ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১২ ১৪৩১

আইন হা‌তে তুলে নেবো না: জামায়া‌তের আমির

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২২:১৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আইন হা‌তে তুলে নেবো না: জামায়া‌তের আমির

‘আমরা বলেছি, আমরা প্রতিশোধ নে‌বো না; এর মানে হচ্ছে, আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নেবো না। কিন্তু, যিনি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে। গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপরাধ করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে।'

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অধিবেশনে সভাপ‌তির উদ্বোধনী বক্ত‌ব্যে এসব কথা ব‌লেন জামায়া‌তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তি‌নি আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঞ্চালনায় দলের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনে ডা. শ‌ফিকুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত যারাই মামলা করবেন, আইনের আশ্রয় নেবেন, কোনো মানুষের ওপর যেন বেইনসাফি না হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন আসামি করা না হয়।

‌তি‌নি বলেন, দেশটা আমাদের সবার। ছাত্রদের আন্দোলনে আপামর জনতা অংশ নিয়েছে। এ আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষ শরিক হয়েছে। প্রবাসী ভাইয়েরাও দেশবাসীর সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা নিগ্রহের শিকার হয়েছে। একটি দেশে ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আজীবন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড়িয়ে আনতে হবে। আমরা এ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই দেশের সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই, তারা আন্দোলনকারীদের ক্ষমা করে মুক্তি দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি, তাদেরকে মর্যাদাপূর্ণভাবে পুনর্বাসন করতে হবে।

জামায়া‌তের শহিদ নেতাদের স্মৃতিচারণ করে দল‌টির আমির ব‌লেন, কেবল ইসলামী আন্দোলন করার কারণে তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে থেকে ১১ জন নেতাকে অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাঁচজনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাজানো মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ফাঁসির মঞ্চে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচজন ইন্তেকাল করেছেন জেলের মধ্যে। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করার পরিবর্তে তার লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার জানাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। যাদেরকে সরকার অবৈধভাবে ফাঁসি দিয়েছে, তাদের একজনের জানাজাও শান্তিমতো করতে দেয়নি। শহিদ নেতৃবৃন্দের বাসা-বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনেকে নিজের বাড়িতে অবস্থান করতে পারেনি। শহিদ পরিবারের কোনো কোনো সদস্যকে গুম করা হয়েছে। গুমের শিকার দুজন মুক্ত হয়ে দেশবাসীকে তাদের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। আয়নাঘর নামক একধরনের গ্যাস চেম্বারে তাদেরকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলে, যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের মা-বোনদেরকেও বেইজ্জত করতে কুণ্ঠা বোধ করেনি।

‘হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতসহ বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে, যার প্রকৃত সংখ্যা জাতির কাছে অজানা। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটা রাত, প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ মহানগরী/জেলা এমনকি তৃণমূলের সকল অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অফিসের সবকিছু লুণ্ঠন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় আমাদের সামান্য স্পেস দেওয়া হয়নি। আমাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে,’ যোগ ক‌রেন তি‌নি।

হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো আমাদের দেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে, অভিযোগ করে জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বিরোধী দল বিএনপি, উলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের ওপর একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ওপর ভিন্ন মাত্রায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেমকে যেনতেন অজুহাতে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। বয়স্ক আলেমদেরকেও হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল।’

‘২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই জালিমরা ক্ষান্ত হয়নি, বরং আলেমদেরকে মুখ না খুলতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছর আমাদেরকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হয়নি। মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করায় সরকারের অকথ্য জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদও আমরা করতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার তিনটি অগ্রহণযোগ্য প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে। গুম, খুন, হত্যা, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দখলদারী, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ যখন চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে, তখন জমিনে আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা নেমে আসে,’ ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

ডা. শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, বিগত সরকার ক্ষমতার লোভে, জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার শুধু স্থলভাগেই নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর পরে আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সরকার দিশেহারা হয়ে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে।

দে‌শের টাকা দে‌শে ফি‌রি‌য়ে আনার দা‌বি জা‌নি‌য়ে জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে ব্যাংক থে‌কে যারা টাকা পাচার ক‌রে‌ছেন, এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। লুণ্ঠনকারীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তাদেরকে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

তি‌নি ব‌লেন, আজকে সময় এসেছে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। অন্যায়, অসত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। জাতির এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে না দিতে পারে, এজন্য সকলে মিলে আমরা পাহারাদারি করব। স্বাধীনতার পক্ষে আমাদেরকে আপসহীন অবস্থান নিতে হবে। আল্লাহ বাংলাদেশের ওপর রহমত নাজিল করুন। একটি সভ্য ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়