ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন! চিত্রা পারে কান্না কেনো? 

ড. কাজল রশীদ শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২২ জুলাই ২০২২  
ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন! চিত্রা পারে কান্না কেনো? 

চিত্রা পারে কান্নার মাতম। কাঁদছে চিত্রাধৌত নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার দীঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়া। অজানা আতঙ্ক, ভয় আর শঙ্কা বিরাজ করছে তাদের ভেতরে।

শুক্রবার (১৫জুলাই) ওখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়- হিন্দুদের কয়েকটি বাড়ি, মন্দির ও দোকানপাটে ভয়ঙ্কর এক হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের কারণে ঘটানো হয় নারকীয় এই তাণ্ডব। একজন কলেজ ছাত্রের দেওয়া স্ট্যাটাসের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তের বাবাকে গ্রেফতার করা হলেও দমানো যায়নি ক্রোধ, প্রতিহত করা যায়নি হামলাকারীদের।

অভিযুক্ত ওই স্ট্যাটাসে কী লেখা হয়েছে, অভিযোগ আদৌ সত্য কি না এসব নিয়ে কোনোপ্রকার ফায়সালা হওয়ার আগেই সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির ও দোকানপাটে হামলা করে সংঘবদ্ধ একটা চক্র। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে গণমাধ্যমে উল্লিখিত হয়েছে, হামলাকারীদের প্রথম দল লুট করে। দ্বিতীয় দল এসে লুট করার আর কিছু না পাওয়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়। নড়াইলের সংখ্যালঘু পরিবারের ভূক্তভোগী সদস্যদের কাছে দিনরাত এখন এক হয়ে গেছে। ওরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। বসতভিটায় থাকতেও পারছেন না। সাহাপাড়ায় এখন কেবলই কান্নার শব্দ; তাও সেটা নীরবে-নিঃশব্দে। কেননা, এই কান্নার কোনো সান্ত্বনা নেই। মৃত্যুর চেয়েও অধিক যন্ত্রণার এই কান্না। একজন মানুষ যখন নিজের ভিটেয় থাকতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তখন তার যে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকুও ছোট হয়ে আসতে আসতে বিন্দুতে গিয়ে ঠেকেছে তা বুঝতে বাকী থাকে না কারোরই। 

চিত্রাপারের কান্না তাই আর দশটা কান্নার মতো নয়। এ কান্না উদ্বাস্তু হওয়ার-উন্মুল হওয়ার-শেকড়হীন হওয়ার কান্না। মর্মন্তুদ কান্নার অথৈ সাগরে ভাসা সাহাপাড়ার সংখ্যালঘুরা এমন একটা সংসদীয় আসনের বাসিন্দা, যার কাণ্ডারী মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো একজন নন্দিত ক্রিকেট তারকা। সবার প্রিয় একজন ক্যাপ্টেন। যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুঃসময় ঘুঁচিয়েছেন অভূতপূর্ব এক নেতৃত্বগুণে। এ কারণেই আমাদের কৌতূহল ও বিস্ময় যে, এ রকম একজন বহুমাত্রিক গুণসম্পন্ন ক্যাপ্টেন চিত্রাপারের কাণ্ডারীর ভূমিকায় থাকার পরও নড়াইলে কেন একজন অধ্যক্ষকে স্যান্ডেলের মালা পরানো হয়, প্রকাশ্যে প্রদক্ষিণও করা হয়। আবার সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কলঙ্ক কালিমার দাগ ধূসর হওয়ার আগেই সাহাপাড়ার সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত হয়ে নারকীয় এক অগ্নিকাণ্ড ও লুটের ঘটনা। 

কেন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও আমরা এই দেশটাকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ বাসযোগ্য করে তুলতে পারিনি? কেনো চিত্রার পানি আর চোখের পানি একাকার হয়ে মানুষের অসহায়ত্বকে প্রকট করে তুলেছে। এই সব প্রশ্নের সমাধান হওয়া জরুরি। আর সমাধান নিশ্চিত করতে হলে জানতে হবে কেনো ঘটে এই ঘটনা, কাদের প্রযত্নে, কারা এরা সুবিধাভোগী এবং নেপথ্যের ক্রীড়ানক। এ কারণেই আমাদের জিজ্ঞাসা, প্রাণের আকুতি, ‘ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন, চিত্রা পারে কান্না কেনো?’

