ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১ ১৪৩১

সম্পদ, শৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘুদের রক্ষার আহ্বান হেফাজতের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ৬ আগস্ট ২০২৪  
সম্পদ, শৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘুদের রক্ষার আহ্বান হেফাজতের

রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলা‌দেশ।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক জরুরি বৈঠ‌কে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির নেতারা এ আহ্বান জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী।

বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র-জনতাকে বিরোচিত অভিনন্দন জানিয়ে আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে এবং এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে এই জালেম সরকারের পতন ঘটেছে। এই জালেমের বিদায়ের মাধ্যমে এ জাতির লুণ্ঠিত মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। আওয়ামী স্বৈরশাসকের পতনের এই আনন্দঘন সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় মুহূর্তটি সকলে শান্তভাবে উদযাপন করুন।

তিনি বলেন, ‘অনুগ্রহ করে কারো প্রতি কেউ প্রতিরোধ, প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন কোনোভাবেই তুলে নেবেন না, যাতে একটু ভুলের কারণে আমাদের অর্জিত এই গৌরবজনক বিজয় লক্ষ্যচ্যুত না হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সচেতনতার সাথে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য আমরা দেশ ও জাতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, আজ আমরা এক নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্তি পেয়েছি। এই সরকারের শাসনকালে কত মাতা-পিতা তাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে বুকচাপা আর্তনাদে হাহাকার করেছেন, কত সন্তান তার বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে অসহায়ের জীবনযাপন করছেন, কত মা-বোন তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই। এই খুনি সরকার গত ১৫ বছরে এ দেশে ভয়াবহ রকম অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই জালেম আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে পিলখানায় আর্মিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। ২০১২ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে কথিত রায় পরবর্তী আন্দোলনে সাধারণ জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে উলামায়ে কেরামসহ নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতার ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছে। ২০২১ সালে মূর্তিবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আলেম-উলামা ও তালিবুল ইলমসহ তৌহিদি জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র-জনতার ওপর সরকারের মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ করে অগণিত মায়ের বুক খালি করেছে এই সরকার। যারা উলামায়ে কেরাম ও জনসাধারণের ওপর নৃশংস নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে নিজেদের হাত রক্তাক্ত করেছে, তাদের কেউ যেন এদেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে; সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জনগণের আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনীর প্রধানের প্রতি আমরা জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।

মহাসচিব আরো বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা দেশবাসীকে বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। এই বিজয় উৎযাপনে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করবেন না। দেশের সংখ্যালঘু ভিন্ন ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা হিন্দুদের মন্দির, তাদের বাড়ি-ঘর পাহারা দেওয়ার জন্য আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্রসহ হেফাজত এবং দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করছি। রাষ্ট্রের এহেন পরিস্থিতিতে যে কোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় এড়াতে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারো উস্কানির ফাঁদে পা দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর সাথে কোনো প্রকার সংঘাতে জড়ানো যাবে না।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামীদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মুফতি জসিম উদ্দীন হাটহাজারী, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা ফজলুল করীম, মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মুফতি বশিরুল্লাহ, মুফতি জাকির হুসাইন কাসেমী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমুদী, মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির, মাওলানা মাহবুবুল্লাহ, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি কামাল উদ্দীন, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনভী, মাওলানা আলী আকবার কাসেমী, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা শরিফুল্লাহ, মুফতি আমিনুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়