ঢাকা     শনিবার   ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ৩০ ১৪৩১

সাংবা‌দিক‌দের জামায়া‌তের আমীর

আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই, সমালোচনা-পরামর্শ চলার পথকে সহজ করবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৮ আগস্ট ২০২৪  
আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই, সমালোচনা-পরামর্শ চলার পথকে সহজ করবে

ইসলামের সুমহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়ে এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির আমীর ডা. শফিকুর রহমান ব‌লে‌ছেন, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। আপনাদের সমালোচনা, পরামর্শ আমাদের চলার পথকে সহজ করবে। আমরা জাতি হিসেবে এক। আমরা কোনও বিভক্তি চাই না। আসুন আমরা শপথ নিই, আমরা জাতির স্বার্থে সর্বদা এক থাকব।

বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর লেকশোর গ্র্যান্ড হোটেলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও চীফ রিপোর্টারদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক‌দের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা ব‌লেন।

জামায়াত আমির বলেন, আমাদের প্রিয় সমাজ, জাতি ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রয়েছে, এর মধ্যে সাংবাদিকতা বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। সমাজের দুটি অংশের একটি সাংবাদিকতা ও আরেকটি রাজনীতি। এই দুটি ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্টগণ যখন সমন্বিতভাবে কাজ করেন, তখন সমাজটা কাঙ্ক্ষিত সমাজে পরিণত হয়। আর যেখানে এই বোঝাপড়ার ব্যত্যয় ঘটে, সেখানে সমাজকে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। জাতির ক্রান্তিলগ্নে এই দুই ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয়। যে সমাজে সকলেই নিগৃহীত হন, সাংবাদিকরাও সেখানে নিগৃহের শিকার হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ সাংবাদিকরাও তো সমাজেরই অংশ। 

বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে প্রধানত মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এই চার ধর্মের লোক বসবাস করে জা‌নি‌য়ে জামায়া‌তে আমীর ব‌লেন, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ। এখানে ধর্ম বা দলের ভিত্তিতে বিভক্ত করা চরম অন্যায়। আর যে জাতি এ ধরনের বিষয় নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে, সে জাতি একটা দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়। আমাদের পারস্পরিক বিভক্তির কারণে আমাদের প্রতি অন্যদের মাতবরি করার সুযোগ তৈরি হয়। আমরা পরস্পর বিভক্ত হয়ে এ মাতবরির সুযোগটা আমরাই তৈরি করে দিই। আমরা মনে করি, যেখানে জাতীয় স্বার্থ জড়িত সেখানে বিভক্তি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ জায়গাটায় আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আর কোনও ধরনের বিভক্তি চাই না।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত সাড়ে ১৫টি বছর আমরা আমাদের মুখের ভাষা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের কর্মের বিষয়গুলোতে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। আমরা মিডিয়াগুলোতে আমাদের বক্তব্য পাঠাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু সেখানে যে কারণেই হোক আপনাদের মনের আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও তা প্রকাশ করতে পারেননি বলে আমরা ধারণা করি। এ না পারার জায়গাটা চিরতরে বিলীন হয়ে যাক, নিশ্চিহ্ন হয়ে হয়ে যাক আমরা দোয়া করি। আমি ব্যক্তি হিসেবে এবং আমাদের দল ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের ভুল কেউ ধরিয়ে না দিলে, আমরা তো ভুলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যাব।

‘আসুন, আমরা সমাজের সব হাতগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসি। শপথ নিই, আমরা জাতীয় স্বার্থে এক। এ জায়গায় আমরা কম্প্রোমাইজ করব না। এটা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে গেলেও এতে আমাদের কিছু আসে যায় না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থ। আপনাদের কলম মুক্ত ও শাণিত হোক। আপনাদের মুখগুলোও মুক্ত ও স্বাধীন হোক। সকলের চিন্তা ও মুখ খোলাসা হোক এবং আমরা যেন নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারি ব‌লেন’ তি‌নি।

সমাজের শাসকরা যেন প্রভু বনে না যান। তারা যেন নাগরিকদের অধীনস্থ দাস মনে না করেন। বরং, নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে তারা বাধ্য হন এবং নাগরিকদের কাছেই তাদের জবাবদিহি করতে হবে জা‌নি‌য়ে জামায়া‌তের আমীর ব‌লেন, একজন কৃষকও যেন নির্ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে, লাঙল নিয়ে মাঠে যেতে পারে। একজন পিয়ন যেন ভয়ের সংস্কৃতিতে না থাকে, তাকে যেন বসের দাসে পরিণত হতে না হয়।

তি‌নি ব‌লেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের জাতীয় স্বার্থ, আল্লাহ তাআলা আমাদের এটা বুঝার এবং এক সাথে কাজ করার তাওফিক দিন।

কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

নঈমুদ্দীন/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়