ঢাকা     সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৮ ১৪৩১

‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪  
‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে’

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও লুটপাট রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে ব‌লে অভিযোগ ক‌রে‌ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এজন‌্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেছেন তারা।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকে‌লে রাজধানীর বিজয়নগ‌রে আমার বাংলা‌দেশ পা‌র্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে এ অভিযোগ ক‌রেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য ও লুটপাট ব‌ন্ধের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মেজর (অব.) ডা. আব্দুল ওহাব মিনার সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এবং গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও আইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শওকত আরমান।

এবি পার্টির আহ্বায়ক সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হওয়ার কথা, যা বাংলাদেশে মাত্র ৫ শতাংশ। চরম অব্যবস্থাপনা এই খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নেই চিকিৎসক বা নার্স, নেই কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। লুটপাট, নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশব্যাপী সুন্দর অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গাড়ি চালকের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া, মন্ত্রীর নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়, করোনাকালে হাসপাতাল তৈরী ও টিকা কেনা নিয়ে চলেছে লুটের মহোৎসব। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। সেবা দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সরা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের হাতে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অপেশাদারি আচরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি, সঠিক রোগ নির্ণয়ে অক্ষমতা, প্রাইভেট চেম্বারে অতিরিক্ত রোগী দেখা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে সরকারি কিছু জটিল নিয়ম-কানুন দেশের মানুষকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য করছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, কেন রোগ হয়, রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়, বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও রোগহীন পরিবেশ কিভাবে তৈরী করা যায়, এসব ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলাই এখন আমাদের বড় কাজ। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ, যেমন: হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি রোগে ২০০০ সালে মৃত্যুর হার ছিল ৪২.৬ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৬.৯ শতাংশে। গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, জনস্বাস্থ্যের পিছনে এক ডলার খরচ করলে এসব জটিল রোগ থেকে ৬ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—মনোবিদ ও জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষক ডা. শারমিন আহমেদ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুব পার্টির এ বি এম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, হাদিউজ্জামান খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, ফেরদৌসী আক্তার অপিসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়