ঢাকা     শনিবার   ২৯ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৬ ১৪৩১

ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পালানোর পথ পাবেন না, বিএনপিকে নানক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৩ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ০৭:০৪, ২৩ আগস্ট ২০২১
ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পালানোর পথ পাবেন না, বিএনপিকে নানক

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘বিএনপি'র অপকর্মকে প্রত্যাখ্যান করে দেশের জনগণ তাদের দিকে থুথু মেরে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকেন, তার পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন। আমাদের সহ্যের বাঁধ যদি ভেঙে যায়, তাহলে আপনাদের জন্য মঙ্গল হবে না। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’

রোববার (২২ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ‌্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হত্যার উদ্দেশ্যে বর্বর গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই সভার আয়োজন করে।

২১ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে তৎকালিন যুবলীগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই আমরা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছিলাম। আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকলে সবসময় পুলিশের আনাগোনা থাকতো। কিন্তু ২১ আগস্ট সমাবেশস্থলে কোনো পুলিশ দেখিনি। কি রকম যেন একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সন্দেহ আরও গভীর হয় ও উদ্বেগ বাড়ে। খবর পেলাম নেত্রী রওনা দিচ্ছেন। আমরা নেত্রীকে রিসিভ করার জন্য যুবলীগের প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মী ওসমানী মিলনায়তনের সামনে গেলাম। এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেল, নেত্রীর গাড়ি খুব কষ্ট করেই ভেতরে নিয়ে গেলাম। আমরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি আর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুনছি। বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে নেত্রীর বক্তৃতা শেষ পর্যায়ে। আমরা মিছিল করবো, প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ মঞ্চ ঘিরে শুরু হলো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ। মুহুর্মুহু শব্দে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। খবর পেলাম সেইফলি বেরিয়ে গেছেন। সুধাসদনের দিকে গেছেন। আমরা দ্রুত সুধাসদন ছুটলাম নেত্রীর কাছে।’

সে মুহুর্তের অবস্থা তুলে ধরে নানক বলেন, ‘সারাদেশের নেতাকর্মীরা টেলিফোন করে জানতে চাচ্ছেন, তারা কী করবেন! সুধাসদনে ঢুকে দেখি নেত্রী সোফায় বসা আর সোফার হাতলে বসে নেত্রীর গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন ছোট আপা (শেখ রেহানা)। তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- ‘বাইচা আছো?।’ এরই মধ্যে নেত্রীর নিরাপত্তায় পুরো সুধাসদন কর্ডন করে রেখেছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমি আপাকে বললাম ওদের (বিএনপি-জামায়াত) আর ছাড়বো না। ক্ষমতায় থাকতে দেবো না। অনির্দিষ্টকালের হরতাল দিয়ে সব কলাপস করে দিবো। রক্তের বদলা নেবোই। ওদের পতন না ঘটা পর্যন্ত হরতাল চলবে। যেখানে যার বাড়িঘর আছে, সমস্ত জ্বালিয়ে দেব। নেত্রী তখন বললেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আগে আমার মানুষকে বাঁচাও। হরতাল হলে তারা মুভমেন্ট করতে পারবে না। রাজনীতি পরে। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন ‘আমার জন্য আর কতো মানুষ জীবন দিবে? ওদের বাঁচাও। আমার আর রেহানার সমস্ত গহনা বিক্রি করে হলেও ওদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।’

নেত্রীর নির্দেশে আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ে তিনটি টিম করে হাসপাতালে নামিয়ে দিতে বললেন। কারণ, ড্যাবের ডাক্তাররা সরে গেছে, আহতদের কোনো চিকিৎসা তারা দেবেন না। আমরা আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা সবাই যার যার জায়গা থেকে আহতদের চিকিৎসায় নেমে পড়লেন।

তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে আবার সুধাসদনে গেলাম। তখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। নেত্রী বললেন- ‘কালকে তোমরা দুইজনে মায়াকে নিয়ে ওই এলাকাটা (সমাবেশস্থল) একটু সংরক্ষণ করো’। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখলাম, সেখানে পুলিশ রয়েছে। তারা আমাদেরকে আমাদের দলীয় অফিসে ঢুকতে দেবে না। আমরা চিৎকার করে বলতে লাগলাম- ‘মরাকে আর মারার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। গুলি করেন বুকে। তারপরও ঢুকবো।’ এক সময় ওয়াকি-টকিতে কার সঙ্গে যেন কথা বললো পুলিশ। আমরা ধাক্কা দেয়ার পর তারা সরে গেল। আমরা যখন ঢুকলাম, তখনও রক্ত শুকায় নাই। ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। যুবলীগ অফিসে ঢুকে দেখি আঙ্গুল পরে আছে। পা ফেলতে পারছি না। হাতের আঙুল, নখ, কাঁচা গোশত, হাজার হাজার জুতা পড়ে আছে। লাল ব্যানার ছিঁড়ে লাঠিতে বেঁধে ট্রাকসহ পুরো এলাকা আমরা ঘিরে রাখলাম। গ্রেনেডের চিহ্নিত জায়গাগুলোয় লাল পতাকা টানিয়ে দিলাম। ওইদিন রাতেই (২২ আগস্ট) সিটি করপোরেশনের গাড়ি সব আলামত ধুয়ে ফেললো। ট্রাকটা নিয়ে গেছে। কোনো আলামত তারা রাখেনি। সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে রেখেছে। এই হচ্ছে বিএনপি-জামায়তের পরিচয়।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই ছাত্রলীগ হল বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ক্যান্টনমেন্ট। শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পরে, এই ছাত্রলীগ, যুবলীগই এক/এগারের সময় গ্রেপ্তারের পর প্রতিবাদ করেছে। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এইভাবে চলতে পারে না। সংগঠন দাঁড় করাতে হবে। যাদের সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাদের সময় দিয়ে দিতে হবে। এতো তারিখের মধ্যে কমিটি গঠন করবেন নতুবা সেই কমিটি সেই তারিখে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, বাতিল হয়ে যাবে। সেই জায়গায় সম্মেলন প্রস্তুত  কমিটি করে সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। ঢাকা থেকে ঘোষণা দিয়েন না। এই কমিটি দিয়ে কোন কাজ হবে না।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেজর সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসানসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পারভেজ/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়