ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

‘প্রহসনের নির্বাচন করে সরকার টিকে থাকতে পারবে না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ৩ জানুয়ারি ২০২৪  
‘প্রহসনের নির্বাচন করে সরকার টিকে থাকতে পারবে না’

‘প্রহসনের নির্বাচন’ করে সরকার টিকে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে এরকম একটা ‘যেনতেন’ ভোট করে তারা আবার ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করবে, সেটা কোনদিন হবে না।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণের আগে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।

মঈন খান বলেন, আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ৭ জানুয়ারির ভোটের পর আমরা কী করবো? এ ব্যাপারে আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, এই সরকারকে বুঝতে হবে এটা ২০২৪ সাল, ২০১৪ নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। আমরা রাজপথে থাকবো, বুলেট মোকাবিলা করবো। আমরা গ্রেনেড মোকাবিলা করবো কিন্তু শান্তিভঙ্গ করবো না। এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য ইনশাল্লাহ আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।

বহির্বিশ্বের চাপের পরও নির্বাচন হচ্ছে- এরকম প্রশ্নে মঈন খান বলেন, নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে নয়, নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। যেদিন ওরা মনোনয়ন দাখিল করেছে, সেদিনই ‘একতরফা নির্বাচন’ হয়ে গিয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ঠিক করে নিয়েছে, কোন সিটে কোন এমপি। ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

‘ইতোমধ্যে আমি বলছি, আবারও বলছি, বিশ্বের শুধু গণতন্ত্রকামী সরকারগুলো নয়; আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিদেশে যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আছে- যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আছে, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আছে তারা প্রত্যেকে একটি কথা বলেছে, ২৮ অক্টোবর বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপরে সরকার ক্র্যাকডাউন করে এদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে’।

আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের উদ্দেশ্য, কীভাবে দিনের ভোট রাতে করবে, অথবা ভুয়া ভোট করবে, অথবা সাজানো একটি নির্বাচন করবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একটি মনমতো ফল বানিয়ে সেটা দিয়ে ইচ্ছামতো ভোট ভাগাভাগি করে সংসদ সাজিয়ে নেবে। সেই সাজানো জাতীয় সংসদ দিয়ে তারা একটি একদলীয় বাকশালী সরকার গঠন করতে বদ্ধপরিকর।

আওয়ামী লীগ সরকার কেন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কারণ তারা ক্ষমতার মাধ্যমে দুর্নীতি করে, মেগা দুর্নীতি করে, অবৈধ সম্পদ-অর্থ-বিত্ত-বৈভব সংগ্রহ করছে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে আজকে দেশে-বিদেশে সকল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বিগত ১৫ বছরে এই সরকার আমাদের জাতীয় যে দেনা বিদেশের, সেটা ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ২০ গুন এই জাতির দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের ট্যাক্সের ওপরে এবং সেটা তারা বিদেশে পাচার করেছে, লোপাট করেছে। সেই টাকা দিয়ে তারা কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছে, দুবাইতে তারা থার্ড গুলশান তৈরি করেছে, তারা এই টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ থেকে ৫২ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করে এদেশে সৃষ্টি করেছিলো গণতন্ত্রের জন্য, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আওয়ামী বাকশালী সরকার দেশে আজকে ২২ পরিবারের পরিবর্তে তাদের আশির্বাদপুষ্ট আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে ২২০ পরিবার তৈরি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ লুটে নিচ্ছে। তার প্রতিবাদে আজ দেশের মানুষ জেগে ওঠেছে। রাজপথে আপনারা দেখেছেন ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে আমরা একবছর যাবত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ নিয়ে প্রতিবাদ, সমাবেশ করেছি।

মঈন খান বলেন, আমরা ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা বলেছি, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশে পরিবর্তন আনতে হবে। বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা কোনদিন সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না এবং আমরা চাই, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশে পরিবর্তন আনবে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় কৃষক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আবদুল মঈন খান পথচারী, যানবাহনে থাকা সাধারণ যাত্রী ও ফুটপাতের হকারদের হাতে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন।

এ সময় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কৃষক দলের সহ সভাপতি জামাল উদ্দিন খান মিলন, ভিপি ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় নেতা ফেরদৌস পাটোয়ারি, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুর রহমান টিপু, শাহ আবদুল্লাহ আল বাকি, শাহ মনিরুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফিক, জাহাঙ্গীর আলম, হারুনার রশীদসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়