মার্কিন সাহিত্যের প্রভাবশালী কবি ওয়াল্টার হুইটম্যান। তাঁর বিখ্যাত কবিতা, ‘O Captain! My Captain! কবিতাটি লেখা হয় আমেরিকার ইতিহাসের খ্যাতিমান রাষ্ট্রনায়কদের অন্যতম আব্রাহাম লিঙ্কনের মৃত্যুর পর। কবিতার পাঠকমাত্রই স্পষ্ট করে জানেন, কী দারুণ উচ্ছ্বাস, শ্রদ্ধা আর একটা জাতির সম্মিলিত আবেগের সারাৎসার ধরা পড়েছে এই কবিতায়। আর দশজন প্রেসিডেন্টের মতো গড়পড়তায় গড়া একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না আব্রাহাম লিঙ্কন। তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো সংকট দূর হয়। দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকাকে তিনি ঐক্যের শক্তিকে করে তোলেন এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ এক দেশ হিসেবে। দাসপ্রথা বিলুপ্তি করে, গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে, উত্তর ও দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর বিভাজন-দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা কাটিয়ে তিনি দেশ আমেরিকাকে দেন অনন্য এক গৌরব এবং সামনের পানে এগিয়ে যাওয়ার বীজমন্ত্র। এ কারণেই ওয়াল্টার হুইটম্যানের এই আকুতি। কবিতায় রেখেছেন দ্ব্যার্থবোধক এক উচ্চারণ,
‘O  Captain! my Captain! our fearful trip is done,
The ship has weather’d every rack, the prize we sought is won,
The port is near, the bells I hear, the people all exulting,
While follow eyes the steady keel, the vessel grim and daring;
But O heart! heart! heart!
O the bleeding drops of red,
Where on the deck my Captain lies,
Fallen cold and dead.
O Captain! my Captain! rise up and hear the bells;
Rise up—for you the flag is flung—for you the bugle trills.’

কিন্তু শত আহ্বানেও কবিতায় উল্লিখিত ক্যাপ্টেনের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কারণ তখন তিনি ইহজাগতিকতার ঊর্ধ্বে। এ কারণে কবিতার শেষাশেষি কবির বয়ান এ রকম:  
My Captain does not answer, his lips are pale and still,
My father does not feel my arm, he has no pulse nor will,
… Walk the deck my Captain lies,
Fallen cold and dead.

কবির ক্যাপ্টেন মৃত। কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন সজীব-সক্রিয়-চিরতারুণ্যের প্রতীক। তিনি শুধু একজন ক্রিকেট তারকা নন-রাজনীতিক ও সংসদ সদস্য। এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন নড়াইল থেকে। এ কারণে চিত্রাপারের মানুষের তাঁর কাছে অনেক প্রত্যাশা। শুধু লোহাগড়া কিংবা নড়াইলের মানুষ নন, সারা দেশের মানুষ ওই ঘটনায় ব্যথিত-সংক্ষুব্ধ। পাশাপাশি সকলেই দেখতে চান ক্যাপ্টেন কী করেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজাও যে এই ঘটনায় বেদনাহত, তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে সেটা ফুটে উঠেছে গভীরভাবে- হৃদয়স্পর্শী আন্তরিকতায়। শুধু ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, স্পষ্ট করে বলেছেন পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা ক্যাপ্টেন মাশরাফির উপর আস্থা রাখতে চাই। এবং দেখতে চাই এই ঘটনায় তিনিও কি আর দশজন গড়পড়তা রাজনীতিকের ভূমিকা পালন করেন, নাকি প্রকৃতার্থেই একজন ক্যাপ্টেন রাজনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। 

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া রামু, নাসিরনগরের ঘটনায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা গ্রহণের তোড়জোড় দেখেছি, পরে তেমনটা দেখা যায়নি। বিচার হয়নি দোষীদের এবং কারা-কাদের প্ররোচনায় এই ধরনের অমানবিক, বর্বরোচিত ঘটনা সংঘটিত করলো উদঘাটন করা হয়নি সেসব রহস্য,  ধোঁয়াশাযুক্ত অধ্যায়ের কোনোকিছুই। তখনও ‘খতিয়ে দেখা হবে’র মতোই বাক্যবাণ ছোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু আদতে কী খতিয়ে দেখা হয়েছে- তার কিছুই জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে, এ ধরনের ঘটনা কিছুদিন পরপর ঘটে চলেছে। আমাদের প্রত্যাশা ক্যাপ্টেন মাশরাফির বদৌলতে চিত্রাপারের সাহাপাড়ার ঘটনাটিই হোক এ দেশে সংখ্যালঘু-হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর অত্যাচার-অনাচার-নিপীড়ন-অগ্নিকাণ্ড-লুটপাট ও দখল সংস্কৃতির শেষ উদাহরণ। আব্রাহাম লিঙ্কন যেরকমভাবে শুধু ক্ষমতার প্রয়োগ করে নয় বুদ্ধিমত্তা, কৌশলীপনা, চাতুরতা, সাংগাঠনিকতা, সম্মোহন যোগ্যতা, চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা সর্বোপরি মানবের মুক্তি, কল্যাণ ও উন্নততর জীবনমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উৎসর্গীকৃত প্রাণের দৃঢ় প্রত্যয়কে কাজে লাগিয়েছিলেন, মাশরাফিও তেমনটা করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

