ঢাকা     বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

দল গোছানোয় গুরুত্ব আওয়ামী লীগে

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২  
দল গোছানোয় গুরুত্ব আওয়ামী লীগে

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদায়ী বছরের আওয়ামী লীগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। করোনার ধাক্কা সামলে বছরজুড়েই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দল গোছানোয় সময় দিয়েছে দলটি। বছরের শেষদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের হুমকি আমলেও না নিলেও গুরুত্ব দিয়েই তা মোকাবিলা করার পাশাপাশি সতর্ক থেকেছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ‌্যমে দীর্ঘদিন পর রাজপথে সরব উপস্থিত মিলেছে দলটির নেতাকর্মীর।

বিদায়ী বছরের দলের সবচেয়ে বড় ঘটনা আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। ২৪ ডিসেম্বর দিনব্যাপী সম্মেলনে দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা, আর তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি কার্যনির্বাহী সংসদে। অল্প কয়েকটি পরিবর্তন এনে আগের মতোই রাখা হয়েছে কমিটি। সামনে সম্ভাব্য চ‌্যালেঞ্জ পার হতে এতেই ভরসা রাখছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সম্মেলন ছিল সুশৃঙ্খল ও স্বতঃস্ফূর্ত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আমাদের পার্টি ঐক্যবদ্ধ সেটাই সম্মেলনের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

সামনে আওয়ামী লীগের সামনে অনেক চ‌্যালেঞ্জ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন, বিশ্বপরিস্থিতি সামনে রেখে আমাদের দেশেও সংকট আছে। জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িকতা, বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হটানোর আন্দোলন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ।

বছরের শুরুতে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা কমিটির সম্মেলন শুরু করে দলটি। দলীয় তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এরমধ্যে ৩৯টির সম্মেলন হয়েছে, সম্মেলন হয়নি বাকি ৩৯টির। এতে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে মাত্র ৭টি জেলা।

অন্যদিকে, নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়নি ২৪টিতে এবং নেতৃত্বের আংশিক পরিবর্তন হয়েছে ৮টিতে। করোনার কারণে গত দুই বছর জেলা, উপজেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন, বর্ধিত সভা ও যৌথ সভা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। চলতি বছর ঢাকা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, ভোলা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বরগুনা, কুমিল্লা মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, জামালপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মাগুরা, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া শতাধিক উপজেলা ও বেশ কয়েকটি মহানগরের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের এসব সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনের ১৪ দিন পর সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ওয়ালী আসিফের (ইনান) দায়িত্ব পান।

এর আগে, গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শবনম জাহানকে।

১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। এতে সভাপতি হয়েছেন ডেইজী সারোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শারমিন সুলতানা লিলি।

এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর উন্মুক্ত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহাসমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন তিনি। উপস্থিত হন সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনেও। এসব সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট চান তিনি।

চলতি বছরের ৭ মে ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কার হওয়া কয়েক জনকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।

বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি আনে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডে। বিদ্রোহী প্রার্থী আর তৃণমূল থেকে পাঠানো প্রার্থী তালিকায় ব‌্যক্তিস্বার্থ মুখ্য হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয় দলের দায়িত্বশীলদের।

এদিকে, গত ১৭ অক্টোবর সারাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

বছরজুড়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে আলোচনায় থাকা আওয়ামী লীগে ‘হঠাৎ ধাক্কা’ হয়ে আসে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব‌্য-পাল্টা বক্তব‌্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। ১০ ডিসেম্বরকে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সমাবেশের বিএনপি নয়াপল্টন চাইলেও জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সরকার দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা বিকল্প কোনও জায়গায় সমাবেশ করতে বলেন। কিন্তু বিএনপি সিদ্ধান্তে অটল থাকলে চার দিন আগে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে দু’পক্ষ সিদ্ধান্ত আসলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপি এই সমাবেশের আগে আন্দোলনের হুমকি এবং ’১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’- এই ধরনের বক্তব‌্যে নড়েচড়ে বসে আওয়ামী লীগ। বিএনপির পাল্টা কোনও প্রোগ্রাম না ডাকলেও যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকে দলটি। এরমধ্যে দীর্ঘদিন পর ঝিমিয়ে থাকা রাজনীতি রাজপথে আসে।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়