ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এফ-কমার্স ব্যবসায় সফল সফিকুল 

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২৬ জুন ২০২১   আপডেট: ১৪:৫২, ২৬ জুন ২০২১
এফ-কমার্স ব্যবসায় সফল সফিকুল 

সফিকুল ইসলাম একজন তরুণ ব্যবসায়ী। শৈশব কেটেছে পটুয়াখালীতে। একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন স্কুল ও মাদ্রাসায়। ২০১২ সালে ভর্তি হন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিার্সিটিতে ট্রিপল-ই বিভাগে। পড়াশোনা শেষ করেন ২০১৬ সালে। চাকরি ছেড়ে নিজ উদ্যোগে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন ২০১৭ সালে। এরপর ২০১৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান গ্লো-সেভেন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সম্পর্কে জানাচ্ছেন গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত। 

সফিকুল ইসলামের বাবা ছিলেন একজন সমাজসেবক। ছোটবেলা থেকেই শান্ত প্রকৃতির ছেলে তিনি। বাড়ির সামনে বাবা গড়ে তোলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাবার স্কুলেই প্রাথমিক শিক্ষা। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন মাদ্রাসায়। ২০১০ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকার দারুণ নাজাত কামিল মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে টিসি নিয়ে ২০১১ সালে ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। 

২০১২ সালে দ্বাদশ শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভর্সিটিতে। ঢাকায় এসে পড়াশোনা শুরু করার পর নিজের খরচ চালানোর জন্য উপার্জন শুরু করেন। টিউশন করার মাধ্যমে উপার্জন শুরু করেন। ২০১৫ সালে ছাত্র অবস্থায় বসুন্ধরা সিটিতে একটি ফ্যাশন হাউজে চাকরি শুরু করেন। ব্যবসা শুরু করার আগে পণ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বেশ নজর দেন সফিকুল। মেয়েদের নানা ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন। জিম ও স্পোর্টস রিলেটেড প্রোডাক্ট নিয়েই মূলত তার কাজ শুরু। বর্তমানে প্রায় ৩০-এর অধিক আইটেম প্রোডাক্ট রয়েছে তাদের। নিজস্ব কিছু পণ্যও রয়েছে। শুরুতে ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমেই সেলস বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ছিল না৷ সরিফুল একদিন ছোট ভাইয়ের একটা ফোন বিক্রি করেন ১৪ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই পণ্য কেনেন। ব্যবসায়ী হওয়ার শুরুটা এখান থেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে প্রজেক্টের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও বির্তক ক্লাবে যুক্ত ছিলেন সফিকুল। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দেশের মধ্যে প্রথম রানারআপ হয় তাদের প্রজেক্ট। 

অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসা করার পরিকল্পনা করলেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পুরো পৃথিবীর মানুষ যুক্ত ভার্চুয়াল মাধ্যমে। অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনা করছেন অনেকেই, যাকে বলা হয় এফ-কমার্স। ই-কমার্স সাইটগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখতে পান এটা মূলত একটা মার্কেটপ্লেস, যেখানে তাদের নিজস্ব কোনো প্রোডাক্ট নেই। ফলে তারা প্রোডাক্টের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করতে পারেন না। সেজন্য ক্রেতাদের প্রায় সময়ই নানা অভিযোগ শুনতে হয়। আমার শুরুতে যেহেতু বড় অংকের টাকা ছিল না, তাই ব্যবসা করার জন্য এফ-কমার্সকে বেছে নিলাম। তখন কাস্টমার ফ্রেন্ডলি একটা অনলাইন শপ করার পরিকল্পনা করলাম। 

আমার পরিবারের সবাই ব্যবসায়ী। সবসময়ই অপছন্দ ছিল বেসরকারি চাকরি। কারণটা হচ্ছে এখানে স্বাধীনতা নেই। আমি ছাত্রজীবনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম জব করেছি। পড়াশোনা শেষে দু’টো প্রতিষ্ঠানে আইটি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমার কাছে পড়াশোনা ও প্রোফেশনাল লাইফ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। 

একটা ছোট ঘটনা বলি, এক বড় ভাই একদিন আমার কাছে জানতে চান ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে জব করলে না কেন? আমি সহজ ভাষায় বলেছিলাম, কোথায় জব করবো? তিনি জানান, ভালো কোন ফার্মে। আমি বললাম ফার্মের মালিক কার জব করেন। তিনি জানান, কারো চাকরি করবে কেন, সে তো ব্যবসা করেন। তখন আমি বললাম, আমি তবে কী করছি? আমি যদি সেই ফার্মের মালিক হতে পারি একদিন, তবে আমি চাকরি করবো কেন? 

আমি যেহেতু অনলাইনে ব্যবসা করি, তাই এইদিক থেকেই বলি। অনেকে ব্যবসাকে একটা পরীক্ষা মূলক জায়গায় নিয়ে আসেন, দেখি কী হয়, এমন আরকি। আমি এই কাজটা করিনি। আমি সবকিছু বাদ দিয়ে ব্যবসা সম্পূর্ণ নজর দিয়েছি সফল হওয়ার জন্য ব্যবসায়। 

ব্যবসা করতে গিয়ে এমন একটা গল্প বলুন, যা সবার জানা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এফ-কমার্স ব্যবসায় কখনো ফেসবুক প্রোফাইল দেখে কাউকে জাজ করবেন না। প্রোফাইল দেখে হয়তো ভাববেন এটা ফেইক অ্যাকাউন্ট। আমিই এমন একটা ঘটনা শেয়ার করি। অবুঝ বালিকা নামের একজন আমাদের পেজে মেসেজ দিলেন এবং জানতে চাইলেন নানা বিষয়ে। আমরা সবকিছুই জানালাম।  তিনদিন পর তিনি আবার মেসেজ দিলেন এবং তিনি বেশকিছু প্রোডাক্ট কিনলেন আমাদের কাছ থেকে। মাসের সেরা ক্রেতাও হলেন আমাদের দৃষ্টিতে। এই ঘটনা থেকে একটা কথাই বলবো, ফেসবুক প্রোফাইল দেখে কাউকে জাজ করবেন না। 

চাকরি বাদ দিয়ে ব্যবসা কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চাকরি করলে আমি হয়তো একটা নিয়মের মধ্যে কাজ করতাম। অনেক স্বাধীনতা থাকতো না। ব্যবসা করার ফলে আমি আমার নিজের মতো করে কাজ করতে পারছি। আমার সব চেয়ে বড় অর্জন এই তিন বছরে আমি অনেকজনের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি। নতুন যারা ব্যবসা করতে চান, তাদের বলবো, প্রথমেই উদাসীন হলে চলবে না। শুরুতে পরিকল্পনা মাফিক আগাতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে। যা সবাই করছেন, তার বাইরে কিছু করার সাহস করতে হবে। ক্রেতার আস্থা অর্জন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সঠিক পণ্য নির্বাচন করে ব্যবসা করতে হবে। তাহলেই ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, শুধু অনলাইন মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। ক্রেতার সুবিধার্থে পান্থপথে শো-রুম দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে শাখা বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। আমি চাই, আমার GLOO7 (গ্লো-সেভেন) ব্র্যান্ড দেশ ছাড়িয়ে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক একদিন। ব্যবসার পাশাপাশি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, পথশিশু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। 

করোনা পরিস্থিতিতে খানিকটা ধীর গতিতে এগিয়ে চলে ব্যবসা।  এ পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারাটাকেই বড় সাফল্য বলে মনে করেন তরুণ এই ব্যবসায়ী।

ঢাকা/মাহি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়