ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

‘দেশবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করছে সরকার’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ৫ জুলাই ২০২৪  
‘দেশবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করছে সরকার’

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীরা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, বর্তমান ডামি সরকার ও সকল মন্ত্রী-এমপি দেশের জন্য ক্ষতিকারক। এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থে সবকিছু করছে। দেশবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করছে সরকার।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা জেলা দক্ষিণ ও পূর্ব শাখা আ‌য়ো‌জিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ব‌লেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সবকিছু উজার করে দিতে পেরে তৃপ্ত ও খুশি। কিন্তু, দেশের জন্য কিছু নিয়ে আসতে না পারা যে তার জন্য ব্যর্থতা, তা বুঝতে পারছেন না। এই প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য অভিশাপ। এদেরকে এখনই বিদায় করে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের রেল করিডোরের স্বপ্ন পূরণ করতে দেওয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে এই সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়া হবে।

তি‌নি ব‌লেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রেল করিডোর। এটি দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে চুক্তি করা হয়েছে। তাই, এসব চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল এবং দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমা‌বে‌শে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদল কাইয়ূম। সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণের সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—সংগঠনের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফেজ এম হাছিবুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সুলতান আহমদ খান, অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান, শাহীন আহমদ, মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন, যুবনেতা মিরাজ হোসেন মঈন, ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ মাহমুদসহ জেলা শাখা ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ভারতের রেল বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে চলতে দেওয়া হবে না। একবার যদি পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের রেল চলতে দেওয়া হয়, তাহলে এ রেল আর বন্ধ হবে না। ফলে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না। ভারতের সাথে আমরা সুসম্পর্ক চাই, কিন্ত তা হতে হবে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সাথে ১৩টি চুক্তি কথা বলা হেয়ছে।

তি‌নি বলেন, বর্তমান সরকারকে রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এজন্য এই দুই বাহিনীকে ভারতে ট্রেনিং দিয়ে মগজধোলাই করার চুক্তি করা হয়েছে। ভারত আমাদেরকে কী ট্রেনিং দেবে?

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কোটা প্রথা বাতিল করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এখন আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে পুনরায় কোটা প্রথা বহাল করে মেধাহীন প্রশাসন তৈরি করছে। আর এরাই দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু, এর অর্থ এই নয়, যে তাদের নাতি-পুতিরাও এর দোহাই দিয়ে ৫৬ ভাগ চাকরি নিয়ে যাবে। আমরা কোটা চাই সর্বোচ্চ ১০ ভাগ।

মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, বর্তমান সরকার জনগণবর্জিত সরকার। দেশের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে ভারতের সাথে অসম চুক্তি করতে পারে না।

মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছে। গত মাসেও প্রধানমন্ত্রী ভারতে দুইবার সফর করেছেন। সেখানে তিনি ১০টি চুক্তি করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের রেল যাবে। কিন্তু, সেই রেলের ভেতর কী থাকবে, তা বাংলাদেশ জানবে না। এতে অস্ত্র, মাদকদ্রব্য থাকতে পারে। সেজন্য দেশের ওপর দিয়ে অবৈধ রেল করিডোর আমরা মানি না।

ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা জেলা দক্ষিণের সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাতায়াত শুরু হবে। কিন্তু, বাস্তবে এটি পরীক্ষামূলক থাকবে না। তাই, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আন্দোলনের ঝাপিয়ে পড়তে হবে। যদি ভারত এই রেল করিডোর ব্যবহার করা শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না। এখন যেমন বাংলাদেশের মানুষ সরকার গঠন করার ক্ষমতা হারিয়েছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ সার্বভৌমত্ব হারাবে। এজন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের রেল চলতে দেওয়া হ‌বে না।

সমাবেশের পরে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে এক‌টি বিশাল মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি ঘুরে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়