ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না: জিএম কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২০:৫৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না: জিএম কাদের

গ্রাফিক: রাইজিংবিডি

দেশে অরাজকতা ও অস্থিরতার বীজ বপন হয়েছে মন্তব‌্য ক‌রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না। আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে, তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করুন। আন্দাজে মামলা দিয়ে কাউকেই শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। একটি সংগঠনের সবাই কি অপরাধী? যদি তাই ভাবেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনাদের তফাৎ কী?’’

শ‌নিবার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তি‌নি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিলে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্যের ডাকের বাইরে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, ‘‘৫০ শতাংশ মানুষের দলকে সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে। এতে জাতিগতভাবে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদাররা বলেছিল, আমরা মানুষ চাই না, মাটি চাই। পোড়ামাটি নীতিতে মানুষকে গাদ্দার মনে করা হয়েছিল। ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে বাদ দিয়ে সুন্দর দেশ গড়া বাস্তবসম্মত নয়।

আরো পড়ুন:

‘‘আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ ‌নিক। যাদের নিবন্ধন দিয়েছেন তাদের কেন নির্বাচনে আসতে দেবেন না?’’

শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল মিটিং করা সাংবিধানিক অধিকার মন্তব‌্য ক‌রে কা‌দের ব‌লেন, ‘‘আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে। সাংবাদিকরা ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। পাসপোর্ট পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। নির্বিচারে আমাদের লোকদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কিন্তু জামিন দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।’’

‘‘৩০ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পত্রিকায় দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলে গেলে এই প্রজন্ম আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। অত্যন্ত সত্য কথা। আন্দোলনটা ছিল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। কারণ, শেখ হাসিনা বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার লোকজন লুটপাট করে দেশটা শেষ করে দিয়েছিলেন। একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমেই জাতির মুক্তি মিলবে। যে নির্বাচনের মাধ্যমে সব ধরনের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠিত হবে,’’ ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। ছবি: রাইজিংবিডি


জিএম কাদের বলেন, ‘‘কোনো আগ্রাসন এলে স্বাভাবিকভাবে আমরা তা প্রতিহত করব। এটার জন্য গলাবাজির দরকার নেই। কেউ কেউ বলেন, আগ্রাসন এলে এক ইঞ্চিও ছাড় দেব না। কে আপনাকে ছাড় দিতে বলে? আমাদের দেশে আর্মি আছে, বিজিবি আছে।’’

জাপা চেয়ারম্যান সরকা‌রের সমা‌লোচনা ক‌রে ব‌লেন, ‘‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে ‘দানবীয় সরকার’ গঠন করেছিল। এটা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার চাই। বৈষম্যমুক্ত সমাজের জন্য শুধু ছাত্র না, আজীবন সব শ্রেণিপেশার মানুষ যুদ্ধ করেছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে জাতীয় ঐক্য দরকার। সংস্কারে সবার মতামত দরকার আছে, পরবর্তীতে এটি সংসদেও পাস করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি সবার মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার করছে?’’

‘‘এখন দেখা যাচ্ছে, ঐক্যের চেয়ে প্রতিশোধের বিষয়টি সামনে আসছে। কেউ অপরাধ করলে বিচার করতে হবে, সরকার প্রতিশোধপরায়ন হলে বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আইনে বলা আছে, ১০টি অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরপরাধ শাস্তি না পায়। আপনারা সেটা ফলো করছেন? হত্যা মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা হচ্ছে সরকারের শক্তির উৎস। শক্তিশালী হাতকে লুলা করে দেওয়া হয়েছে,’’ ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে মন্তব‌্য ক‌রে কা‌দের ব‌লেন, ‘‘মনে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা করতে চায়, তা করতে পারছে না। দেশের ব্যবসায়ীসহ সব পেশাজীবীরা চিন্তিত ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও হাত দিয়েছে, আমরা সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সেই সমর্থন পদদলিত করেছে। সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলাম। ওনাদের সাথে কথা বলে আমরা সেটি হস্তান্তর করতে চেয়েছিলাম। তারা কর্মচারী দিয়ে সেই প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে। এমনকি ছবি তুলতেও নিষেধ ছিল তাতে। তারা সময় দিয়েও আমাদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা গ্রহণ করতে চায়নি। আমরা এত ঘৃণ্য হয়ে গেলাম? আমরা এতো নীচ হয়ে গেলাম। আমাদের হাত থেকে প্রস্তাবনা নিতে ঘৃণা হয়?’’

