ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বিএনপিতে ব্যাপক রদবদল নিয়ে নেতাদের ভাবনা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৮ জুন ২০২৪  
বিএনপিতে ব্যাপক রদবদল নিয়ে নেতাদের ভাবনা

হঠাৎ করেই ব্যাপক রদবদল ঘটেছে বিএনপিতে। এক রাতের মধ্যে ৯টি কমিটি বিলুপ্ত করার পাশাপাশি ঘটেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা কমিটি পুনর্বিন্যাসকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রদবদল-সরকার পতন আন্দোলনে নেতাদের ব্যর্থতা এবং নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাই মূল কারণ। তবে এ রদবদল যোগ্যদের মূল্যায়নের পাশাপাশি আগামী আন্দোলন-কর্মসূচিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা।

বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর ৪টি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে ব্যাপক পরাজয়, আর বাকি দুটিতে অংশ না নেওয়ায় ব্যাকফুটে থাকা বিএনপি প্রতিবারই চেষ্টা করেছে ঘুরে দাঁড়াবার। সরকার হটানোর আন্দোলনে দলটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জোটগত এবং যুগপৎ আন্দোলন করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারেনি তারা।

প্রতিবারই আন্দোলন শেষে ব্যর্থতার কারণ খুঁজেছে দলের হাইকমান্ড। বিভিন্নভাবে দলীয় নেতাদের অবস্থান বদল করেও কিছুতেই সফল হতে পারেনি দলটি। গত বছরের ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের দিন রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়া বিএনপি গত ১৩ জুন একরাতে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি মহানগরসহ ৯টি কমিটি ভেঙে দেয়। এছাড়াও তারা পরিবর্তন আনে ছাত্র ও যুব সংগঠনের মধ্যেও। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তের সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করা হয় ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি। ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাহী কমিটিসহ মিডিয়া সেল এবং কৃষক দলেও আনা হয় ব্যাপক রদবদল।

কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-বলা হলেও মূলত কারণ অন্য। জানা গেছে, সঠিক সময়ে ভূমিকা রাখতে না পারার পাশাপাশি নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা ক্ষুব্ধ করেছে হাইকমান্ডকে। বিএনপি হাইকমান্ড মনে করে, এ কারণেই গত আন্দোলনে সফলতার ফসল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। এ বিষয়ে নেতাদের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল হচ্ছে না। দলের অনেক পোস্ট ফাঁকা আছে। আমি নিজে একজন পদধারী নেতা। আমি পদ ধরে রেখেছি, কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছি না। সেটা আমার বয়সের কারণে বা অসুস্থতার কারণে যাই হোক। সবকিছু বিবেচনা করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে দলের মধ্যে পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

অন্যদিকে, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল মনে করেন, ব্যর্থতার দায়ে নয় বরং নতুন করে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের উদ্দেশ্যেই দলের মধ্যে এ পরিবর্তন। তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচিগুলো যারা ভালোভাবে ও সফলভাবে পালন করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আর যারা ভূমিকা রাখতে পারেননি, তাদের সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি দলতো হাওয়ায় চলে না, তাকে সবকিছু দেখতে হয়। একটা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সেখানে নতুন কাউকে আনতে হয়, এটাই নিয়ম।

ঈদের মাত্র দুদিন আগে এমন রদবদলে দলের ভেতরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি এই নতুন নেতৃত্ব পরবর্তী আন্দোলনে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করবে বলে মনে করেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিএনপির ঢাকার দুটিসহ (উত্তর ও দক্ষিণ), চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকার ৪ আঞ্চলিক কমিটি এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিএনপি ও যুবদলে এই ওলট–পালটের মধ্যে গত শনিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের (আংশিক পূর্ণাঙ্গ) কমিটির ঘোষণা আসে। নির্বাহী কমিটিতে ৩৩ পদে নেতাদের কাউকে কাউকে নতুন যুক্ত করা হয়েছে, আবার কারও কারও পদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এই রদবদলে উপদেষ্টা পরিষদে ১১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন জহির উদ্দিন স্বপন ও মেজর জেনারেল (অব.) মো. শরীফ উদ্দীন।

সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে রদবদল
কাজী সাইয়েদুল আলম সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ), সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ), জি কে গউছ সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ), শরিফুল আলম সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ), সুলতান সালাউদ্দিন প্রচার সম্পাদক, মোর্শেদ হাসান খান গণশিক্ষা সম্পাদক, শামীমুর রহমান গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক, আমিরুল ইসলাম খান সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ), নজরুল ইসলাম আজাদ সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ), আমিনুল ইসলাম সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ), মীর হেলাল উদ্দিন সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ), আবু ওয়াহাব আকন্দ সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ)। মিফতাহ সিদ্দিকী সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ), নাহিদ খান সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, মো. নজরুল ইসলাম সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, এস এম সাইফ আলী সহ–তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন
আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। তারেক রহমান এই কমিটির প্রধান হলেও কার্যত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করবে বলে জানা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আগের কমিটির প্রধান ছিলেন।

নতুন এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নজরুল ইসলাম খান (স্থায়ী কমিটির সদস্য), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (স্থায়ী কমিটির সদস্য), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ভাইস চেয়ারম্যান), নিতাই রায় চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান), ইসমাইল জবিউল্লাহ (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য), হুমায়ুন কবির (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক), সিরাজুল ইসলাম (সাবেক রাষ্ট্রদূত) ও তাজভিরুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি)।

/এমএ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়