ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

বিএনপি দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়: আ.লীগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
বিএনপি দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়: আ.লীগ

নির্বাচন ঠেকিয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে বিএনপি বাংলাদেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে চায় বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দেশ বাঁচাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথ দখলে রাখার শপথ নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তারা।

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আগামী দিনগুলোতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহার দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যের সুরক্ষা দেওয়ার শপথ নিতে হবে।

 সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপিকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। বিএনপির সাথে আরেকটা দল আছে, আমি ভালো করে চিনি—জামায়াত। সুতরাং আমাদের লড়াই দুই শক্তির বিরুদ্ধে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ আজকে অনেক কিছু পেয়েছে। নেতাকর্মীদের বলি, আগামী নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যাকেই মনোনয়ন দিক, তার পক্ষে কাজ করতে হবে। আমি কী পেলাম, সেটি না ভেবে আমি কী দিলাম, সেটি ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো শক্তি আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝিবুঝি নয়, বিভেদ নয়; ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের রাজনীতির আদর্শ ধারণ করতে হবে। 

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান বলেন, দেশে-বিদেশে যারা এখন ষড়যন্ত্র করছে, তারা একাত্তরে ভয় দেখিয়েছিল, সপ্তম নৌবহর পাঠাবে বলে। আজও একইভাবে ভয় দেখাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে দেশবাসীকে সুসংগঠিত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা চেয়েছিল, বাংলাদেশ আবারও পাকিস্তানের ধারায় ফিরে যাবে। এজন্য ২১ বছর স্বৈরাচার শাসকরা দেশ শাসন করেছে এবং দেশকে পেছেনের দিকে টেনেছে। আজ অর্থনীতির সবক্ষেত্রে—কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে, যা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। এজন্য জাতিসংঘ থেকে দুটি পুরস্কার পেয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রায় ২১টির মতো পদক পেয়েছেন। তিনি জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা অনেক ওপরে তুলেছেন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত খেলায় পারবে না। এই বিএনপি-জামায়াত বিজয় লাভ করতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য আপামর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ হবে, ঘরে ঘরে গিয়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

বিএনপির আল্টিমেটামের সমালোচনা করে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা হয়ে বিএনপি-জামায়াত শেখ হাসনিার সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আর বারবার দফা দেয়, এই দফার কোনো শেষ নেই। ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ৫ দিন হয়ে গেলো। আপনাদের হ্যাডম জানা আছে। ১৫ বছরে কিছু করতে পারলেন না, এক মাসে উল্টোয় দেবেন। এই অপশক্তিকে রাজপথে নামতে দেওয়া যাবে না। রাজপথে পাহারা বসাতে হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্য জাতীয় ও আন্তার্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়, দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তাই, শপথ নিতে হবে, সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে নৌকাকে আবারও নির্বাচিত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে হবে। বাংলাদেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান না। আফগানিস্তানে পুতুল সরকার বারবার বসানো সম্ভব, পাকিস্তানের সামরিক সরকার বসানো সম্ভব, কিন্তু ৩০ লক্ষ শহীদের বাংলাদেশে তা সম্ভব হবে না।

আরেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, শেখ হাসিনা একদিকে ভোট-ভাতের সংগ্রাম করেছেন, আরেকদিকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। সেই সময়ে কারফিউ দিয়ে মানুষের টুটি চেপে রেখেছিল। সেই বাংলাদেশ কঠিন এক বাংলাদেশ। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশের এই কোণা থেকে ওই কোণায় চষে বেড়িয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, যত বড়ই বিশ্বমোড়ল হোক না কেন, বঙ্গবন্ধুর মতো তার মেয়েও এ দেশের এক ইঞ্চি মাটিও অন্যের কাছে বন্ধক রাখবে না। মেঘ কেটে যাবে। সূর্য উঠবে শিগগিরই। আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সু্ঠু হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয়, একটি সংগ্রামী উপাখ্যানের নাম। বারবার যিনি মৃত্যদুয়ার থেকে ফিরে এসে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারকে এগিয়ে গিয়ে গিয়েছেন। আজকে যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নানা ষড়যন্ত্র।

যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে তলিয়ে দিয়েছিল, সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রোলে, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। বাঙালি জাতির মুকুটমণি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা না থাকলে এদেশ কখনো ঘুরে দাঁড়াতো না।  

তিনি বলেন, এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানের প্রতাত্মা শক্তিশালী দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছে দেশে বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াত লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এরা কখনো বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না। এরা রাজাকারের বংশধর। এরা কখনো বাংলাদেশের ভালো চায়নি। ক্ষমতার বাইরে থেকে আজকেও তারা ষড়যন্ত্র করছে। ভিসা নীতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরোয়া করে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন যারা বাধাগ্রস্ত করতে আসবে, তাদের রাজপথে মোকাবিলা করা হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের একটিই উদ্দেশ্য, তা হলো—শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করা। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। সেটা হবে না। আমরা রাজপথে আছি, থাকব। কীভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত করে, আমরা দেখব। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে লড়ব।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া, সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।  

পারভেজ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়