (ভলিউম-৩, পৃষ্ঠা-৩৯-৪১)।
বৈষম্যের বিষয়টি এভাবেই শেখ মুজিবের মনে গেঁথে যায়। আমরা ইতিহাস পাঠ থেকে জানতে পারি , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারপরই বঙ্গবন্ধু শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াচীনে গিয়েছিলেন। সেখানে যেয়ে তাঁর উপলব্ধির বিস্তৃত বিবরণ পেয়েছি ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে। তিনি সারা জীবন মানুষের জন্যে লড়াই করেছেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের কথাই ব্যক্ত করেছেন। “নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে বাংলার মানুষ খেলবে বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে এই আমার সাধনা এই আমার জীবনের কাম্য আমি যেন এই কথা চিন্তা করেই মরতে পারি এই আশীর্বাদ এই দোয়া আপনারা আমাকে করবেন।”
‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থের এর ৬৯ ও ৭০ পৃষ্ঠায় আমরা দেখতে পাই। “মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমাদের সংবর্ধনা জানানো হলো। ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পাশাপাশি বসেছেন। যিনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তিনিও একজন শ্রমিক। মিলগুলি জাতীয়করণ না করেও এমন বন্দোবস্ত করা হয়েছে যে, ইচ্ছামতো লাভ করা চলে না। সরকারকে হিসাব দাখিল করতে হয়। যে টাকা আয় হবে তা শ্রমিকদের বেতন, তাদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত, চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য ব্যয় করতে হবে। আর যা বাঁচবে তা দিয়ে মিলের উন্নতি করতে হবে। আর যারা মালিক তাদের লভ্যাংশের কিছু অংশ দেওয়া হয়।” তখনকার নয়াচীন সরকার শ্রমজীবীদের জন্যে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা বঙ্গবন্ধু তা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । “শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও মালিকদের একমত হয়ে এসব ঠিক করতে হয়। আমরা দেখে আনন্দিত হলাম, মেয়ে শ্রমিকরা যখন কাজে যায় তখন তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য মিলের সাথে নার্সিং হোম আছে। কাজে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েদের সেখানে দিয়ে যায় আর বাড়ি যাবার সময় নিয়ে যায়। যে-সমস্ত শ্রমিক বিবাহ করে নাই তাদের জন্য বিরাট বিরাট বাড়ি আছে। সেখানে আমাদের দেশের ছাত্ররা যেমন এক রুমে তিন চার জন থাকে, তেমনি অবিবাহিত যুবকরাও থাকে। যুবতিদের জন্যও একইরকম ব্যবস্থা আছে। একটা দালানে মেয়ে শ্রমিকরা থাকে, তাদের বাড়িটা আমরা দেখতে গেলাম। এক রুমে তিনটা চারটা পাঁচটা ছয়টা সিট দেখলাম। অনেক ঘরে আবার ট্রেনের প্রথম শ্রেণির ওপরে নিচে যেমন সিট থাকে তেমনিই আছে। বলতে পারেন কোনোমতে চলে যায়, তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে। শ্রমিকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল আছে। অসুস্থতার সময় বেতনসহ ছুটি দেওয়া হয়। বৎসরে তারা একবার ছুটি পায়। যারা বাড়ি যেতে চায় তাদের বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়, আর যারা স্বাস্থ্যনিবাসে যেতে চায় তাদেরও ব্যবস্থা করা হয়। শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল আছে।
‘দোভাষী আমাকে বললেন, “একটু দয়া করে আপনারা বাইরে দাড়ান , আমি ভিতরে খবর দিয়ে আসি” কথা ঠিক, কারণ যার বাড়ি যাবো তাকে খবর না দিয়ে ঢুকে পড়ি কী করে? কয়েক মিনিটের মধ্যে ফিরে এলেন এবং আমাদের নিয়ে ভিতরে গেলেন। যাবার সময় দোভাষী মিস লী আমাদের বললেন, যে বাড়িতে আমরা যাচ্ছি সে বাড়ির পুরুষ কারখানায় কাজ করতে গেছে, তার স্ত্রী আছেন। এদের দু’জনের ৩/৪ দিন হলো বিবাহ হয়েছে। দু’জনেই শ্রমিক। আমরা বললাম যে তা হলে বিয়ে বাড়িতে এলাম। বলতে বলতে ঢুকে পড়লাম। ভদ্রমহিলা আমাদের সাদরে গ্রহণ করলেন। আমাদের বসতে দিলেন। ঘরটা দেখে আমাদের বিশ্বাস হতে চায় না। কারণ, শ্রমিকদের থাকবার ঘরে এত ভালো ভালো আসবাবপত্র। একটা খাট, একটা টেবিল, দুইখানা চেয়ার, একটা আলমারি, কয়েকটা বাক্স। একটা চেয়ার কম ছিল বলে একটা মোড়া এনে দিলো। ভদ্রমহিলা লাজুক হয়ে পড়েছেন, কারণ তার স্বামী বাড়িতে নাই। দুঃখ করে বললেন, আপনারা এলেন আমাদের গরিবের বাড়িতে আমি কী করবো কিছুই তো বাড়িতে নাই? কাকে দিয়ে আনাই। তারপর আমাদের জন্য চিং চা বানাইয়া দিলেন। ওটা চীনাদের সকল বাড়িতেই থাকে। আমরা চা খেতে খেতে আলাপ করলাম। তাদের সংসার খুব সুখের হবে বলে আশা করেন। বিবাহের কথা যখন ট্রেড ইউনিয়নকে জানিয়েছিল তখনই তারা এই ঘরটা দিয়েছে। কয়েকদিন হলো এ ঘরে তারা এসেছে। এখনও ভালো করে সংসার পাততে পারে নাই। আমার তো শ্রমিকের ঘরের আসবারপত্র দেখে একটা আশ্চর্যবোধ হলো। কারণ, আমাদের দেশের শ্রমিকদের যে অবস্থা তাহা কল্পনা করলে আর ওদের অবস্থা দেখে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় কী?... নারী-পুরুষের সমান অধিকার কায়েম হওয়ার পরে মেয়েদের ওপর যে অসম্ভব রকমের অত্যাচার পূর্বে হতো তা আজ চীনে বন্ধ হয়ে গেছে। নয়াচীন সরকারের মধ্যে বড় বড় পদ মেয়েরা আজ অধিকার করেছে যেমন, ম্যাডাম সান ইয়াৎ-সেন আজ সহসভাপতি এবং আর একজন মহিলার সাথে আলাপ হয়েছিল তিনি হলেন নয়াচীন সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাডাম লু।”
