ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

হাওরে সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিতে হচ্ছে: রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ২০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৪:৫৪, ২০ জুন ২০২৪
হাওরে সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিতে হচ্ছে: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী আহমেদ

হাওর এলাকায় সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিতে হচ্ছে ওই এলাকার মানুষজনকে। যে কারণে আজ তারা বন্যাকবলিত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে যেনো বন্যা ও ধ্বংস সমার্থক হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে বন্যা ধ্বংসের তাণ্ডব চালাচ্ছে। উজানের প্রবল ঢলে সিলেট ও রংপুর বিভাগে নদীগুলো উপচে দুই পাশে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। লক্ষ-লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারের ভুল নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে আজ বন্যা উপদ্রুত মানুষদের।

আরো পড়ুন:

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের অভিমত সিলেটের হাওর উন্নয়নের নামে চলছে অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড। নদীতে বাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক গতি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার কারণেই বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অঞ্চলে প্রতি বছর বন্যা হওয়ার পরেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি সরকার। বৃহত্তর সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে পানিবন্দি মানুষের কাছে কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। এক অসহায় বিপন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে লক্ষ লক্ষ বন্যা উপদ্রুত মানুষেরা। আমি ওসব অঞ্চলে বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীদেরকে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জোর আহ্বান জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যে সরকারের কর্মসূচি, সে সরকারের দ্বারা একটি জাতির উন্নতি লাভ কখনোই সম্ভব নয়। আজ ডামি সরকারের লুটেরা নীতির জন্যই ভুক্তভোগী জনগণের মর্মভেদী অশ্রুপাতের কারণ। আওয়ামী সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে নিজের ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য উন্নয়নের কর্মকৌশল নির্মাণ করেছে। সুতরাং সেই উন্নয়ন মধ্যে পাটকাঠির কাঠামো রয়েছে বলেই সেটি ধ্বসে পড়ছে, আর দেশের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্যোগ ও দুর্ভোগ।

বিশ্বের শীর্ষ বায়ুদূষণ শহর ঢাকা জানিয়ে রিজভী বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলো প্রচণ্ড বায়ুদূষণে নিমজ্জিত। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নেই বলেই বাংলাদেশের বায়ু ক্রমাগতভাবে দূষিত হচ্ছে। 

কোরবানির পশুর চামড়া এবারও বিক্রি হয়নি জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, আড়তদাররা কোরবানির চামড়া ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাও সিন্ডিকেটবাজদের কারসাজি। গরিবের হককে বঞ্চিত করে একচেটিয়াকরণ করার জন্যই দেশের কোরবানির চামড়া সিন্ডিকেটওয়ালারা কৌশলে মূল্যহীন করেছে। প্রশাসনের নির্ধারিত দামেও চামড়া কিনেনি তারা। কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। এমনিতেই এবারে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষেরা কোরবানি দিতে পারেনি। সরকারি হিসাবে অবিক্রিত থেকেছে ২৫ লক্ষ ৮১ হাজার পশু। বাস্তবে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এরপরেও চামড়ার দাম নিয়ে এহেন নৈরাজ্য কেবলমাত্র এই সরকারের আমলেই সম্ভব। মানুষের বেঁচে থাকার সব অবলম্বনকেই এরা নিরুদ্দেশ করে দিতে চায়।

রিজভী বলেন, দেশের সরকার যে সিন্ডিকেটবাজদেরই সরকার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন কোনো জবাবদিহিতা থাকে না তখন সব সেক্টরে সরকারের দোসররাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও তাদের দ্বিধা হয় না। বাংলাদেশের মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার।

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস জানিয়ে রিজভী বলেন, প্রতি বছর ২০ জুন এই আন্তর্জাতিক দিবসটি জাতিসংঘ কর্তৃক উদযাপিত হয়। সারাবিশ্বের উদ্বাস্তুদের সম্মান করার জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে প্রধান শরণার্থী সমস্যা রোহিঙ্গারা। প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকালও পাহাড় ধ্বসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ জন মারা গেছে। কিন্তু তাবেদার নতজানু সরকার তাদের নিজ দেশে ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। এদেরকে নাগরিক হিসেবে নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। কিন্তু অতীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় তাদেরকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা।

রিজভী বলেন, দেশের কোটি-কোটি যুবক এখন বেকার। অনেক তরুণ যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভূমধ্যসাগরসহ বিভিন্ন সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেরই সলিল সমাধি হচ্ছে। বহুসংখ্যক বাংলাদেশি এখন নিজ দেশেই পরবাসী। একদলীয় শাসনে নিজ দেশেরই ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারণে নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। এরা দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। হিংস্র কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণেই বহুদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ অন্যদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। আমি সারাবিশ্বের শরণার্থীদের প্রত্যাশা ও উন্নত জীবনের আকাঙ্খার প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।

দেশের বিত্তবানদের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্তানরাও নিজেদের জমিদার সন্তান ভাবছেন। তারা মনে করেন আইন যেন তাদের হাতের মুঠোয়। ঈদের দিন রাতে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার প্রবাসী মেয়ের গাড়ির সঙ্গে একটি বাইকের ধাক্কা লাগায় দুইজন বাইক আরোহীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতার লোকজনরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ঈদের দিন মানুষ হত্যার উন্মাদনার মধ্য দিয়েই আওয়ামী ক্যাডাররা উৎসব পালন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।

/এমএ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়