শেষ আশা অপূর্ণ, রওশন এরশাদের বলয়ে বাবলা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
গুলশানে রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলন। পাশে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা
ক্ষোভ ও অভিমানে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ছেড়ে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সাথে যোগ দিয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
নির্বাচনি সমঝোতায় বাদ পড়া ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির পরাজিত এই প্রার্থী দেন-দরবার করেও নিজের স্ত্রীকে সংরক্ষিত কোটায় এমপি করতে না পেরে রাগে ক্ষোভে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্য হাজির হয়ে তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন তিনি।
পড়ুন: ৫ নেতাকে দায়িত্ব দিলেন রওশন
বাবলা এখনও দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট। জিএম কাদের এর পদ পদবি নিয়েই তিনি তাকে ছেড়ে রওশনের দলে যোগ দেন।
এ সময় বাবলা বলেন, ‘রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নতুন উদ্যমে জাতীয় পার্টি গঠন করবো। সারাদেশে ওয়ার্ড ইউনিট পর্যায়ে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবো। আমরা জানতাম, নিজের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। অথচ, আজ দেখা যাচ্ছে এখানে দেশের চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চেয়ে স্ত্রী বড়।’
জানা গেছে, রওশনের দলে যোগ দেওয়ার কারণে যেকোনো মুহূর্তে জিএম কাদের বাবলাকে অব্যাহতি দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে পারেন।
নির্বাচনি সমঝোতার আসন বাদ পড়ায় দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন দলের কো-চেয়ারমান ও মহানগর দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটে জাতীয় পার্টির। এজন্য দলের এমপি প্রার্থীসহ নেতাকর্মীরা পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দায়ী করে বনানী অফিসে বিক্ষোভ করেন। তাদের এই ক্ষোভ বিক্ষোভে নেপথ্যে নেতৃত্ব দেন বাবলা। এর মধ্যেই নিজের স্ত্রী সালমা হোসেনকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি করার দেন দরবার চালিয়ে যান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর দক্ষিণের এক নেতা জানান, বাবলা বিদ্রোহে শেষ পর্যন্ত থাকবেন না, নেতাকর্মীদের তিনি বলী করে দেবেন। কারণ তিনি স্ত্রীকে এমপি করার জন্য তদবির করছেন। আর এ কারণে কাকরাইলে অনুষ্ঠিত ক্ষুব্ধ প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় তিনি জিএম কাদের এর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ বলে চেয়ারম্যানের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন। তার এমন বিপরীতমুখী বক্তব্যে উপস্থিত নেতারা প্রকাশ্য তার ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। অথচ বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় জিএম কাদের দল থেকে বহিস্কার করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে। কিন্তু এই বহিস্কার নিয়ে কোনো কথা বলেননি বাবলা। বরং বেশ কিছুদিন চুপচাপ থেকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি। একইসঙ্গে দেন-দরবার করেন নিজের স্ত্রীর জন্য।
শেষ পর্যন্ত সালমা ইসলাম ও নুরুন নাহারকে নারী কোটায় মনোনয়ন দেওয়া হলে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাবলার। এ কারণেই তিনি জিএম কাদেরকে ছেড়ে রওশন এরশাদের দলে যোগ দিয়েছেন বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক বিরোধীদলের নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম সারোয়ার মিলন, ইয়াহিয়া চৌধুরী, কাজী মামুনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।
/নঈমুদ্দীন/এসবি/