কেন আরাফাতকে সমর্থন করি?
মোহাম্মদ এ আরাফাত সবচেয়ে বেশি পরিচিত সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে। মূলত এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এর বাইরে আরও কিছু পরিচয় রয়েছে তার। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ, ট্রানজিট এবং কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ খাতের জন্য উপযুক্ত নীতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র ইত্যাদির মতো বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে অনেক নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।
এমন একজন মানুষ বাংলাদেশের সংসদে এলে কি জাতির লাভ না ক্ষতি? ভোট ব্যাপারটি গণতন্ত্রের মূল বিষয়। সেখানে কে কাকে কখন জয়ী করাবে সেটা মানুষের পছন্দ। এর নাম জনগণের ভোটাধিকার। এখানে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই। যদিও এর জন্য আমাকে গালমন্দ করার লোকের অভাব হবে না। প্রশ্নটা এই, যে দেশের শতকরা একশ পার্সেন্ট মানুষ লেখাপড়া জানেন, যেসব সমাজে মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, যেসব দেশের গণতন্ত্র বা জন অধিকার জন্মলগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠিত তাদের নির্বাচন আর আমাদের নির্বাচন কি এক? ভারতের কথা যারা বলেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ভারত জন্মলগ্ন থেকে গণতন্ত্রের চর্চা করতে করতে এখন তা মানুষের মজ্জাগত হয়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা করেনি। বরং একের পর এক সামরিক শাসনের যে উত্তরাধিকার তার কারণেই আমরা গণতন্ত্র মানিনি এবং বুঝি না।
ঢাকা-১৭ আসনে যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরাফাতকে লড়তে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে বা যা অবধারিত তার বিরুদ্ধে কিছু বলাটা অগণতান্ত্রিক। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মাজেজা। সত্যিকারের সভ্য দেশে বা সমাজে এই সমস্যা থাকে না। কারণ সেখানে মোকাবিলাটা হয় সমানে সমানে। আমাদের সমাজে তা হয় না। যে প্রার্থী পপুলার বলে সামাজিক মিডিয়া রায় দিচ্ছে তার দিকে তাকালে কি আসলেই আশাবাদী হওয়া সম্ভব? আমি তার লেখাপড়া কিংবা চেহারা সুরতের কথা তুলছি না। আদম সুরত মানুষের সৃষ্টি কিছু না, বরং পৃথিবীর ইতিহাস সমৃদ্ধ করা মানুষজনের কেউ-ই নায়কোচিত চেহারা নিয়ে জন্মাননি। তাঁরা সাধারণ থেকেই অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন। কাজেই হিরো আলম বা অন্য যে কেউ প্রতিযোগিতা করতেই পারেন। এটা তাদের মৌলিক অধিকার।
আমরা বলছি যোগ্যতার কথা। এটা জরুরি বিষয় হলেও বাংলাদেশে এখন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষজন ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ফলাফল নিয়ে সন্দিহান। সে কারণে রাগ অভিমান জটিলতা আছে কিন্তু তার জন্য এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা আত্মঘাতী। শিক্ষা মানুষকে যা দেয় তার নাম প্রজ্ঞা। এই প্রজ্ঞা হচ্ছে আলোর মতো। আপনি যখন আলোয় থাকেন তখনো সে সাথে থাকে কিন্তু দেখা যায় না। যখন-ই কোন অন্ধকার নেমে আসে তখন-ই তার দেখা মেলে। তখন আপনাকে পথ দেখায় এই আলো। আরাফাতের তা আছে। অন্য যে প্রার্থীর কথা বলছি তার যদি তা থাকতো তবে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষের দাড়ি টেনে ধরে ঘুষি দিতে পারতো না । এই উদ্ধত আচরণ প্রমাণ করে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা পেলে এই মানুষটি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
যে কথা পরিস্কার করে বলা উচিৎ আরাফাত নিজে লড়ছেন। তাঁর পেছনে আছে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ। অন্য যেজন জিতে যাবে বলে আস্ফালন করেছেন তাঁর পেছনে যে অদৃশ্য শক্তি তাদের আমরা চিনি। তারা নিজেদের রাগ যন্ত্রণা আর অপমানের কারণে একে নিয়ে খেলছে। এটা যে বাস্তব তা আপনি প্রার্থী হিরো আলমের সাথে থাকা মানুষজনের দিকে তাকালেই বুঝবেন। তার শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে একজন ও নাই। সব ফোঁপড় দালাল। আরাফাতের এসব কিছুর দরকার পড়ে না। তিনি যুক্তি তর্ক গল্প জানেন। দেখতে সুদর্শন এবং বাগ্মী। তাঁর মতো একজন মানুষ গুলশান থেকে না জিতলে বা জিতে না আসলে সেটা তাঁর যতটা তারচেয়ে বেশি লজ্জার হবে সেখানকার ভোটার ও দেশবাসীর জন্য। এটুকু নিশ্চয়ই বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না।
ফলে এখন সমস্যা যতটা গণতন্ত্র বা নির্বাচনে, তারচেয়ে অধিক রাগ আর বিরোধিতায়। নিজের পায়ে কূড়াল মারা জাতির ভাগ্য বদলানো ও কঠিন। সত্যি বলতে কি এমন জাতি দুনিয়ায় আর দুটি নাই। যারা নিজেদের ভালো ও বুঝতে পারে না। পারলে আরাফাতের মতো যোগ্য প্রার্থীকে জেতানোর জন্য শ্রমের ও দরকার পড়তো না। আমি দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ফলাফলের পদ্ধতি নিয়ে বলছি না আমার কথা যোগ্যতা নিয়ে। আমরা যদি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আধুনিক মুখি সমাজ গড়ে না তুলি দেশের সরকার ও সংসদে প্রতিভাবান বুদ্ধিদীপ্ত মানুষজনকে না আনি অন্ধকার ঘুচবে? জানি অনেকেই কু যুক্তি ও সংসদের দিকে আঙুল দেখিয়ে এর ওর কথা তুলবেন। আমি তাদের কথা বলিনি বা তাদের সমর্থনও করছি না। আমার বিষয় আরাফাত। তাঁর মতো মানুষের সংসদে আগমন নিশ্চয়ই রুচি ও মেধাকে শানিত করবে। কারণ তার যতগুলো টকশো দেখেছি কথা শুনেছি তাতে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি তিনি যৌক্তিক ও সময়ের সাথে চলমান। ঢাকার যে আসনে লড়াই তার যোগ্য প্রার্থী তিনি। এই আসনটি অভিজাত শ্রেণির এলাকা বলে পরিচিত। যদিও এর আশেপাশে অসংখ্য সাধারণ বস্তিবাসী মানুষও আছেন। তাদের ভাষা আরাফাত বোঝেন বলেই মনে হয়। সবচেয়ে বড় কথা মার্জিত ও রুচিশীল বলে যে বিষয় তা রাজনীতি থেকে প্রায় নির্বাসিত।
সুযোগ এসেছে সময় এসেছে পুরনো জন্জাল সাফ করে নতুনভাবে শুরু করার। গুলশানের নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক জনগণ যে রায় দিক তাই শিরোধার্য। কিন্তু আমার মতামত ও তো গণতন্ত্রেরই অংশ। আমার মতে আরাফাতের মতো প্রার্থী জিতলে হবে আশাবাদের জয় আর না হলে হতাশ হবার বিকল্প কিছু থাকবে কি?
সিডনি
১৪.০৭.২৩
/এসবি/