ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৩ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্টের মতামতে রাষ্ট্রপতির দ্রুত পদত্যাগ চায় এবি পার্টি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১০, ২৮ অক্টোবর ২০২৪  
সুপ্রিম কোর্টের মতামতে রাষ্ট্রপতির দ্রুত পদত্যাগ চায় এবি পার্টি

সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দ্রুত পদত্যাগ চেয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতিও ‘অবৈধ’ বলে মনে করে দলটি।

তারা ভাষ্য- ‘অবৈধ’ রাষ্ট্রপতির দ্বারা রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ও শপথ ভঙ্গের বিষয়টি যেহেতু স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে এবং সরকারও তা মনে করে, সেহেতু কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির একটি যৌথ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই মতামত ব্যক্ত করেছেন এবি পার্টির নেতারা। তারা আরও কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সোমবার দুপুরে ঢাকার বিজয় নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুরে দুই পক্ষের মতবিনিময় হয়, সেখানে এবি পার্টি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।

সভায় রাষ্ট্রপতি ও সাংবিধানিক সংকটবিষয়ক চলমান যে বিতর্ক, তা নিয়ে উভয় পক্ষ থেকে মতামত তুলে ধরা হয়।

এবি পার্টি বলেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের এক কঠিন ক্রান্তিকালে গঠিত হয়েছে। পরিস্থিতিগত কারণে সে সময়ে সরকার গঠনকালীন প্রক্রিয়া, সরকারের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে বিশদ ভাবার সুযোগ ছিল না। ফলে ডকট্রিন অব নেসিসিটি, গণঅভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এই তিনটি বিষয় অনুসরণ করতে গিয়ে এক ধরনের জটিল সমীকরণ দাঁড়ায়।

দলটি ভাষ্য- ‘অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পলায়নের পর ‘অবৈধ’ রাষ্ট্রপতির অধীনেই নতুন সরকারকে শপথ গ্রহণ করতে হয়। এক ধরনের নৈতিক বৈপরীত্য সত্বেও সকল রাজনৈতিক দল ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতা তা মেনে নেন এবং সম্মতি দেন।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির একটি বিতর্কিত মন্তব্য ও বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও শপথ ভঙ্গের অভিযোগ উঠে খোদ সরকারের পক্ষ থেকে।

এ নিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ ও বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি জানিয়ে সর্বমহল সোচ্চার হয়।

রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বা তাকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হলে এর সাংবিধানিক প্রক্রিয়া কী হবে? এর কারণে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে কি না- এ নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের মধ্যে নানা রকম বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুসহ সার্বিক বিষয়ে এমন প্রশ্ন সামনে আসা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবি পার্টির মতামত হলো :
১. অবৈধ রাষ্ট্রপতির দ্বারা রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ও শপথ ভঙ্গের বিষয়টি যেহেতু স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে এবং সরকারও তা মনে করে সেহেতু কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

২. রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যেহেতু সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা করছে, তা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক বা বিভেদে না জড়িয়ে এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া যেতে পারে। যেভাবে ইতোপূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া হয়েছিল।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার সময়ে যেহেতু পরিস্থিতিগত কারণে এর প্রক্রিয়া, সরকারের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে বিশদ ভাবার সুযোগ ছিল না, বর্তমানে এ বিষয়ে একটি সুচিন্তিত সমাধান বের করা দরকার। অর্থাৎ এটা কি সাংবিধানিক সরকার না কি বিপ্লবী সরকার এ বিতর্ক অবসানের জন্য একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার।

৪. সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা, যাতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রচলিত সংবিধানের অনুসরণের কথা থাকবে এবং সরকারের অপরিহার্য কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক উঠলে তাতে ঘোষনাপত্রই প্রিভেইল করবে মর্মে পরিষ্কার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হবে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্র জারি করা যেতে পারে।

৫. সকল পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পুনর্লিখন প্রস্তাবনা চুড়ান্ত করা উচিত।

৬. বর্তমান সময়ে সরকারের কার্যক্রমকে আরও জোরদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ হিসেবে পুনর্গঠন করা উচিত। সে ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব নিয়ে সরকারে আরও নতুন উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এসব প্রস্তাবনার পাশাপাশি এবি পার্টির নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেছেন, মাত্র তিন মাস আগে রাজপথের জীবন-মরণ সংগ্রামে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা কেন আজ ক্ষুন্ন হচ্ছে! সেটা ভাবতে হবে। মাত্র কয়েক মাসে কার কোথায় কী ভুল হয়েছে ও মান-অভিমান জন্ম নিয়েছে, তা উপলব্ধি করতে হবে। কার দায় কতটুকু, সেটাও নির্ণয় করে সংশোধিত হতে হবে।

তারা বলেন, শত শত শহীদ, মর্মান্তিকভাবে আহত, হাজার হাজার পঙ্গুত্ব বরণকারী বিপ্লবী সৈনিক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী লাখো কোটি জনতার পক্ষ থেকে আকুল আবেদন; সবাই মিলে সরকারের বৈধতা, সাংবিধানিক বিতর্ক, নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে, কী কী সংস্কার দরকার এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ভুল-ত্রুটি পেছনে ফেলে বিজয়কে সুসংহত করা জরুরি। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ ও সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্নকে সফল করে তুলতে হবে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির আব্দুল্লাহ, মুখপাত্র সামান্থা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও হান্নান মাসউদ।

এবি পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান, মহানগরী উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল ও ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

রাইজিংবিডি/নঈমুদ্দীন/আরপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়