আবার ১০১ পৃষ্টায় দেখতে পাই কিভাবে কলকারখানায় শ্রমিকরা কাজ করেছেন। “যে সমস্ত ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, সরকারি অফিসে আমি গিয়াছি সেখানেই দেখতে পেয়েছি মেয়েরা কাজ করছে; তাদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের ওপরে। নয়াচীনে উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে। সমানভাবে সাড়া দিয়াছে জাতি গঠনমূলক কাজে। তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আপনাদের নেতাকে তো সকলে ভালোবাসেন তবে তিনি ওভাবে গার্ডের ভিতর বাস করেন কেন?” তারা উত্তর দিলো, “দুনিয়া ভরা আমাদের শত্রু। মাও-কে হত্যা করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে অনেক সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র প্রস্তুত। তাই তাঁকে আমরা গার্ড দিয়ে রাখি। তিনি আমাদের নেতা, ৬০ কোটি লোকের আস্থা আছে তাঁর ওপর। তাঁর ওপর আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। দুনিয়ায় সৎ লোকদের শত্রুও বেশি হয়।
দেশ স্বাধীন হবার পর একদা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে দেখতে চান। কিন্ত ১৫ আগস্ট ’৭৫-এর ঘাতক নরপিশাচরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর সকল স্বপ্নকেও হত্যা করে। তাঁরই দেখানো পথ ধরে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করছেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আজকের বাংলাদেশ শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত দিককে পূর্বের তুলনায় অনেক এগিয়ে, কিন্তিু দেশকে আজকের এই অবস্থানে আনার মূল বীজ বপন করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই স্বপ্নের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর আরো কয়েকটি দর্শন উল্লেখ না করলেই হয়। যা বাংলাদেশকে আধুনিক বাংলাদেশে করতে সব সময় নেপথ্যের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
এক. শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির অগ্রগতি অসম্ভম আর তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই তিনি আধুনিক বিজ্ঞান ও কর্মমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই -খুদা। এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যার মাধ্যমে শুরু থেকেই দেশের ছোট্ট শিশু-কিশোরেরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে। আর তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন, যাতে করে বিজ্ঞান ও পযুক্তিভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে ওঠে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব আমরা সবাই অনুধাবন করতে পেরেছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে বিশ্বের এক প্রান্তকে অন্য প্রান্ত। আমরা এখন এতটাই তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছি যে একটা দিনও আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া চলতে পারি না। আমরা এখন যা বুঝতে পারছি, বঙ্গবন্ধু তা অনুধাবন করেছিলেন বহু বছর আগেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের যুগ চলছিল। বঙ্গবন্ধু এই শিল্প বিপ্লবের যুগে পিছিয়ে থাকতে চাননি। সেজন্যই দেশের মানুষ যাতে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে International Telecommunication Union (ITU)- এর সদস্যপদ লাভ করে। শুধু তাই নয়, তিনি বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন। যার ফলে বাংলাদেশ সহজেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে। একটি দেশের উন্নতিতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিরচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা অত্যাবশ্যকীয়, যা বঙ্গবন্ধুর দরদৃষ্টির কারণে এর সুফল আমরা ভোগ করছি। বঙ্গবন্ধু মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমহে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করেন। একই সাথে গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ৯০০ কলেজ ভবন ও ৪০০ হাইস্কুল পুনঃনির্মাণ করেন।
দুই. একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্নয়নের ভিত্তি হলো একটি সুপরিকল্পিত সংবিধান রচনা। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর সর্বপ্রথম সংবিধান রচনার কাজে হাত দেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাত্র এক বছরের মধ্যে সংবিধান প্রনয়ণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। একটি আধুনিক রাষ্ট্রের যেসব গুণাবলী থাকা জরুরি তার সকল বৈশিষ্ট্যই ‘৭২ এর সংবিধানের মাঝে সন্নিবেশিত ছিল। সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, এককেন্দ্রিক মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার বিভাগ- এসব অনুচ্ছেদ এর মাঝেই ছিল আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর নিজ মুখেই আমরা শুনি, “এই সংবিধান শহিদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগনের আশা-আকাক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে থাকবে।”
