ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

গণশুনানিতে শঙ্কা প্রকাশ

কোটার কারণে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট হবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১২, ১১ জুলাই ২০২৪  
কোটার কারণে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট হবে

রাজধানীতে এবি পার্টি আ‌য়ো‌জিত গণশুনানিতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ

কানেকটিভিটির কথা বলে ভারতের স্বার্থ রক্ষাকারী একতরফা চুক্তিগুলোর কারণে জনমনে প্রতিনিয়ত ভারতবিরোধী ক্ষোভ বাড়বে। অন্যায্য কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের কার‌ণে দেশের নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পেশাজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টায় রাজধানীর বিজয়নগ‌রের বিজয়-৭১ চত্বরে আমার বাংলা‌দেশ পার্টি (এবি পার্টি) আ‌য়ো‌জিত গণশুনানিতে এ আশঙ্কার কথা জানান তারা।

ভারতকে করিডোর দেওয়া, বৈষম্যমূলক কোটা পুনঃপ্রবর্তন, বেনজীর-মতিউরের মতো দুর্নীতিবাজদের লুটপাট এবং লাগাতার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিকরা বক্তব্য রাখেন। এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হকের সভাপতিত্বে গণশুনানি পরিচালনা করেন দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

সূচনা বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে ট্রেনে করে ভারতের নাগরিকগণ তাদের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চলাচল করতে চাইলে বাংলাদেশের জনগণও ভারতের মধ্যে দিয়ে নেপাল, ভুটান ও চীনে যাতায়াতের অধিকার রাখে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলো, ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের কাছ থেকে আমাদের স্বার্থ আদায়ে মনোযোগী নয়। সীমান্তে বাংলাদেশি অসহায় নাগরিকদের নির্বিচার হত্যা বন্ধে ভারতের কাছ থেকে সরকার গত ১৫ বছরে কোনোা প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারেনি। সরকার ভারতের কাছ থেকে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাও আদায় করতে পারেনি।

কোটা পদ্ধতিকে সংবিধান পরিপন্থী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই কোটা সংস্কার করা না হলে নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করবে, যা কোনো না কোনো সময় গৃহযুদ্ধের পরিণতি ডেকে আনবে।

বিএম নাজমুল হক বলেন, জনগণের প্রশ্ন হলো, এই সরকারের সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক কেন শুধু ভারতের স্বার্থে? ভারতের সাথে যৌথ স্যাটেলাইট চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ কী? এতে আমাদের কী উপকার হবে? এই চুক্তি কি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি নয়? জনগণ এসব বিষয়ে জানতে চায়। অবিলম্বে একতরফা সমঝোতা স্মারক বাতিল করতে হবে। 

পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৬ জন প্রতিনিধি নিয়ে বেইজিং গিয়ে যে টাকা ভিক্ষা নিয়ে আসছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা বেনজীর, মতিউররা একেকজন লুট করেছেন।

তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের করা ভারতের সাথে একতরফা রেল করিডোর চুক্তি দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা বলেন, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ধ্বংস করতে চাওয়ার প্রয়াসের নিন্দা জানাই।

নারী উদ্যোক্তা আমেনা বেগম বলেন, দিন দিন আমাদের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। আমরা ঋণের জালে আটকে যাচ্ছি।

ছাত্র প্রতিনিধি খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছি। সেটা থামাতে সরকার আজ সারা দেশে পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলে পড়েছে। এর বিরুদ্ধে দেশবাসী সোচ্চার হোন।

শ্রমিক প্রতিনিধি মজিবর রহমান মল্লিক বলেন, ছেলেমেয়েদের বাজার করে খাওয়াতে পারছি না। সবাই মিলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে আর কোনো উপায় নেই।

সিকিউরিটি গার্ডদের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি মাসে এখন ৫-৬ হাজার টাকা ঋণ করে চলছি। জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। এ অবস্থা চলতে পারে না।

গণশুনানিতে আরও বক্তব্য রাখেন—এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমাদ বারকাজ নাসির, সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, ঢাকা উত্তরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক, মশিউর রহমান মিলু, আমেনা বেগম, রিপন মাহমুদ, যুবনেত্রী শাহিনুর আক্তার শীলা, ঢাকা মহানগর নেতা মুন্সি আব্দুল কাদের, সিএমএইচ আরিফ, রনি মোল্লাসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়