করোনায় যেভাবে চলছে আ.লীগের কর্মসূচি
করোনার ধাক্কা লেগেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ‘সাময়িক স্থগিত’ রেখে করোনা মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। করোনাকালেও নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরই সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দলটি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, লিফলেট বিতরণ করে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ।
করোনা রোধে মানুষকে ঘরে থাকতে নানা কর্মসূচি হাতে নেয় দলটি। দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের পাশাপাশি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার অনেক আগেই জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং সংক্রমণ মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের কারণে অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা অনেক ভালো। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শুরু থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ’
দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি, পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কীভাবে মানুষকে বাাঁচানো যায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো, খাদ্য-চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, করোনা সংকটকালে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ দেশে ত্রাণ বিতরণ ও নগদ অর্থ সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দল ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, দলীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা মোট ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে ত্রাণ এবং ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ৮ লাখ ২০ হাজার ৫২৬ পরিবারকে ত্রাণ এবং ৩৯ লাখ টাকা, রাজশাহী বিভাগে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৪ পরিবারকে ত্রাণ এবং নগদ ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪২ পরিবারকে ত্রাণ এবং ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, বরিশাল বিভাগে ৫ লাখ ১ হাজার ৪৩৫ পরিবারকে ত্রাণ এবং ৯৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ঢাকা বিভাগে ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৮ পরিবারকে ত্রাণ এবং ৩ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ লাখ ৫৬ হাজার ১২৫ পরিবারকে ত্রাণ এবং ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৭৮৭ পরিবারকে ত্রাণ এবং ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৪১০ পরিবারকে ত্রাণ এবং ১ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন আওয়াম লীগ।
এছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া কর্মসূচি পালন করেছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ইফতার-সেহরি ও বিনামূল্যে সবজি বিতরণ এবং টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
করোনা সংকটে সরকারের সহযোদ্ধা হয়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সত্যি আমি খুব আনন্দিত ধন্যবাদ জানাই যে, ছাত্রলীগের সঙ্গে কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী প্রত্যেকে নেমে গেছেন যে যেখানে ছিলো। ধান কাটায় সহযোগিতা করেছে। এখন কৃষকের গোলা ভরা ধান।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতাকর্মীরা সংকটের শুরু থেকে অসহায় গরীব মানুষের পাশে আছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে সবার আগে ছুটে গেছে আওয়ামী লীগ। চালিয়ে যাচ্ছে নানামুখী সহায়তা। আমি আমাদের নেতাকর্মীদের আসন্ন ঈদে কর্মহীন, বেকার, ভাসমান মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পারভেজ/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন