ফেসবুকে এনসিপির দুই নেতার পোস্ট, প্রতিক্রিয়া

হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও আবদুল হান্নান মাসুদ
সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে ‘চাপ দেওয়ার’ অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দলের অন্যান্য নেতারা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার। মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের।সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমিসহ আরো দুই জনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় গত ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়।
পোস্টে হাসনাত ক্যান্টনমেন্টে আলোচনার বিভিন্ন কথা তুলে ধরে হাসনাত আরো লিখেছেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও কখনো এজেন্সি কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের ওপরেই আস্থা রেখেছি। আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের ওপরেই ভরসা রাখতে চাই।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে সেনাসদর থেকে জানানো হয়, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।’
রবিবার (২৩ মার্চ) ফেসবুকে ‘১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে আমার জায়গা থেকে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন’ নামে একটি পোস্ট করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এতে তিনি উল্লেখ করেন, সেদিন আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সাথে গিয়ে কথা বলি।
সারজিস উল্লেখ করেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য চাপ দেওয়ার’ যে বিষয়টি এসেছে সেখানে ‘চাপ দেওয়া হয়েছে’ এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।
সারজিস তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ না কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই প্রাইভেসি তারা বজায় রাখে। আমাদের সাথে সেনাপ্রধানের যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে সেগুলোর সাথে আমাদের সরাসরি দ্বিমত থাকলেও আমরা সেগুলো নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারতাম।
তিনি উল্লেখ করেন, কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।
সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
একই পোস্টে সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ কমেন্ট করেন, ‘এসব কি ভাই। পাবলিকলিই বলছি- দুইজনের একজন মিথ্যে বলছেন। এটা চলতে পারে না। আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হোল্ড করেও আপনারা যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে বিচরণ করছেন এবং তা পাবলিক করে এনসিপিকেই বিতর্কিত করছেন। মানুষ এনসিপিকে নিয়ে যখন স্বপ্ন বুনছে, তখন এভাবে এনসিপিকে বিতর্কিত করার কাদের এজেন্ডা। স্যরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
এর আগের দিন শনিবার সিলেটে এনসিপির ইফতার মাহফিলে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী হাসনাতের পোস্টকে শিষ্টাচার বহির্ভূত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “হাসনাত আবদুল্লাহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে মিটিং করেছেন-তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ হয়েছে।”
অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল্লাহ হিল বাকী ফেসবুকে পোস্টে উল্লেখ করেন, এনসিপি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই যেকোনো ইস্যুতে নেতারা ফেসবুকে যে যার মতো করে পজিশন নিয়ে লেখা শুরু করে। এটা দলটির জন্য ক্ষতিকর। এনসিপি নেতাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু প্রকাশ করার আগে অবশ্যই অবশ্যই দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নেওয়া।
ঢাকা/এসবি