তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই বলে যারা উৎখাতের স্বপ্ন দেখে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না-সেই প্রশ্ন রেখে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়া, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষী দিতে হবে যাতে তাদের সাজা হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এরা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু, এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু।
‘প্রথমে তারা নির্বাচন ঠেকাবে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তাদের প্রভুরা আছে তাদেরও চেষ্টা ছিলো, কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবারই হয়েছে। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা সরকারে এসেছি।’
পড়ুন: বঙ্গবন্ধু নারীদের মুক্তির পথ সুগম করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা পায়ের নিচে মাটি খোঁজে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না, সেটি সন্দেহ। এখনও শুনি সরকার নাকি উৎখাত করে ফেলবে। আমাদের পায়ের নিচে নাকি মাটিই নেই। এরা লম্বা লম্বা কথা বলে শুধু বিপ্লব করবে। বিপ্লব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।’
‘কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, কেউ যেন মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস দুর্নীতি এবং কোনো রকম অপকর্ম যেন করতে পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালোভাবে আমরা কিন্তু মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এগুলো চাই না। আমরা চাই, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে দেশের উন্নতি হয়।”
তিনি বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসের শিকার আমাদের নেতাকর্মীরা। আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা তাদের অপকর্মের জবাব দিই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। সেটাই কিন্তু আমরা দিয়ে যাচ্ছি। যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আমরা মূল্যায়ন করি।
এ সময় নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা চলছে।
তিনি বলেন, মেয়েদের যেখানে দিই তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে। একটা সময় ছিলো মা বাবা মেয়েদের বেশি পড়াতে চাইতো না। এখন মেয়েরা সব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারী পুরুষ একসাথে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। মেয়েদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস শিক্ষা-দীক্ষায় মেয়েরা উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে দলের ৪৮টি আসনের জন্য ১৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে নারী জাগরণ বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতা জানান দেওয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়লো। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।
নারী নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। তৃণমূলে গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকে আরও তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
পড়ুন: আ.লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু
পরে প্রতিটি বিভাগে থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। বহু নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলে তাদের সংসদে নিয়ে এসেছি। সংগঠনটা করতে হবে। কাজ করতে হবে।
নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।
তিনি বলেন, কতজনের বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর কি নিদারুন কষ্টে তাদের জীবন পার করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমাকে সেসব খবরও নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের আমি তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে। হারিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাস থেকে। অথচ তাদের কষ্ট, জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতর সহ্য করে এদেশ স্বাধীন করে তারপরও তারা কিন্তু কিছু পায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আজকে সুযোগ এসেছে। কাজেই আমি তাদের মূল্যায়ন করি।
গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার কারণে জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা রাষ্ট্র চালাতে গেলে অনেক মেধাবী লোকের দরকার হয়। আমাদের যারা মেধাবী তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এ সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে নিজের প্রত্যয়ের কথা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তিনি বলেন, ইতিহাস মুছে দিয়ে বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হয়েছিলো। কবরের মাটি ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিলো না। নানা ধরনের চক্রান্ত ছিলো। মা বাবা যেভাবে জীবন দিয়েছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে প্রয়োজনে নিজের রক্ত ঢেলে দেবো। অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। সেগুলো সহ্য করে ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি। আমাদের শুধু একমাত্র শক্তি ছিলো মানুষের ভালোবাসা। আর মানুষের জন্যই কাজ করা।
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ রাসেলকে হত্যা করেছিলো এই জন্য যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড, অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হয়েছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। সবসময় তাদের জন্যেই দোয়া করি। আওয়ামী লীগ বারাবার ক্ষমতায় আসবে, এটা কেউ ভাবতে পারেনি।
তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিশ্বে দেশের মর্যাদা বেড়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০০৮ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা। সেগুলো কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অগ্রগযাত্রায় পথ চলা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে চললে যে অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তার প্রমাণ। আগে বাংলাদেশের নাম শুনে বিশ্বে মানুষ বলতো বাংলাদেশ মানে ভিক্ষা করে চলে, দেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা ছিলো। আমার খুব কষ্ট হতো। আমরা তো বীরের জাতি। তাই প্রতিজ্ঞা ছিলো, দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের। বিশ্ববাসী যাতে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে মোট ১৫৪৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে দলের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
/পারভেজ/সাইফ/