তত্ত্ব ও বাস্তবতায় এবারের বাজেট
দুটি বিষয়ের অবতারণা করে শুরু করতে চাই। প্রথমত, বাজেট কেবলমাত্র কিছু সংখ্যা নয়; বরং একটি জাতির এগিয়ে চলার দর্শন। ভিন্নভাবে বললে, জনগণের স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়ত, বাজেটের সহজপাঠ বলতে কিছু নাই; বরং সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের যে নিবিড় ও কার্যকর সম্পর্কে রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন একটি দুরূহ কাজ।
বাজেটের আকার, রাজস্ব, আহরণ, সরকারি পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়, ইত্যাদি বিষয়গুলো ইতোমধ্যে পাঠকগণ সম্যক অবগত। তাই এ লেখায় ভিন্ন কিছু বিষয়ে আলোকপাত করব। অনেকেই এভাবে বলে থাকেন- তত্ত্ব ও বাস্তবতার মাঝে অনেক ফারাক। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিন্নমত পোষণ করি। বাস্তবিক অর্থে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে তত্ত্ব (theory) ও বাস্তবের (practice) মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্য নাই। তবে এ জন্য অর্থনীতির বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা প্রয়োজন।
বাজেটের অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। অগ্রাধিকার তালিকার শুরুতেই রয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বোধকরি, এ নিয়ে কেউ দ্বিমত করবেন না। সরকার বাজেটের কৌশলগত দিক বিবেচনায়ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চায়। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, রশিয়া-ইউক্রেন সংকট এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত ঘটার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অর্থনীতির তত্ত্ব অনুসারে, ক) অর্থনৈতিক চলক (economic factor) ও খ) অর্থনীতির আলোচনার বাইরের চলক (non-economic factor) সমূহের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান সময়ের মূল্যস্ফীতি ‘অর্থনীতির আলোচনার বাইরের চলকসমূহ’ দ্বারা মূলত প্রভাবিত যা আসলে সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। তবে অগ্রাধিকার তালিকা ও কৌশলগত দিক থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে পদক্ষেপ তা প্রশংসার দাবি রাখে।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কৃষি ও খাদ্য খাত। অনেকগুলো কারণেই এটি যৌক্তিক। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে নেপথ্যে যে খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেটি কৃষি খাত। এছাড়া, করোনাকালীন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য ও কৃষি পণ্যের যে চাহিদা ছিল তা উৎপাদন ও সরবরাহের পেছনে কৃষি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের নানামুখী নেতিবাচক প্রভাবের পরও বাজারে (প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ) কৃষিজ পণ্যের ঘাটতি ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় দামের পার্থক্য হতে পারে তবু এ দেশের কৃষকগণের কাছে আমরা ঋণী। সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার তালিকার শুরুর দিকে রেখে কৃষকগণের প্রতি ঋণ পরিশোধের প্রয়াস পেয়েছে।
কৃষি খাত আরো দুটি কারণে আলোচনায় আসবে। অর্থনীতির ইতিহাস বলছে, উন্নয়ন পরিক্রমায় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জিডিপিতে এর অবদান কমে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। অর্থনৈতিক রূপান্তরের এ পর্যায়ে কৃষি খাত ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি (সাড়ে তিন শতাংশ বা তার বেশি) ধরে রেখেছে। এ ছাড়া, উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথে সাথে কৃষি থেকে শিল্প বা ম্যানুফেকচারিং খাতে শ্রমিক স্থানান্তরিত হয়ে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে চলায় শিল্প বা ম্যানুফেকচারিং খাতের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে নন-ফার্ম কর্মকাণ্ড অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেটে দেওয়া কৃষি খাতের গুরুত্ব আগামী দিনে নিঃসন্দেহে মূল্যস্ফীতি কমাতেও সাহায্য করবে।
অগ্রাধিকারের তালিকায় এরপর রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ। দেশের বর্তমান জনমিতিক মুনাফাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদে এগিয়ে যেতে এ সকল খাতে বিনিয়োগের বিকল্প নাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আদলে রূপকল্প-২০৪১ বিনির্মাণে মানবসম্পদ উন্নয়নই প্রধান হাতিয়ার। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়। অর্থনীতিবিদগণের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ তালিকা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। এ তালিকায় কী কী বিষয় আসতে পারে সেটি নিয়ে মতপার্থক্য বিবেচনায় নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি থাকবে কি-না সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে এটি যৌক্তিক। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা এগিয়ে নিতে জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের মনযোগী হবার সুযোগ রয়েছে। উল্লিখিত, সকল বিবেচনায় সরকার অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নে বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।
