ক্ষমতাসীনরা নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে: রিজভী

‘বর্তমান সরকারের নেতারা অহর্নিশ কথা বলে যাচ্ছে। কারণ, প্রায় সকল সংবাদমাধ্যম তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারাই নাশকতা ঘটিয়ে, গণবিরোধী কর্মকাণ্ড করে বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে একচেটিয়া প্রচারণা চালাচ্ছে। অনেক গণমাধ্যমকে জোর করে হুমকি দিয়ে সরকারের কথা প্রচারের নির্দেশ দিচ্ছে। এখন তারা সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চালাচ্ছে। কাউকে না পেলে পরিবারের সদস্যদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। যাদেরকে ধরা হচ্ছে, তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে।’ 

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তৃতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও মালিকানা ফিরিয়ে আনা এবং দেশ থেকে অনাচার-দুর্নীতি দূর করার জন্য আবারও ৮ ও ৯ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলকে এই স্বৈরচারী সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা কখনোই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মতামতে বিশ্বাস করে না। তারা প্রথমেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আবারও দেশে নতুন কায়দায় বাকশাল কায়েম করা শুরু করেছে। আজও তারা দেশে পরিকল্পিতভাবে নাশকতার ছক তৈরি করছে। অন্যদিকে, যার বিপুল জনসমর্থন রয়েছে, তাকে এ ধরনের নাশকতা করতে হয় না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়। এসব দেখেই ক্ষমতাসীন স্বৈরশাহী পুলিশ, ছাত্রলীগকে দিয়ে নাশকতা করে বিপুল মানুষের জমায়েতকে নস্যাৎ করেছে। গোটা বিশ্বের মানুষ দেখেছে, কত ভয়ঙ্কর ও সর্বনাশা দল হতে পারে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সরকারের নির্দেশে বিরোধী মত দমনে কাজ করছে। অথচ, তাদের অস্ত্র- গুলি সবকিছুই তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। জনগণকে ভয় পাইয়ে দিতে এবং একতরফা নির্বাচন করতেই আজ তারা কাজ করছে। এক্ষেত্রে টার্গেট করা হয়েছে তরুণদেরকে।

তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এত উৎপীড়নের মধ্যেও রাজপথে নেমে এসেছে। তারা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি পালন করছে। কারণ, দেশের মানুষ গণতন্ত্রবঞ্চিত, দেশের মালিকানা থেকে বঞ্চিত। তারা রক্তের ঋণ পরিশোধ ও জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। সকলের শান্তিতে থাকার জন্যই আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি। যেখানেই বাধা আসবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়তে হবে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে মাঠে আছি। এটা ছাড়া কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। হয় দেশ ছাড়তে হবে, নয়ত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকতে হবে। কিন্তু, দেশের মানুষের ইতিহাস—তারা কখনো এভাবে থাকেনি। এখানে ফকির বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, সাঁওতাল আন্দোলন হয়েছে। এ ধরনের বিপ্লব আমাদেরকে আজও অনুপ্রাণিত করছে। সুতরাং, জনগণ আবারও নির্ধারণ করবে, কে হবেন দেশের শাসক?

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হামলা-মামলার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি মোট গ্রেপ্তার প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী। মোট মামলা ১৬টি। মোট আসামি ১ হাজার ৭২৮ জনের অধিক নেতাকর্মী। মোট আহত ৪৮ জনের অধিক নেতাকর্মী।

তিনি জানান, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন আগে থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৯৫১ জনের অধিক নেতাকর্মী। মামলা ১৪৮টির বেশি। আহত ৩ হাজার ৫৬৬ জনের অধিক নেতাকর্মী। একজন সাংবাদিকসহ মারা গেছেন ১১ জন।