১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে: জিএম কাদের
জিএম কাদের। ফাইল ছবি
বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে এবং উৎপাদন ছাড়াই সেগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
লোডশেডিংয়ের তথ্য তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোনো ঘাটতি হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চল এমনকি শিল্পাঞ্চলেও লোডশেডিং বাড়ছে। এ কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের কথা বলছি। যখন সারা দেশে তীব্র তাপদাহ বিরাজমান ছিল।
ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (পিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং রুরাল ইলেকট্রিক বোর্ড (আরইবি)। দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছে মূলত এ সংস্থার গ্রাহকরা। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৫৫ শতাংশই এ সংস্থার। তীব্র তাপদাহের সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং ভোগ করেছে। আরইবির সূত্র বলছে লোডশেডিং হয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট অঞ্চল ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলা এবং বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায়। এসব এলাকায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে তীব্র তাপদাহের সময়।
বিরোধীদলের নেতা বলেন, শিল্প-কারখানায় লোডশেডিং না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না। গাজীপুর মহানগরের নওজোর এলাকার তোহা ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার মহাব্যবস্থাপক কবিরুল হাসান বলেন, ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। জেনারেটর চালু রাখলে আগে মাসে ১৫ লাখ টাকার ডিজেল লাগত, এখন ৩০-৩৫ লাখ টাকা লাগছে। ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে ২ বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়।পরবর্তীতে ২০১২ সালে ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছর, ২০১৮ সালে ৩ বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫ বছরের জন্য এ আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইনটি কার্যকর থাকবে।
এ আইন থেকে স্পষ্ট যে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে আদালতের কাছে প্রশ্ন উপস্থাপন করা যাবে না। এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয়, দফায় দফায় অতিরিক্ত মূল্যে চুক্তি নবায়ন, অতি উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, বিনা দরপত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়। এ আইন অনুসারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংক্রান্ত কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। প্রয়োজনের বেশি ১০ হাজার মেগাওয়াটের ওপর উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে আছে। অর্থাৎ এ ১০/১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহের বিষয়টি পিডিবির কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে বিবেচনা করা যায়, এ চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনি। এ অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেসরকারি খাতে অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য। অনুসন্ধানে দেখা যায় এ ধরনের বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র কখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি বা ক্ষীণ সংখ্যক বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এর পরিমাণ তাদের সক্ষমতার ১-২ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ সময়েই উৎপাদনবিহীন অলস সময় পার করেছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে সরকারি হিসাবে ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সাধারণত ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাপপ্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে, এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। যদিও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার অনেক সময় জরুরি ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি করা হয়নি বলে জানা যায়। আশঙ্কা হয়, এর অনেকগুলো হয়তো সচলই ছিল না।
/এএএম/এসবি/