মানুষকে পথে-ঘাটে নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ ক‌রে জাপা চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, ‘‘এভাবে রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় ঐক্য বা নির্বাচন সম্ভব হবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্য থেকেই রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা চলছে।’’

‘‘পুলিশ ও প্রশাসন এখন কার কথায় চলছে? এমন বাস্তবতায় আমাদের লোকজন ভোট দিতে পারবে? আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতে পারবে? আওয়ামী লীগের মত কয়েকটি দল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে সব পাস করিয়ে দিলেন, সেটা কি টেকসই হবে? এমন সংস্কারে কি রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে? অস্থিরতা কি থামবে? দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বাইরে রাখলে তারা কি বসে থাকবে?’’ প্রশ্ন তু‌লেন তি‌নি।

জিএম কা‌দের ব‌লেন, ‘‘একতরফা নির্বাচনে জন্য শেখ হাসিনাকে নিন্দা করা হয়, আপনারা কি একই জিনিস করবেন? নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সন্ত্রাসী সংগঠন না হয়, তাদের উদ্দেশ্য যদি আইনবিরোধী না হয় তা হলে সেসব সংগঠনকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যাবে না। তাদের মধ্যে কেউ সন্ত্রাসী বা অপরাধী হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই নিয়ম।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘পুলিশের কিছু সদস্য চাকরি করে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য। তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। ইচ্ছা করে সবাই শেখ হাসিনার অপকর্মে জড়িত হয়নি। সবাইকে ঢালাও করে অপরাধী করলেন, শত্রু বানালেন, বাদ দিলেন... এর মধ্যেই শূন্য স্থানগুলোতে পুলিশ ও প্রশাসনে দলীয়করণ হয়ে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসন এখন অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ে তাদের নিয়োগদাতাদের কথা বেশি শুনছেন। এমন প্রশাসন দিয়ে কীভাবে সংস্কার ও নির্বাচন হবে।’’

সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আখতার, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরীফা কাদের, মাসরুর মওলা, উপদেষ্টা ড. নুরুল আজহার শামীম, নুরুল ইসলাম তালুকদার, নোমান মিয়া, লাকী বেগম, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা, মো. খলিলুর রহমান খলিল, মো. জাহিদ হাসান, মাইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, গোলাম রহমান মামুন, মেজর (অব.) মাহফুজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, শেখ আলমগীর হোসেন, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মো. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, আব্দুল হামিদ ভাষানী, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান মানসুর, মো. হুমায়ুন খান, জয়নাল আবেদীন, মো. আব্দুল হান্নান, সোহেল রহমান, এমএ রাজ্জাক খান, মিজানুর রহমান মিরু, জামাল উদ্দিন, ইব্রাহিম খান জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আজহারুল ইসলাম সরকার, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, শরিফুল ইসলাম চৌধুরী অর্ণব, অ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব, মাহমুদ আলম, শেখ মো. শান্ত, কেন্দ্রীয় নেতা মো. সামছুল হুদা মিয়া, মো. রেজাউল করিম, হুমায়ুন কবির শাওন, ওমর আলী মান্নাফ, আলাউদ্দিন আহমেদ, মো. আলমগীর হোসেন, নজরুল ইসলাম সরদার, মোতাহার হোসেন শাহীন, তাসলিমা আকবর রুনা, জেসমিন নূর প্রিয়াংকা, সোলায়মান সামি, মেহেদী হাসান শিপন, শাহ্ ইমরান রিপন, আল আমিন সরকার, নাজমুল হাসান রেজা, পারভেজ সাজ্জাদ, মাহমুদ হক মনি।

ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম প্রিন্স, তরুণ পার্টির সদস্য সচিব মোড়ল জিয়াউর রহমান, সাংস্কৃতিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক সুজন।

জেপির সাবেক নেতার যোগদান

শনিবার দুপুরে বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন জেপির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়