ঢাকা     সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

আমলের হালখাতা এবং নতুন বছরের প্রস্তুতি

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২  
আমলের হালখাতা এবং নতুন বছরের প্রস্তুতি

দিন, সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে গেল আরেকটি খ্রিস্টবর্ষ। ২০২২ সাল বিদায় নিয়ে দুয়ারে ২০২৩ সাল। এভাবেই আমাদের দুনিয়ার সময়গুলো শেষ হয়ে যাবে হায়াতের ডায়েরি থেকে। এক সময় মৃত্যুর সিঁড়ি বেয়ে চলে আসবে পরকাল, জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। দুনিয়ার জীবনে আমাদের আমলের হালখাতা আল্লাহর রঙে রঙিন হলে পরকালে মিলবে চিরসুখের জান্নাত, আর শয়তানের রঙে রঙিন হলে মিলবে চিরদুখের জাহান্নাম।

অতীতের যে সময়টুকু আল্লাহ তায়ালার মর্জি মোতাবেক কাটানোর সুযোগ হয়েছে, এর জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, আর যে সময়গুলো অলস-অবহেলায় আল্লাহর অবাধ্যতায় নষ্ট হয়েছে এর জন্য অনুশোচনা করা মুমিনের করণীয়। তবে মুমিনের আত্মপর্যালোচনা বর্ষকেন্দ্রিক বা সময়কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। বরং মুমিন প্রতিদিন তার আমলের হিসাব নেয় এবং গতকালের চেয়ে আগামীকাল অধিক উপকারী ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সব মানুষ প্রভাতে উপনীত হয় এবং নিজের সত্তাকে বিক্রি করে। আল্লাহর কাছে বিক্রি হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে, নতুবা শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে নিজেকে ধ্বংস করে।’ [মুসলিম : ৩/১০০]

আজ আমরা আমাদের জীবন থেকে একটি পরিপূর্ণ বছর বিদায় দিচ্ছি, যাতে আমরা আমাদের আমলসমূহ সংরক্ষণ করেছি, যা হাশরের দিন আমাদের আমলে তুলে ধরা হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি দিন ও রাতকে পরিবর্তন করেন, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানবানদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে।’ [সুরা আন-নুর : আয়াত ৪৮]

মালেক ইবনে দিনার (রা.) বলেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন, যে নিজের আত্মাকে বলেÑ তুমি কি এমন করনি? তুমি কি এমন করনি? অর্থাৎ তাকে ভর্ৎসনা করে। এরপর তাকে তিরস্কার করার পর প্রতিপালকের কিতাব তার পরিচালনার জন্য বাধ্য করে দেয়, ফলে প্রতিপালকের কিতাবই তার পরিচালক হয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহিয়ান প্রতিপালকের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলেছে?’ [সুরা ইনফিতার : আয়াত ৬] তাই পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। পাপকর্ম ত্যাগ করা তাওবা বা ক্ষমা কামনার চেয়ে অনেক সহজ। দুনিয়া মানুষের জন্য চিরস্থায়ী হবে না, কেউ জানে না কখন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে? তাই নিজের আত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, গত বছরের জন্য তুমি কী পেশ করেছ? আগামী বছরের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের আত্মার হিসাব নাও নিজেদের হিসাব দেওয়ার আগে, তাকে ওজন করো নিজেদের ওজন দেওয়ার আগে...। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো, আগামী দিনের জন্য মানুষ কী পেশ করেছে, সে যেন তা দেখে নেয়। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা করছ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ [সুরা হাশর : আয়াত ১৮]

বান্দাদের ওপর আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের একটি হচ্ছে মাস ও বছরের আবর্তন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মিতভাবে নিয়োজিত করে দিয়েছেন, আর রাত ও দিনকে তোমাদের উপযোগী করে দিয়েছেন। আর যা তোমরা চেয়েছ তার প্রত্যেকটি বস্তু তিনি তোমাদের দিয়েছেন, যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে গুনে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই মানুষ অনেক অন্যায়কারী ও অকৃতজ্ঞ।’ [সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৩-৩৪]

তাই পরকালের কথা চিন্তা করে এ বছরের শুরু থেকেই সব রকমের পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করার ওয়াদাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ওই ব্যক্তি বুদ্ধিমান, যে নিজের অতীত জীবন থেকে উপকৃত হয়েছে এবং গত বছরের আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নতুন বছর গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি গত দিন থেকে উপদেশ গ্রহণ করে, আজকের জন্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং আগামীকালের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের গত বছর থেকে এ বছর আরও বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়