দুটি ভিন্ন মাপকাঠিতে বাজেটের সার্বিক সফলতা নিরূপণ করা যায়; বাজেট প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন। বাজেট প্রণয়নের সবচেয়ে কঠিন দিক হলো প্রবৃদ্ধিকে সকল আয়ের মানুষের জন্য ছড়িয়ে দেওয়া; অন্যভাবে বললে, সম্পদের সুষম বণ্টন। অগ্রাধিকার তালিকায় সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি সেদিকে ইঙ্গিত করে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রচলন আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি বড় দিক। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বরাদ্দ বেশি রয়েছে যা বাজেটের ১৬.৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির ২.৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির (সিপিআই এর মান যুক্তরাষ্ট্র ৮.৩, ইউরো জোন ৭.৮ শতাংশ (সূত্র: আইএমএফ, এপ্রিল ২২)) অনিবার্য কারণে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার উপর চাপ পড়েছে। ফলে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আগামী বছরের প্রাক্কলনে ১৫,৯২০ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৯ শতাংশ) বেশি প্রস্তাব রয়েছে।
সাম্প্রতিককালে, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মানের অবনতি হয়েছে যা কার্যত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোভিড-১৯ এর কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যাহত ছিল। এখন সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিগত দু’বছরে জমে থাকা চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি বেড়ে যায়। যার ফলে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান এক বছরে ৭ শতাংশের বেশি নেমে যায়। বিষয়টি একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করি। ধরুন আপনি ১০০ ডলার দিয়ে একটি শার্ট কিনতে চাইলেন। আপনি কি আসলে শার্ট কিনলেন, না-কি ডলার? আসলে আপনি ১০০ ডলার কিনলেন। অর্থনীতির সূত্র বলছে, কোনো কিছুর চাহিদা বেড়ে গেলে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। ফলে আমদানির অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ডলারের দাম বেড়ে গেল। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে আসলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পূর্বের গর্ব করার অবস্থায় ফিরে যাবে বলে বিশেষজ্ঞগণ প্রত্যাশা করছেন। বৈধ পথে প্রেরিত প্রবাস আয়ের উপর প্রণোদনা পূর্বের ২ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২.৫০ শতাংশ করা হয়েছে যা প্রবাস আয়কে উৎসাহিত করবে। রিজার্ভের উপর অপ্রত্যাশিত চাপ কমাতে Over & Under Invoicing এর বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও বাজেটে উল্লেখ রয়েছে।
সরকার বিভিন্ন বিলাসবহুল পণ্যের (তামাক ও তামাকজাত পণ্য, ফ্রিজ, মোটর গাড়ি, মোবাইল ফোন, কফি, বিদেশি পাখি, প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কাগজের কাপ-প্লেট, জিআই ফিটিংস, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, কম্পিউটার প্রিন্টার, ল্যাপটপ, টোনার, ইত্যাদি) দাম বাড়িয়ে চাহিদার লাগাম টানতে চেয়েছে। এ ছাড়া, দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে আমদানির বিকল্প পণ্যের (দেশে উৎপাদিত কম্পিউটার ও আইসিটি পণ্য, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রপাতির সরঞ্জাম, দেশীয় গাড়ি তৈরির শিল্প, ইত্যাদি) দাম কমানো হয়েছে যা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য স্থিতিশীল রাখতে এবং দেশীয় শিল্পকে সরাসরি উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে। আমদানি-রপ্তানির সমন্বয় করতে এ প্রস্তাবগুলো সত্যিকার অর্থে সাহসী পদক্ষেপ।
করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট বা অন্যান্য মন্দার সময়ে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করতে অর্থনীতিবিদগণের মধ্যে সাধারণত দু’ধরনের কৌশল নিয়ে মতবিভেদ দেখা যায়। একদল অর্থনীতিবিদ সরকারের ব্যয়কে বাড়ানোর (expansionary fiscal policy) পক্ষে মত দিয়ে থাকেন যার ফলে বাজেটে ঘাটতি বেড়ে যায়। অন্য ধারাটি ব্যয় সংকোচন (contractionary fiscal policy) আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। করোনাভাইরাসের অতিমারির সময় সরকার ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেয়েছে এবং সফল হয়েছে। মোট ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের বিপরীতে প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার একটি প্রধান কারণ- অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা।
