ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

দেশ ‘বিএনপি শূন্য’ করতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে: রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০২, ৪ নভেম্বর ২০২৩  
দেশ ‘বিএনপি শূন্য’ করতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে: রিজভী

ফাইল ছবি

‘বিএনপি শূন্য’ করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গ্রেপ্তার থামছে না। দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত, ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের যে হিড়িক চলছে, যে ধারা চলছে সেটা ভাষায় বলা যাবে না এবং তার সাথে আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও কিন্তু থামছে না।

রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই পর্যন্ত সাত হাজার ৭১৩ জন গ্রেপ্তার, মোট মামলা হয়েছে ৫০৬টির অধিক, মোট আসামি ৩৮ হাজার ৫৬০ জন, মৃত্যু ১০ জন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৮০ জন।

‘প্রধানমন্ত্রী একতরফা নির্বাচন চান’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকার যে কী স্বাদ, সে তো তিনি পেয়েছেন। সেই স্বাদের কারণে তিনি (শেখ হাসিনা) অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না। দরকার হলে আরও যদি রক্ত ঝরাতে হয়, রক্ত ঝরিয়ে হলেও তিনি একতরফা নির্বাচন করবেন।

বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণই নাকি তার মূল শক্তি। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? জনগণ সাথে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন?

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেন আপনি নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিসহ বিরোধীদলের কর্মসূচিতে নৃশংস হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারান্তরীণ করেছেন? কেন আপনি দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় করেছেন বিএনপিসহ তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। নেতাকর্মীদের ধরতে গিয়ে বাসায় না পেয়ে তাদের বাবা, ভাইকে আটক করেছে।

‘আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় ক্যাডাররা রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা ও বিপুল সংখ্যক মানুষকে জখম কেন করেছেন? আপনি এতটাই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন যে, দেশব্যাপী ধরপাকড় করে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে।

‘৭১ সালের অবস্থা বিরাজ করছে’

রিজভী বলেন, বিএনপিকে বল প্রয়োগে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন একাত্তরের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবহু নকল করছে আওয়ামী সরকার। তাদের শান্তি কমিটির মতো এখন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে।

‘হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেলে তাদের পরিবারের লোকদের ধরে নিয়ে যেতে। আওয়ামী পুলিশ সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। ছেলে না পেলে তার ভাইকে, ভাইকে না পেলে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে এই অমানবিক মনুষ্যত্বহীন সংবাদ প্রতিনিয়ত আমাদের শুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল দেখতে পারছি। ঢাকাতে গ্রেপ্তার যুবদলের নেতা মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালে ককটেল নিক্ষেপের মামলা করা হয়েছে। যখন সে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে, তার বেশ কিছুদিন পরে মামলা দিয়েছে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে।

তিনি বলেন, জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপিনেতা কাঁকন। আপনারা দেখবেন সংবাদপত্রে কিন্তু এই বিষয়গুলো আসছে। এই তাজ্জবের কাহিনী, এই তামাশার কথাবার্তার কথা আমরা প্রায় শুনি, এসব সংবাদ গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্ত হাস্যকর মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জুলুম-নির্যাতন-হয়রানির ভয়ঙ্কর আবর্তের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

‘কারাবন্দি শীর্ষ নেতারাও নির্যাতিত’

রিজভী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ কারাগারে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সাথে প্রচণ্ড অসদাচরণ করা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।

‘তার উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। গ্রেপ্তারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে কোনও ওষুধ পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই। এক মনুষ্যত্বহীন অবিচারে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।’

‘উনার বিপজ্জনক হুমকি’

রিজভী বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিষাক্ত মোহরের আঁচড়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে ছিন্নভিন্ন করতে চাচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবরোধ, অগ্নি সন্ত্রাস যারা করবে তারা কেউ যেন পার না পায়। যদি কেউ ধরা পড়ে তাকে ধরে ওই আগুনে ফেলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডলিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিক্ষেপের হুমকি… ভয়ঙ্কর সর্বনাশী হুমকি। সরকারের সমগ্র চক্রান্তের পরিসমাপ্তি যারা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি নেতাদের বোমা ছুঁড়ে মারার মামলা দিতে পারে তারা আর শান্তিপূর্ণ অবরোধকারী নিরীহ নেতাকর্মীদের অগ্নিসন্ত্রাসী বানিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পারে, এটা অসম্ভব কিছু না। তাদের দ্বারাই এটা সম্ভব।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বিপজ্জনক হুমকিতে সারা জাতি স্তম্ভিত। জাতীয় সহিষ্ণুতা ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উসকে দিচ্ছে। মন্ত্রীরা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো আহ্বান ও মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান আমলে নেওয়া দূরে থাক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরে ফুটেজ যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে তার প্রতিটিতে দেখা যায়, পুলিশের পাশে লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ একযোগে মোকাবিলা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা একে অপরের পরিপূরক।

মেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়