ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

কে হচ্ছেন কুমিল্লায় নৌকার মাঝি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৫ নভেম্বর ২০২৩  
কে হচ্ছেন কুমিল্লায় নৌকার মাঝি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তির দিক দিয়ে হট ফেবারিট দুজন। একজন বর্তমান সাংসদ তাজুল ইসলাম, অন্যজন দেলোয়ার হোসেন ফারুক। এই দুজনের একজন পেতে পারেন দলীয় মনোনয়ন।

লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ আসন জাতীয় সংসদের ২৫৭তম। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মো. তাজুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এবারও তিনি মনোনয়ন চান। অন্য একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফারুক।

কুমিল্লার এই আসনের পরিস্থিতি জানতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে বেশিরভাগ দলীয় সাংসদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যেভাবে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, কুমিল্লার এই আসনটিতে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। একাধিক ধারা, উপ-ধারায় চলছে এখানকার রাজনীতি। এজন্য বর্তমান সাংসদকে দায়ী করছেন তারা। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সবাইকে একছাতার নিচে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছে খোদ নেতাকর্মীরাই। তাদের পরামর্শ, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে নতুন নেতৃত্ব বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠজনরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও সাংসদের ঘনিষ্ট লোকজনই নিয়ন্ত্রণ  করেন পুরো এলাকা। দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠান করতেও নিতে হয় সাংসদের ঘনিষ্ঠজনের অনুমতি। এছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই আসনের দুটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পছন্দের প্রার্থীকে দলের মনোনয়নে বিনাভোটে নির্বাচিত করার বিষয়টি বেশ আলোচিত ও সমালোচিত হয়। এ নিয়ে দলের সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী ও ভোটারের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ পুরোনো মনোহরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও লক্ষনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাকে চেয়ারম্যান সারোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি কিন্তু আমাদের সরকারের আমলেই আমরা বঞ্চিত। বর্তমান সংসদ সদস্য তার কিছু ঘনিষ্ঠ লোকজন আছে তাদের বাইরে কেউ কিছু করতে পারে না। এই আসনে আওয়ামী লীগের যে শক্তিশালী অবস্থান ছিল সেটা এখন আর নেই। এখানে অনুমতি ছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যানারেও কোনো অনুষ্ঠান করা যায় না।

তবে একটি পক্ষ তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ মানছেন না। তাদের মতে, কিছুটা অসন্তোষ আছে, তবে সেটা সবজায়গাতেই হয়। তারা বলছেন, জলাঞ্চল বলে পরিচিত লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারলে আসনটি আবারও আওয়ামী লীগ ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। 

জানতে চাইলে লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া বলেন, ‘যেখানে যে নেতার গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকে, যার অবস্থান ভালো থাকে তার বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডা ছড়ানো হয়।’

জানা গেছে, দেশের নয়টি সাধারণ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ পাঁচটিতে, বিএনপি তিনটিতে ও জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনে জয়লাভ করে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা আসনটি ধরে রাখতে চায়। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ছাড়াও আসনে নৌকা প্রতীকে লড়তে চায় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফারুক।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে পাঁচবার আওয়ামী লীগ জিতেছে, সেসব নির্বাচনে ফারুকের ভূমিকা স্মরণ করেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানস্থাপনের মাধ্যমে জনসেবার পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডে তার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও আঞ্চলিকতার কারণে ভোটের রাজনীতিতেও বেশ দখল রয়েছে তার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই আসনে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী থাকলেও তারা এখনও সিদ্ধান্তহীনতায়। তবে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) লাকসাম উপজেলার সভাপতি প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনে মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাসী। প্রচুর উন্নয়ন কাজ হয়েছে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। জনগণের সমর্থন আমাদের পক্ষে আছে। যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে।

জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত এ আসনটির বর্তমান ভোটার চার লাখ ৬৯ হাজার ৬২ জন। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ৭১৭ জন। এ দুই উপজেলায় পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৯ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ২৩ হাজার ৪০৯ জন। এছাড়া আসনটির লাকসাম উপজেলায় চারজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

/পারভেজ/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়