বলতে দ্বিধা নাই, সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল অনেক বেশি সফল। যদিও এর ফলে বাজেটে ঘাটতির আকার বেড়ে যায়। তবে এবারের বাজেটে ঘাটতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ নাই। এ প্রথমবারের মতো সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো হ্রাস করা হয়নি। করোনাকালীন জিডিপিতে ঘাটতি বাজেটের অনুপাত দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে বেড়ে গিয়েছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ৫.১ শতাংশে নামিয়ে এনে সরকার তার স্বাভাবিক ৫ শতাংশের বেঞ্চমার্কে ফিরে এসেছে। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৩.৩ শতাংশ অর্থায়ন করা হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ঘাটতি অর্থায়ন জিডিপির ৩.১ শতাংশ রাখার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহে সমস্যা না থাকায় অভ্যন্তরীণ উৎসের সামান্য এ পরিবর্তনের ফলে নিকট ভবিষ্যতে crowding out এর সম্ভাবনা নাই। আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা অথবা হ্রাস করা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যা সত্যিকার অর্থে বাজেট ঘাটতি কমানো এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
এবারের বাজেটের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ যা প্রকারান্তরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করবে। আইসিটি খাতের উন্নতিকল্পে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের রিপোর্টিং (আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত) থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং স্টার্টআপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয় করা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বর্তমানে টেক্সটাইল শিল্পে বিদ্যমান করহার ১৫ শতাংশ এর মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে যা ৩০ জুন, ২০২২ এ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কর হার হ্রাস করার বিষয়ে কেউ কেউ দ্বিমত করতে পারেন। অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটস এর ইনভার্টেড-U আকৃতির যে চিত্র রয়েছে সে অনুযায়ী চিন্তা করলে কর হার হ্রাসের ফলে মোট করের পরিমাণ বাড়বে কি-না সেটি নির্ভর করবে বিদ্যমান কর হার এবং ঐ অর্থনীতি ইনভার্টেড-U আকৃতির কোথায় অবস্থান করছে তার উপর। তবে কর হার হ্রাসের ‘স্পিল অভার ইফেক্ট’ এর মাধ্যমে অর্থনীতির অন্যান্য খাত উপকৃত হবে যা সরকারের সবসময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক একটি দর্শন। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সার্বিকভাবে সামগ্রিক চাহিদা বাড়বে। ফলে মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট এর মাধ্যমে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
এবারের বাজেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো বাজেটের মোট পরিমাণ জিডিপির ১৫.৫ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসা যা চলতি অর্থবছরে ১৭.৫ শতাংশ ছিল। এর দুটি দিক রয়েছে; করোনাকালীন অতিমারির প্রভাব থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাই সরকারি ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে। এছাড়া, এটি সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে অধিক দক্ষ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে। সরকারের ব্যয় কমানো আর জনগণের ব্যয় বৃদ্ধি কার্যত মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ফলে ব্যক্তি পর্যায়ের ভোগ কমবে না। বিলাসবহুল পণ্যের কম ব্যবহার এবং সরকারের ব্যয়ের কৃচ্ছতা সাধনের (austerity) মাধ্যমে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমানো এবং একই সাথে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর যে দ্বৈত-কৌশলের কথা দারুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে তা সরকারের সাহসিকতার পরিচায়ক।
পরিশেষে, বাজেট বাস্তবায়ন বরাবরের মতোই চ্যালেঞ্জিং। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, যারা বাস্তবায়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত তাদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতি গবেষক
/তারা/