ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

মেট্রোরেলে চড়ুন তবে নিয়মগুলো মানুন

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:২৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
মেট্রোরেলে চড়ুন তবে নিয়মগুলো মানুন

মেট্রোরেল

১৩ মাঘ (২৭ জানুয়ারি ২০২৪)। কুয়াশামোড়া শীতের বিকেলে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ২৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম শাহবাগে।

এর আগে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশনে যখন আসি তখন সময় বিকেল ৩টা। প্রচণ্ড ভিড়। মানুষের দীর্ঘ লাইন। সবাই টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রথম দিন মেট্রোতে এসেই দীর্ঘ লাইন ও ভিড় দেখে প্রথমে মনে হলো-মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়াই ভালো ছিলো। লাইনে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছি। নতুন অভিজ্ঞতা।

ম্যানুয়ালি টিকিট কাটার কাউন্টারে টিকিট প্রত্যাশীদের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ সেলফি তুলেছেন। কেউ ভিডিও করছেন। আমিও সে লাইনে অপেক্ষারত। আমার সামনে একজন বিদেশি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন দেশ থেকে এসেছেন-জানালেন তিউনিসিয়া। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। মতিঝিল যাবেন। আমার পেছনে একজন গৃহিনী। দেখলাম তাকে লাইনের বাইরে থাকা দুজন ব্যক্তি এসে টাকা দিয়ে বলছেন, ‘আমার জন্য টিকিট কাটবেন আপনার সাথে’।  প্রথমে কিছু বললাম না। পরে দেখি আরও একজন লাইনে না দাঁড়িয়ে তার কাছে আসছেন টিকিটের জন্য টাকা দিতে। আমি বললাম, ‘আন্টি এরকম ব্যাপারগুলো না করাই ভালো। এটা ঠিক না। সিসি ক্যামেরায় সব মনিটরিং হচ্ছে। মেট্রোর কোনো কর্মকর্তা যখন এসে আপনাকে বলবে, কেন এ কাজ করছেন, তখন ত লজ্জা পাবেন। ’ পরে তিনি ভুল বুঝতে পারলেন।

আরো পড়ুন:

পরে টিকিটি কাটলাম। বিকেল ৪টায় ট্রেন ছাড়লো। প্রথম মেট্রোতে চড়ায় আমি উৎফুল্ল। ভালোই লাগছে। কিছুক্ষণ পরপর মেট্রোতে ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারটা দারুণ লেগেছে। কোন স্টেশনে যাচ্ছে, এখন কোন স্টেশন, পরের স্টেশন কোনটা- সবই ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। তবে দরজা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বলব, অনেকেই দরজা ঘেঁষে দাঁড়ান। ঘোষণা দেওয়ার পরও অনেকেই এই ভুলটা করছেন।  অবশ্য কিছুদিন চলাচলের পর অভ্যস্ত হয়ে যাবেন সবাই।

আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করলাম, মেট্রোতে চলাচলে বেশ নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। সিঁড়ি দিয়ে উঠা, একপাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়া, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, টাইম টু টাইম মেট্রোর ভেতরে প্রবেশ করা, বের হওয়া- সবই নিয়মের মধ্যে করতে হয়। অনেকেই দেখলাম অভ্যস্ত না। তবে নিয়মিত চলাচল করলে বিষয়গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে সবাই।

দুই.
রাতে ফেরার সময় ঘটলো মিশ্র অভিজ্ঞতা। শাহবাগ থেকে উত্তরা ফিরতে স্টেশনে পৌঁছতে হবে ৭টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে (যারা সিঙ্গেল টিকিটে যাবেন তাদের জন্য)। এরপর গেলে টিকিট বন্ধ। যারা এমআরটি পাস ব্যবহার করেন তারা শুধু প্রবেশ করতে পারবেন। এরকম কিছু নিয়ম আছে। অনেকেই দেখলাম এটা মানতে চাইলেন না। হয়তো তারা ভাবছিলেন বাসে যখন তখন গেলে উঠা যায়-মেট্রোতেও সেরকম হবে। আমি তাদের বললাম, ‘ভাই নিয়ম মানুন, নির্দিষ্ট সময় মানতে হবে।’  

এখানে বলে রাখি, মেট্রোরেল কিন্তু সাধারণ গণপরিবহন নয়। দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। যাত্রীদের ভ্রমণের সময় মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ভ্রমণের সময় মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে চলুন। এছাড়া মেট্রোরেল পরিষ্কার রাখা, কোনো আবর্জনা না ফেলা-এগুলো নাগরিকদেরই করার চেষ্টা করা উচিত। শুধু তাই নয়, ট্রেনে, প্ল্যাটফর্ম, আশপাশে কোনো ধরনের ময়লা ফেলবেন না। 

তিন.
যানজট ও সময় বাঁচাতে পাঁচ বছর আগে আমি বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল ট্রেনে যাতায়াত করতাম নিয়মিত। মাসিক টিকিট কেটে রাখতাম।  আধাঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিটে মতিঝিল পৌঁছে যেতাম। এখন মেট্রোর যুগ শুরু হয়ে গেছে। ঢাকার নতুন সংযোজন মেট্রোরেল এখন বাস্তবে দৃশ্যমান। বলা যায় মেট্রোরেল আমাদের জন্য আশীর্বাদ। তাই আসুন মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে যাতায়াত করি।

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়