ইসলামে নাশকতা সৃষ্টি মারাত্মক অপরাধ
মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। অনুপম জীবন ব্যবস্থা। অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে যে কোনো উদ্দেশ্যে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, জান-মালের ক্ষতিসাধন, শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন, দোকান-পাট ও স্থাপত্য ধ্বংস এবং মানুষকে এর দ্বারা আতঙ্কিত করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল।
ইসলাম কখনো এগুলো সমর্থন করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কাজ মারাত্মক অপরাধ। এটা নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম, সরকারি দল-বিরোধী দল সবার জন্য সমান অপরাধ। নাশকতাকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে হত্যা করল অন্য প্রাণের বিনিময় ছাড়া কিংবা তার দ্বারা পৃথিবীতে কোনো ফাসাদ বিস্তার ছাড়া, তবে সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করে ফেলল; আর যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষকে রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩২)
যারা এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে হতাহতের ঘটনা ঘটায় এবং অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের শান্তি বিনষ্ট করে, তারা দুনিয়ার মানুষের কাছেও ঘৃণিত, মহান আল্লাহর কাছেও চরমভাবে ঘৃণিত। তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং পরকালের পরিণাম হবে আরো ভয়াবহ।
তাদের শাস্তির বিধান দিয়ে সুরা মায়েদার পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করে, আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা বিপরীতমুখী হাত-পা (এক দিকের হাত ও অপর দিকের পা) কেটে ফেলা হবে, অথবা ভূ-পৃষ্ঠ (নিজ এলাকা) থেকে বের করে দেওয়া হবে। এটা তো পৃথিবীতে তাদের জন্যে চরম অপমান, আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার পরিণাম হবে জাহান্নাম, যেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৯৩)
বিদায় হজের ভাষণে মানবতার মুক্তির দিশারী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আজ এই পবিত্র দিনে, পবিত্র মাসে এবং এই পবিত্র (মক্কা) শহরে তোমাদের জন্য যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অপকর্ম করা অবৈধ, তেমনিভাবে তোমাদের জান-মাল বিনষ্ট করাও অবৈধ। যতদিন পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ না করবে। আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম? সাহাবায়ে কেরাম বললেনÑ জি, পৌঁছে দিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল বললেন, হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাক।’ (বুখারি, হাদিস ১৭৪১; মুসলিম, হাদিস ১৬৭৯)। আল্লাহর রাসুল আরো বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান কর্তৃক অপর মুসলমান ভাইকে আতঙ্কিত করা অবৈধ।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৫০০৪)
শুধু মুসলমান নয়, ইসলামে অমুসলিমকেও হত্যা করা হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অন্যায়ভাবে এমন কাউকে হত্যা করো না, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩৩)।
যারা এ ধরনের অস্ত্রবাজি করে তারা নিজেরাও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। আর মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৫)
সুতরাং ইসলাম কখনো অস্ত্রবাজি, বোমাবাজি, অবৈধ বিস্ফোরক ব্যবহার তথা সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না। নাশকতা সৃষ্টি করে জান-মালের ক্ষতি করার অনুমতি দেয় না। এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে নীতি-নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। আদর্শ ও নৈতিকতার মূল উৎস ধর্ম শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আমরা একটি সন্ত্রাসমুক্ত সুস্থ-সুন্দর সমাজের আশা করতে পারি।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
তারা//