চিত্রাপারের কান্নার বর্তমান বাস্তবতায় চোখ রাখলেই আমাদের মনে পড়ে যায় তানভীর মোকাম্মেলের ‘চিত্রা নদীর পারে’ চলচ্চিত্রের কথা। মনে পড়ে শশীকান্ত-মিনতিরাও একবুক ভালোবাসা দিয়ে এই দেশটাকে ভালোবেসেছিল। চিত্রা নদী তাদের কাছে ছিল স্বর্গের চেয়েও সুন্দর। তারা শুধু মুখে বলত না, চিত্রার সঙ্গে জীবনযাপনও করতো। একারণেই মিনতীর সহজাত উচ্চারণ ছিল, কলকাতায় বেশিদিন থাকতে পারি না, দম বন্ধ হয়ে আসে। কারণ কলকাতায় চিত্রা নদী নেই। 

চিত্রাপারের মানুষেরা নড়াইল মনে করে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান। অথচ সেই নড়াইলের ভূমিপুত্ররা শিকার হয় উচ্ছেদের। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের ঘরবাড়ি। সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন-অপমান ও নিগ্রহ সেলুলয়েডের পর্দায় আমরা যেমনটা দেখেছি সাহাপাড়ার ঘটনাও অবিকল তাই। সেই একই কৌশল-লক্ষ্য তাদের ভিটেটুকু। এ কারণেই রাতের অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া, উঠতে বসতে মালাউন-কাফির-বিধর্মী-নাস্তিক বলে গালি দেওয়া। এগুলো হলো অত্যাচার-অপমানের প্রাথমিক দাওয়াই, এতে কাজ না হলে তারপর লুট, প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে এবং তারপর লুট করার কিছুই যখন থাকে না তখন দেয়া হয় আগুন। 

সেলুলয়েডের পর্দার ঘটনা ঘটে স্বৈরশাহী আইয়ুবের শাসনামলে। তখন পাকিস্তান, তখন ধর্মের নামে ছিল অধর্মের বাড়াবাড়ি, পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী ছিলাম আমরা। কিন্তু সময় পাল্টেছে, মাথার ওপর থেকে সরেছে আইয়ুবের ছবি, সরেছে পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের বেড়ি। কিন্তু শান্তি আসেনি, স্বস্তি মেলেনি সংখ্যালঘুদের জীবনে। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা জাগানিয়া, প্রেরণাদায়ী এক পোস্টার ছিল, ‘বাঙলার হিন্দু/ বাঙলার খৃষ্টান/ বাঙলার বৌদ্ধ/ বাঙলার মুসলমান/ আমরা সবাই বাঙালী।’

রাষ্ট্র কি মুক্তিযুদ্ধের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আমরা কি প্রেরণার সেই মূলমন্ত্র ভুলতে বসেছি? এইসব প্রশ্নের উত্তর যদি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমরা মুখে যা বলি, সেটা বিশ্বাস করি না। আবার বিশ্বাস করলেও তার বাস্তবায়ন করি না। এই যে আত্মপ্রবঞ্চনা, এই প্রবঞ্চনার কারণে চিত্রাপারের কান্না থামে না। এবং কান্নার এই মাতম, বেদনা ও শোকের হাহাকার ঘুর্ণাবর্তের মতো ঘুরতেই থাকে। কখনো তিতাসের পারে, কখনো গোমতীর পারে, কখনো-বা চিত্রার পারে। এভাবে প্রদক্ষিণ চলে তবুও আমরা এই অচলায়তন রুখতে সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছি না। 

পরাধীন দেশে এই অচলায়তন না হয়, না মেনে কোনো উপায় ছিল না, কিন্তু স্বাধীন দেশে? যখন স্বাধীনতার বয়স সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়েছে, তখনও যদি চিত্রায় কান পাতলেই শোনা যায় তার পারের কান্নার শব্দ, তখন আশাবাদের জায়গা কোথায়? অথচ সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের সংস্কৃতি জিইয়ে রেখে যে সভ্য দেশের বাসিন্দা হওয়া যায় না, নিজেকে বিবেকবান মানুষ হিসেবে দাবি করা যায় না, এই সত্য আমরা কবে উপলব্ধি করব।

এই বেদনা ও হতাশাকে সঙ্গী করেই আমরা এবার আশায় বুক বেঁধেছি আমাদের ক্যাপ্টেন মাশরাফির তরে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় কে, শ্রেষ্ঠ বোলার কে, শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান কে, শ্রেষ্ঠ কোচ কে এইসব বিতর্ক থাকতে পারে-আছেও হয়তো। কিন্তু শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেনের প্রশ্নে কোনো বিতর্ক নেই। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেনের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা।

সর্বজনপ্রিয় ক্যাপ্টেনের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও আকাশছোঁয়া। চিত্রাপারের কান্না যেন চিরতরে দূর হয়। এ দেশের সংখ্যালঘুরা যেন সংখ্যাগরিষ্ঠের সুযোগ-সুবিধা, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, সম্মান ও সমীহ পায়-সদর্থক অর্থেই। তার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হোক ক্যাপ্টেনের হাতে-সবৈবপ্রচেষ্টায়, এই প্রত্যাশা ও আস্থা ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেনের তরে।

লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক
 


 

/তারা/ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়