বাসদে বহিষ্কার-ভাঙন: দলীয় প্রধান ও বিদ্রোহী নেতা যা বলছে
দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে রোববার কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী ও দলের ১৬ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাসদ (মার্কসবাদী) । বহিষ্কৃত নেতা বলছেন, দল গড়তেই তার সংগ্রাম।
বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
দলটির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘দলবিরোধী কর্মকাণ্ড, মূলনীতিবিরোধী অবস্থান এবং ধারাবাহিক সাংগঠনিক নিয়ম-শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী এবং ১৬ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুভ্রাংশু চক্রবর্তী তিন বছর ধরে দলের প্রায় সব সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছে, নিচুস্তরের নতুন কর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে, গোপনে বৈঠক করেছে। আর কয়েক মাস আগে শুভ্রাংশু এবং তার কতিপয় অনুসারী দলের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কাঠামো ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানিয়ে দলবিরোধী কাজের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়।’
কয়েক দশকের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ত্যাগের মূল্যায়নে শুভ্রাংশ চক্রবর্ত্তীকে পরবর্তীতে দলের প্রধান করার ঘোষণা প্রসঙ্গে ৮৫ বছর বয়সী মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ আমার পর নেতা কে হবে, তা নির্ধারণ করা মার্কসবাদের দৃষ্টিতেই ভুল বলে দল ২০১৭ সালেই সিদ্ধান্ত নেয়। সেটা সবাই মানলেও শুভ্রাংশু মানেনি। আমরা ৪০ বছর একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, সে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় মানুষ ছিল। কিন্তু সে পরবর্তীতে সংগ্রাম এগিয়ে নিতে পারেনি, নানা ব্যক্তিগত অহম ও অভ্যাস এবং দলের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। দলের চেষ্টার পরেও সে সংশোধন না হওয়ায় তাকে এবং তার নির্দেশনায় চলা নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার ছাড়া উপায় ছিল না।’
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীকে বাদ দিয়ে বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির একজনকে কমরেড হায়দারের মৃত্যুর পর দলের প্রধান করার প্রচেষ্টার কথা নাকচ করে তিনি বলেন, ‘এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির শুভ্রাংশ চক্তবর্ত্তী ছাড়া সবাইতো আমার সঙ্গে আছে। ‘
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ কয়েকটি কার্যালয় কমরেড শুভ্রাংশুর অনুসারীদের দখলে থাকা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেখানে বাসদকে (মার্কসবাদী) তারা পার্টিই মনে করছে না, সেখানে এই দলের নাম ব্যবহার করা কিংবা এই দলের কার্যালয়ে থাকার বৈধতা তাদের নেই।
শুভ্রাংশু চক্তবর্ত্তী ও তার অনুসারীরা গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর কথা ও তথ্য দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানস নন্দী, ফকরুল কবির আতিক প্রমুখ।
অভিযোগের ব্যাপারে শুভ্রাংশ চক্রবর্ত্তী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পার্টি যে একটি বিপ্লবী দল হিসেবে গড়ে উঠছে না, সেটা আমি প্রকাশ্যে বলেছি, কর্মী সভায় বলেছি, কেন্দ্রীয় এবং সব স্তরে বলেছি, এখানে চক্রান্তের কিছু নাই।’
পরবর্তী নেতা ঘোষণার দাবী করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নে শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘একটা ফোরামে বলেছিলাম, দলের সবাই কি সমান? দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে সবাই সমান হতে পারে না। এটাকেই তারা বিকৃত করেছে।’
ঢাকা/সাজেদ
রাইজিংবিডি.কম