আ. লীগের পুনর্বাসনে চেষ্টাকারীরা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে: নাহিদ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করতে চান, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের ভুক্তভোগী গণজমায়েত’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
এ সমাবেশের আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি, গুম কমিশনের প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও যোগ দেন।
সমাবেশে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার হাতে রক্তের দাগ সব সময় ছিল, যেমনটি ছিল তার বাবার হাতে। আমরা দেখেছি পিলখানা হত্যাকাণ্ড হয়েছে, আমরা দেখেছি শাপলা চত্বরে নির্মম গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে, সর্বশেষ জুলাই মাসে ছাত্র জনতার ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘শেখ মুজিব যখন ক্ষমতায় ছিল বাকশাল কায়েম করে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র হরণ করেছিল। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। একটি দল ইতিহাসে দুই দুই বার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বারবার মানবাধিকার হরণ করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের বিদায় হয়ে গেছে। এখন আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করতে চান তাদেরও বাংলাদেশের জনগণ গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।’’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘‘আমরা এই সরকার থাকাকালীনই সকল গণহত্যা ও মানবাধিকার হরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করব।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে নির্বিচারে গুম, খুন ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তিকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কারা এই সুযোগ দিয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা আমাদের পুলিশকে গুম-খুনের কাজে ব্যবহার করেছে এবং ফ্যাসিবাদীকে নিয়ে ছবি বানিয়েছে, তাদের পক্ষে লিখেছে, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। ভারতের প্রেসক্রিপশনে আলেমদের হত্যা করা হয়েছে। তারা এখন খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠবে ভারত। শুধু তাই নয়, তারা চেয়েছে সংখ্যালঘুদের উস্কে দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে। কিন্তু আমরা ভারতের ফাঁদে পা দেইনি। তাদের সঙ্গে আর কোনো সমঝোতার রাজনীতি চলবে না। আর কোনো গুম নয়, আর কোনো খুন নয়। হয় মাতৃভূমি, না হয় মৃত্যু।’’
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘‘আওয়ামী সরকারের আমলে পুলিশ দিয়ে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে, নির্বিচারে গুম-খুন চালানো হয়েছে। পুলিশকে টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছে আওয়ামী সরকার। এখন আগের মতো আর অসমতার সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে নয়। কোনো ধর্ম বা জাতির নামে কেউ উগ্রবাদী কিছু করার চেষ্টা করলে সেটা আমরা সফল হতে দেব না। সবাই মিলে রুখে দেব।’’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মায়ের ডাকের আহ্বায়ক শারমিন ইসলাম তুলি। এতে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান, গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন।
গণজমায়েতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ইশরাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ, গুম-খুনের শিকার যারা, তাদের অনেক স্বজন বক্তব্য দেন এ গণজমায়েতে। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বাবা-মায়ের প্রতি শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের লেখা চিঠি পড়ে শোনান তার বাবা পলাশ।
ঢাকা/হাসান/ইভা