বরিশালে প্রধানমন্ত্রী
‘অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন’
বরিশালে আওয়ামী লীগের জনসভা। ইনসেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বরিশালবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে বরিশালে ছয় লেনের রাস্তাসহ অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। যখন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ছিল, বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশ এগিয়ে যায়। এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি।’
নতুন ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আহ্বান, যারা প্রথমবার ভোট দিতে আসবেন, নিশ্চয় চাইবেন না যে, আপনার ভোট ব্যর্থ হোক। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে, বিএনপি-জামায়াত মানুষ পোড়ায়:
আওয়ামী লীগ যখন জনগণের জন্য উন্নয়ন করে, তখন বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে, এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেললাইন কেটে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ পাতে। মা আর সন্তানকে একসাথে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। গাড়িতে আগুন দেয়। ২০০১ সালে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল। এর পর ২০১৩, ২০১৪; এখন আবার শুরু করেছে।’
‘আমি ধিক্কার জানাই, ওই বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসী দল। এই সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার বাংলাদেশে নেই। কারণ, তারা মানুষ পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে, ওদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। এ দেশের মানুষ তাদের চায় না। তাদের দোসর কে—যারা একাত্তরের গণহত্যা করেছে, লুট পাট করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে। যাদের বিচার করেছি, সাজা দিয়েছি; সেই যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছে তাদের দোসর।’
তিনি বলেন, এক দল হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং এবং যত প্রকার অপকর্ম... এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী সেই দল। তার সাথে জুটছে যুদ্ধাপরাধী দল। এরা নির্বাচন চায় না, বানচাল করতে চায়।
নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে:
নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরিক হবে, এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা ৭ তারিখে সকাল সকাল সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন। মার্কাটা কী? নৌকা মার্কা। এই নৌকা হচ্ছে নুহ (আ.) নবীর নৌকা। মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল।’
‘এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।’
প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে চাই:
আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তি খাতে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে চাই, যাতে বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষায় সবদিক থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম চলতে পারে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। আমাদের ছেলেমেয়ে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিখবে। দক্ষ জনশক্তি হবে। আমাদের সরকার স্মার্ট হবে, অর্থনীতি স্মার্ট হবে, সমাজ স্মার্ট হবে।’
বরিশালের উন্নয়ন
দেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশালে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অবহেলিত বরিশাল আজ কোথায় আছে। বরিশাল কি উন্নত হয়েছে?’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে বরিশালের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বরিশাল বিভাগে নৌবাহিনীর ঘাঁটি করেছি, সেনানিবাস করেছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে সোলার প্যানেলসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বরিশালেও নিয়ে আসব, যাতে আরও শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।’
‘তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল কুয়াকাটায় চলে আসবে। সেখানে স্থাপন করা হবে, যাতে দক্ষিণাঞ্চলে ইন্টারনেট নির্বিঘ্ন হয়। বরিশাল ছিল অন্ধকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, এখন প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলছে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কথা দিয়েছিলাম, কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। কথা রেখেছি। আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, এখন দিন বদলে গেছে।’
বরিশালে ছয় লেনের রাস্তা, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশালের কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দর পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। এই বরিশালে আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।
বরিশালে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি, প্রতিটি নদীর ওপর সেতু করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, বরিশাল ছিল শষ্যভাণ্ডার। সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেটা মাথায় রেখে ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের ডেল্টা প্ল্যান আমি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কারা পারবে? একমাত্র আওয়ামী লীগ পারবে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫.১ ভাগ ছিল, তা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশের হতদরিদ্র থাকবে না। আমরা গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, জমি পাবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভার শেষদিকে বরিশাল বিভাগে নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বরিশালবাসীর কাছে ভোট চান।
পারভেজ/রফিক