তিন. শতকরা ৮৫ ভাগ জীবিকাধারীর প্রধান খাত কৃষিকে উন্নতি না করে একটি দেশকে উন্নয়ন অসম্ভব একথা বঙ্গবন্ধু অনুভব করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সুদ মুক্ত ঋণ, বাজেটে ভর্তুকি ও উন্নত সার ও বীজের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল কৃষির উন্নয়নের জন্য। কৃষির পরই আসে শিল্প।বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ‘শিল্প ও বাণিজ্য’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্ত্রণালয় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিঊশন নামে পুনর্গঠন করেন। তৎকালীন বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো তাই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু একটি ‘ছায়া ঔষধনীতি’ প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশ ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৭ শতাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এ সপ্তাহে প্রকাশিত তাদের বিজ্ঞান প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার আদমজী পাটকলসহ অন্যান্য অবাঙালি মালিকানাধীন শিল্পকারখানাকে জাতীয়করণ করেন এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন যাত্রা শুরু করে যা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অবকাঠামো।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড রিসার্স (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিসিএসআইআর- এর পরিধি বিস্তৃত হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ৩টি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক গবেষণাগার এবং ঢাকা, সাভার ও জয়পুরহাটে ৫টি ইনস্টিটিউট ও একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির আদেশ (১৫)-এর মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরমাণুবিজ্ঞানের মতো একটি অতি পরিশীলিত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ও অবদানের তাৎপর্য উপলব্ধি করা এবং সর্বোপরি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেওয়া বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে অতি স্বল্প পরিসরে পরমাণু প্রযুক্তি শুধুমাত্র চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চিকিৎসাসহ কৃষি, খাদ্য, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের একটি বহুমুখী আয়োজনের সূচনা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১৮টির অধিক স্থাপনার মাধ্যমে গবেষণা এবং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগ, উৎসাহ ও নির্দেশে এবং স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) নতুন নামে যাত্রা শুরু করে। বিসিএসআইআর দেশে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করে থাকে।
আমরা সবাই এখন জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনবার চীনে গিয়েছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা খাতা থেকে মুদ্রিত) প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের চীন ভ্রমণের এই কাহিনি তিনি রচনা করেছিলেন ১৯৫৪ সালে যখন কারাগারে ছিলেন তখন। তার লেখা খাতাখানার ওপর গোয়েন্দা সংস্থার সেন্সর ও কারাগার কর্তৃপক্ষের যে সিল দেওয়া আছে তা থেকেই সময়কালটা জানা যায়। এই আকার গ্রন্থের ৬৪ ও ৬৫ পৃষ্ঠার কয়েকটা লাইন দেখে নিতে পারি। কেননা এ ক’লাইন লেখার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অফুরান আগ্রহের কথা জানা যায়।
চার: বঙ্গবন্ধুই প্রম বাংলাদেশে পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এই ধারা আজো অব্যাহত রেখেছেন তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয় এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-’৭৮) কার্যকর হয় ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই। এতে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয় ৩ শতাংশ থেকে ৫.৫ শতাংশ।
পাঁচ: “সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়”-এই ছিল বঙ্গবন্ধুর বৈদেশিক নীতি, যা আজ অবধি বাংলাদেশ সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে জুলাই ১৯৭৫, মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ৫০টির মতো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সফরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক সফর অনুষ্ঠিত হয়। ওই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার নানা বিষয়ে ৭০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি, আইডিএ, ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন দেশে তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, আলজেরিয়া ও নেদারল্যান্ডস ছাড়াও অনেক দেশ বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের ঋণ, সাহায্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করে। বিশ্বব্যপী আধুনিক বাংলাদেশের ভীত তখনই রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর আধুনিকতা ও উন্নয়ন ভাবনা ছিল সর্বত্র; যা দেশকে ছাপিয়ে বিশ্বকেও নাড়া দিয়েছে। সেনেগালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদু দি উক ১৯৯৯ সালে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি এমন পরিবার থেকে এসেছেন, যে পরিবার বাংলাদেশকে অন্যতম মহান ও শ্রদ্ধাভাজন নেতা উপহার দিয়েছে। আপনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের জনগণ যথার্থই বাংলাদেশের মুক্তিদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল।’
পিতার স্বপ্ন আজ কন্যার হাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বলা হয়। তিনিই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। সংশয় নেই, কন্যার হাত ধরে আজকের বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতে যা করবে; সবকিছুর পেছনেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-দর্শন ও প্রেরণা। আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখাও এক্ষেত্রে ভিন্ন নয়।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
/তারা/