‘নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতাদের মুক্তি’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন মন্ত্রী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপির নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘অনেক কথার মধ্যে কথাটি এসেছে। আমি যা বলেছি, ভুল বলিনি। আমার বক্তব্য একদম ঠিক আছে। কিন্তু অনেক কথার মধ্যে এসেছে। কাজেই তারা (গণমাধ্যম) এটুকুই দেখিয়েছি।’
বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে বলেও এ সময় জানান তিনি।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান।
এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপির নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।’
সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির এই সদস্যের ব্ক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের আমরা নির্বাচনে আনতে চাই। কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। আমার বক্তব্যের মূল কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় চেয়েছেন এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। সেটা বলতে গিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।’
‘আমি বলতে চেয়েছি, আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে বিএনপির অংশগ্রহণ চেয়েছে। এই কথাটি বলতে গিয়ে আমি সেদিন কিছু কথাবার্তা বলেছি। আমি সেদিন এটিও বলেছি, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তারেক রহমানের নামে মামলা রয়েছে, তার সাজা হয়েছে। সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তার মা অসুস্থ, তারও সাজা হয়েছে। কাজেই আমার ধারণা বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনোভাবেই নির্বাচন করা সম্ভব না। পৃথিবীর কোনো দেশেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে ব্যবস্থা নেই। জাপান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে কিছু নেই। কাজেই আওয়ামী লীগের সামনে কোনো বিকল্প নেই- এই কথাটিই বলেছি। এই পদ্ধতির মধ্যে থেকে বিএনপি বলতে পারতো, নির্বাচনটাকে কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন নিতে পারতাম। বিদেশ থেকে আরও বেশি পর্যবেক্ষক আসতেন। ওসিদের বদলি করা হচ্ছে। এভাবে এসপিদের বদলি করা যেতো। ডিসিদের করা যেতো। অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখে, এই সরকারকে রেখে নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা যা করা দরকার, আওয়ামী লীগ সেটা করতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেটা বিশ্বাস করেনি। আন্দোলনে গেছে।’
এ সময়ে গত ১৫ বছরে বিএনপির বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিএনপি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে, ট্রেন লাইন কেটে নাশকতা করেছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে রাজশাহীতে কীভাবে তারা পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রায় চারশ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছি, আওয়ামী লীগের জন্য কী গন্তব্য ছিল? আপনারা জানেন, তারা ট্রেন লাইনে কীভাবে নাশকতা করেছে? দেশে কী যুদ্ধাবস্থা চলছে। এই নাশকতা বন্ধ করতে হলে গ্রেফতার তো করতে হবেই। বিএনপি নেতাদের হুকুম ছাড়া কী কোনো কর্মী বাসে আগুন দেবে? তাদের জেল-জুলুমের ভয় আছে না! অবশ্যই আছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন সরকারে আছে, তার দায়িত্ব হলো মানুষের জীবনের ও জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেটা আওয়ামী লীগ করেছে।’
‘এমন প্রেক্ষাপটে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা যদি নির্বাচনে আসতো, তাহলে স্বীকার নিত, তারা আর সন্ত্রাস করবে না। তার মানে শান্তি আসতো। নির্বাচন কমিশনারই বারবার বলেছে, প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দেবো। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বড় বড় নেতাদের কারাগারে রেখে কী নির্বাচন হবে? সেটা একটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জামিন দিয়ে; আমি ছেড়ে দেব- এটা তো কথা না। জামিন দিয়ে আইনের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতো। নির্বাচন কমিশনই এমনটা ভেবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল।’ যোগ করেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? বিএনপি যদি রাজি হয়, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। সেই কথাটিই আমি বলেছি। আবারও বলেছি।’
এএএম/তারা