নিবন্ধন দিতে আদালতের নির্দেশ
‘এবি পার্টির প্রতি ইসির অবিচার জনগণ বিচার করবে’

সব শর্ত পূরণ সত্বেও অন্যায়ভাবে এবি পার্টিকে নিবন্ধন না দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে করা দলটির রিট মামলার সোমবার (১৯ আগস্ট) চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে এবি পার্টিকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের যৌথ বেঞ্চে সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনস্থ ৮ নম্বর কোর্টে এই রায় দেন বিচারপতিদ্বয়। রায়ে সব শর্ত পূরণ এবং নির্বাচন কমিশনের বাছাইয়ের প্রতিটি স্তরে প্রথম অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও এবি পার্টিকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ খ(১)(ক)(ই) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৬ উপ-বিধি (ঞ)(ই) অনুসারে গত ১৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে এবি পার্টি নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। আবেদনকারী ৯৩টি রাজনৈতিক দল হতে প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের পর ৪টি রাজনৈতিক দলকে ইসি চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে। সেই ৪টি দলের ১০ শতাংশ জেলা-উপজেলায় আবার পুনঃতদন্ত করা হয়। প্রতিটি স্তরের যাচাই-বাছাইয়ে আইন ও নিয়মানুযায়ী এবি পার্টি যোগ্য বিবেচনায় শীর্ষস্থানে ছিল। কিন্তু, সর্বশেষে এসে ইসি এসব যাচাই-বাছাইকে তুচ্ছ ও ছেলেখেলা বানিয়ে দিয়ে প্রহসনের আশ্রয় নিয়ে প্রেসক্রাইবড দুটি ভূঁইফোড় দলকে নিবন্ধন দেয়।
এরপর সর্বমহলে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ তারিখে এবি পার্টির পক্ষ থেকে রিট আবেদনটি করা হয়। সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও এবি পার্টিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সেদিনই রুল জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। একইসঙ্গে এবি পার্টিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না দেওয়া কেন অবৈধ হবে না, রুলে সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
দীর্ঘ এক বছর নানা আইনি প্রক্রিয়া ও যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৫ আগস্ট মামলার চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আজ মামলাটির চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর মামলার আইনজীবী ও এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ আদালত চত্বরে তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে মামলার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আদালত আজ যে রায় দিয়েছেন, তাতে এবি পার্টির ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন যে হঠকারী ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী কাজ করেছে, তা আজ স্পষ্ট হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, পদে পদে বাধা দিয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের নিবন্ধন বঞ্চিত করেছিল। এবি পার্টির প্রতি দলান্ধ নির্বাচন কমিশন যে অবিচার করেছে, জনগণ তার বিচার করবে।
মামলার রায় প্রদানকালে আদালত চত্বরে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, পরে তারা শুভেচ্ছা মিছিল করে দলীয় কার্যালয়ে আসেন।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