ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘কালো বিড়াল’ বলাতেই সিপিবি’র সমাবেশে ছাত্রলীগের হামলা

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
‘কালো বিড়াল’ বলাতেই সিপিবি’র সমাবেশে ছাত্রলীগের হামলা

সিপিবি-বাসদ লোগো

ইকবাল মাহমুদ
সিলেট, ১৬ সেপ্টেম্বর: ‘কালো বিড়াল’ বলাতেই সিপিবি’র সমাবেশে হামলে পড়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা।

রোববার বিকেলে সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে সিপিবি-বাসদের জনসভায় সরকারের নানা অপকর্মের সমালোচনায় মুখর ছিলেন বক্তারা। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের কথিত ‘কালো বিড়াল’ তত্ত্বের উপর সমালোচনামুখর বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাসদ সভাপতি কমরেড খালেকুজ্জামান।

সেসময় জনসভার পাশ দিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল। মুহুর্তেই সে মিছিল থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চড়াও হয় জনসভা মঞ্চে। তারা খুঁজতে থাকে ‘কে কালো বিড়াল বলে বিষোদগার করেছে?’।

তাদের হামলায় কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাসদ সভাপতি কমরেড খালেকুজ্জামানসহ অন্তত ১০জন নেতা-কর্মী আহত হন। 

হামলায় আহত সিপিবি’র সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন ‘রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। হামলায় তার ডান হাত ভেঙ্গে গেছে। 

সুমন বলেন, “সিপিবি-বাসদের জনসভায় শুধু ক্ষমতাসীন জোট নয়, বরং বিএনপি-আওয়ামীলীগের দ্বিদলীয় দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া হয়।”

প্রসঙ্গক্রমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির ব্যাপারে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য দেয়া হয় জনসভায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল জনসভার পাশ দিয়ে।

সুমন বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে হামলার ঘটনায় বিমূঢ় হয়ে পড়েন নেতৃবৃন্দ। প্রথমে তারা ধারণা করছিলেন এটা মৌলবাদী গোষ্ঠির আক্রমণ। কিন্তু পরক্ষণেই তাদের চোখের সামনে ছাত্রলীগের পরিচিত মুখগুলো ভেসে আসে।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপু’র নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় বলে জানান অ্যাডভোকেট সুমন।

হামলার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা নগর ভবনের দিকে চলে গেলে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ পুনরায় সমাবেশ শুরু করে। সেসময় ছাত্রলীগ ফের হামলা চালায় সভামঞ্চে। দ্বিতীয় দফা হামলা ঠেকাতে গিয়ে আহত হন কোতোয়ালী থানার ওসি আকতার আহমদ।

ছাত্রলীগ কর্মীরা ইট দিয়ে তার মাথা থেতলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাব-পুলিশ প্রায় পঞ্চাশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হামলার ঘটনায় এক পথচারী ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রলীগ কর্মীকে এখন পর্যন্ত আটক করার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, সোমবার দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপুসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।

জাতীয় নেতাদের উপর সম্পূর্ণ বিনা উস্কানীতে ছাত্রলীগের এ হামলায় হতবাক সিলেটের সুধীমহল। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাও।

রোববার রাতে আহত মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে দেখতে যান জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা। তারা হামলার ঘটনায় জড়িতদের শিগগীরই আইনের আওতায় আনার অঙ্গিকার করেন।

সিপিবি সিলেট জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য বলেন, “এ হামলার মাধ্যমে সিলেটে পরম সহিষ্ণু রাজনীতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের উপর আঘাত করা হয়েছে।”

এটি শুধু সিপিবি-বাসদের উপর আক্রমণ নয়, বরং দেশের অহিংস রাজনৈতিক চর্চার উপর একটি দাম্ভিক আঘাত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

রাইজিংবিডি / এস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়