ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মানুষকে সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪  
‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মানুষকে সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবে’

বিএসএফ’র গুলিতে বিজিবির এক জওয়ান নিহতের প্রতিবাদে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, একটি অবৈধ সরকার যখন জনগণের ম্যান্ডেট ব্যতীত ১৫ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকে, তখন একটি স্বাধীন, মর্যাদাপূর্ণ স্বকীয় পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের মনোবল ও যোগ্যতা তাদের থাকে না। জনপ্রত্যাখ্যাত আ.লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রতিনিয়ত দেশের কোটি কোটি মানুষ সীমান্তে হতভাগ্য ফেলানীর মত কাঁটাতারে ঝোলার অপেক্ষায় আছে।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকে‌লে দলটির বিজয় নগরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তি‌নি একথা ব‌লেন। ব্রিফিংয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব, কূটনৈতিক উইং’র দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলির সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

সীমান্ত হত্যা রোধে সরকারের উপুর্যুপুরি ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, পৃথিবীর অন্য কোন সীমান্তে এত পরিমাণ বেসামরিক নাগরিক খুন হওয়ার নজীর নেই। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বিভিন্ন মাত্রায় প্রায়ই যুদ্ধ হয়, দুই পক্ষেরই সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। কিন্তু বেসামরিক নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনা সেখানে নেই বললেই চলে। ভারত-চীন সীমান্তে কোনও বেসামরিক নাগরিকের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোনও পক্ষই করে না। ইরান-আফগানিস্তান বা পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক পাচার হয়ে থাকে কিন্তু হরহামেশাই বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা সেখানে শোনা যায় না। এমনকি নেপাল, ভুটান সীমান্তেও কোনও নাগরিককে হত্যার কথা আমরা শুনিনি। 

তিনি ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, শুধু বাংলাদেশ সীমান্তই মনে হচ্ছে যেন অসহায় বাংলাদেশের মানুষের রক্ত, লাশ আর খুনের সীমান্ত! ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ‘দেখা মাত্র গুলি’র নীতিই আজকের হাজার হাজার বেসামরিক লোকের হত্যার কারণ বলে আমরা মনে করি।

১৯৪৬ সালে জারি করা ভারতের বিদেশ আইনের বিধি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে আইনে অবৈধভাবে তাদের দেশে প্রবেশের শাস্তি রাখা হয়েছে পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানা। অথচ আইনের চরম লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রায়ই নির্মমভাবে গুলি করে মারা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকদের যেহেতু নিজ দেশেই কোনও মর্যাদা নেই, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা তাদের তো খুন করে সীমানার কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবেই।

তিনি ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায়ের মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, কিরিটি রায় বলেছেন ‘আসলে ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায় না, তাই বন্ধ হয় না। ওরা মুখে এক কথা বলে আর কাজে করে আরেকটা। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও শক্ত কোনও প্রতিবাদ নেই। তারা ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকে’।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গত পঞ্চাশ বছরে যে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফ হত্যা করেছে তাদের অধিকাংশই গরু ব্যবসায়ী এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষক ও বাসিন্দা। বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেকগুলো রাজ্যের সীমান্ত থাকলেও অধিকাংশ খুন সংগঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে; পশ্চিম বাংলার সাথে। লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোহর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই মৃত্যুভয় নিয়ে বেঁচে থাকেন।

তিনি অভিযোগ করেন, দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি জনগণের করের টাকায় চললেও সীমান্তে তারা জননিরাপত্তা দিতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। ইয়াবা, ফেনসিডিল, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান রোধে তাদের ব্যর্থতা চরম, কিন্তু সরকারের লাঠিয়াল হয়ে বিরোধীদলের আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করতে তাদের হাত কাঁপে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, গাজী নাসির, সহকারী অর্থ সম্পাদক সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম খান, আমেনা বেগমসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

নঈমুদ্দীন/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়