ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদালতের যেন একটা টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক: রিজভী 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ১১ জুলাই ২০২৪  
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদালতের যেন একটা টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক: রিজভী 

কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আপনি তো পরিপত্র জারি করেছিলেন যে-কোটা থাকবে না। তাহলে আবার আদালত থেকে এটা হলো কেন? আমাদের তো মনে হয়, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আদালতের একটা টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ আপনি যেটা ভাবেন, আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে সেটা চলে আসে। এটাই তো আমরা দেখছি। সরকার যেটা চান সেটা আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে চলে আসে। এই টেলিপ্যাথিক সম্পর্কটা হয় কী করে।

তিনি বলেন, এই যে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ছেড়ে প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসছে, এটার কারণ খুঁজে বের করুন। এটা কি অন্যায়? এটা কি ওদের অনায্য দাবি?

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান রাসেলের সন্ধানের দাবিতে ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, রাসেলের সন্ধানে তার পিতার যে আকুতি আমরা শুনলাম, এভাবেই বাংলাদেশের আকাশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য উল্কাপাত ঘটিয়েছেন এই ডামি ও দখলদার সরকার। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, মনে হচ্ছে সে দেশের চারিদিকে পাহাড়ের গুহা, আর সেই গুহা থেকে দস্যুদল এসে কোমলমতি ছাত্রদের-তরুণদেরকে ধরে নিয়ে নিরুদ্দেশ করে দেবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা বর্তমানে এমন একটি মাফিয়া সিন্ডিকেটের অধীনে বসবাস করছি, যেখানে প্রতিবাদ যারা করবে, তাদেরকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের রক্তাক্ত লাশ নদীর ধারে বা খাল ও নালার পাশে পড়ে থাকবে। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যে দেশের সরকার এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছে-মনে হয় তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নন। মনে হচ্ছে তিনি একটি মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, আজ আতিকুর রহমান রাসেল নেই, সবাই জানে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ধরে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজেও এসেছে সে খবর, কিন্তু এখনো তাকে আদালতে বা তার পরিবারের কাছে হাজির করছে না। মা হারা একটি ছেলে কোথায় খাচ্ছে, কোথায় ঘুমাচ্ছে, কোন আয়না ঘরে তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে- আমরা জানি না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী তার রাষ্ট্রীয় অপকর্ম ঢাকার জন্য তিনি একটার পর একটা ইস্যু তৈরি করছেন। মানুষ যেন ওই ইস্যুর দিকে ধাবিত হয়-ওইদিকে তার যেন চোখটা পড়ে থাকে। সবদিক থেকে ব্যর্থ সরকারের রাজকোষ খালি। এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে তিনি দেশকে নিয়ে গেছেন। এখন তিনি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন আবার ফিরে আসছেন খালি হাতে। ২০ মিলিয়ন ডলার চাইলেন চীনের কাছে, প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন মাত্র এক মিলিয়ন ডলারের। উনি যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে ফিরে এসেছেন, যদিও অজুহাত দিচ্ছেন অন্যকিছুর।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি কি তাহলে এই ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঢাকার জন্য বেনজীরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড, মতিউরকাণ্ড-এগুলোকে সামনে আনছেন? আমরা যেসব পৌরাণিক কাহিনি শুনেছি, বর্তমানে দেশে ঘটে যাওয়া সেসব কাহিনিকেও হার মানাচ্ছে। বেনজীরের কত টাকা? কত জমি দখল করেছে? আমরা গণমাধ্যমে যা জানতে পাচ্ছি- তার চাইতেও তো এদের সম্পদ বেশি। পিএসসির একজন ড্রাইভার চতুর্থ শ্রেণির চাকরিজীবী হয়ে তার যদি ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া যায়, তাহলে তো বেনজীর-আজিজ বা মতিউরদের সম্পত্তি আরও অনেক বেশি।

এই সরকার গুমের পার্মানেন্ট সংস্কৃতি তৈরি করেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, শুধুমাত্র নিজের সিংহাসনকে রক্ষা করার জন্যই আজকে তারা গুম খুনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবচাইতে বড় আতঙ্ক হচ্ছে বর্তমান সরকারের জন্য। এই আতঙ্কে থেকে নিজেদের নিরাপদ করার জন্য ছাত্রদল-যুবদল এবং গণতন্ত্রকামী নেতাদেরকে তারা গুম করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।

/এমএ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়