পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জামায়াত
পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষে ওপর নির্মম জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু, তাদের শেষরক্ষা হয়নি, বরং অতীতের মতো লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। এখনো তাদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি আয়োজিত ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও গুলি করে রুখে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, সংগ্রামী ছাত্র-জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি, বরং রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের জুলুম- নির্যাতনের অবসান ঘটিয়েছে। তাই, শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ ও টেকসই করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি সালাহ উদ্দীনসহ ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি, দাবি করে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ষড়যন্ত্র ও সমঝোতার নির্বাচনের মাধ্যমে কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল। এ কথার সত্যতা মিলেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের আত্মস্বীকৃতি থেকে। এর পরের ইতিহাস কারো অজানা নয়। ২০১৪ একতরফা তামাশা ও ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, ২০১৮ সালের নৈশভোট এবং ২০২৪ সালের পাঁতানো নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষোলকলা পূর্ণ করেছিল। কিন্তু, তারা দেশে সুশাসন উপহার দিতে পারেনি। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সেক্টরকে একেবারে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে একটি মানবিক ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করতে চায়। এ কাজকে গতিশীল ও অগ্রগামী করার জন্য আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে গণমানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সকল দায়িত্বশীলের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি কোরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। দেশে একটি সফল বিপ্লবের জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। প্রতিটি ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছাতে পারলেই দ্বীন কায়েমের পথ প্রশস্ত হবে। সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ধর্না দিতে হবে। সিজদায় লুটিয়ে পড়তে হবে একান্তভাবে। তাহলেই আল্লাহ আমাদের বিজয়ী করবেন।
একটি সফল বিপ্লবের জন্য দায়িত্বশীলদের আরো অধিক কর্মতৎপর ও নিষ্ঠাবান হওয়ার আহ্বান জানান মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল মন্ত্রই ছিল ন্যায়-ইনসাফ তথা জাস্টিস প্রতিষ্ঠা। তাই, শত শহিদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমাদেরকে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে শহিদদের প্রতি। নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি হতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদের যে কোনো কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহিদরা আমাদের জাতীয় বীর ও শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই, জাতীয় স্বার্থেই শহিদদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। শহিদ পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে যথাযথ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
নঈমুদ্দীন/রফিক
