বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের রাজনীতির মাঠে বেশ সরব বিএনপি ও জামায়াত। এতদিন একে অন্যের বিরুদ্ধে তেমন কোনো বক্তব্য না দিলেও রবিবার হঠাৎ করেই দু’দলের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য সামনে এসেছে। যদিও শুরুটা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান-অটো শ্রমিক দলের পক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে তো বার বার মোনাফেকি করা না। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিএনপি কখনো পিছিয়ে আসেনি। ১৯৭১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনো মাথা নত করেনি।’’
রিজভী বলেছেন, ‘‘৫ আগস্টের আগে ব্যাংক লুট ও দখল করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন ব্যাংক দখল করছে একটি ইসলামি দল।’’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘‘শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দুই-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার আমলে যারা লুট করেছে সেই এস আলমদের উত্তরসূরি হয়ে ব্যাংক দখল করেছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। পাড়া-মহল্লায় টার্মিনাল দখল, টেন্ডার বাজিসহ নানা কিছু দখলে করেছে একটি দল। ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে জনগণ তাদের চেনে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত। ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের ফল জুলাই বিপ্লব। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ৯৭ জন শ্রমজীবী মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের অবদান গোটা জাতিকে অগ্নিগর্ভ করেছে।’’
এদিন বিকেলে রিজভীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতা জনাব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ‘ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘জনাব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ, কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চিনে জনগণ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।’ জনাব রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক যাবৎ প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১ এর বিরোধিতা এ সব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে। জনাব রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’ তার এই বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি। জনাব রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সাথে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কী জাতির সাথে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।’’
‘‘তিনি ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে জনগণ বিস্মিত। ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জামায়াতের প্রতি অভিযোগ উত্থাপনের আগে জনাব রিজভীর আত্ম-পর্যালোচনা করা উচিত। কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করে ভারতের সাথে সখ্যতা করার চেষ্টা করেছেন, তা জনগণ খুব ভাল করেই জানেন।
‘‘জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত জনাব রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অপবাদ আরোপের রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এরপর রাতে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জামায়াত আমিরের একটি ফটোকার্ড শেয়ার করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামাত দরকষাকষি করে ২২ আসন বাগিয়ে নেয় জোট থেকে। সে নির্বাচনে ডা. শফিকুর রহমান নিজেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাহলে কার সাথে জোট? আর কার সাথে মোনাফেকির কথা বললেন আমির?
ঢাকা/এনএইচ