ঢাকা     বুধবার   ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২৯ ১৪৩১

সবজিতে আসছে অর্থ, ক্ষেতের ঘাসে গরু পালন

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১২ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১১:৫২, ১২ জুলাই ২০২১
সবজিতে আসছে অর্থ, ক্ষেতের ঘাসে গরু পালন

বিদ্যুৎ সাঁওতাল। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানের কাঁঠালবাড়ির বাসিন্দা। এক সময় তিনি বেকার ছিলেন। ভাবতের এভাবে আর কতদিন, কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু চা বাগানে থেকে কি-বা করার আছে? অবশেষে বাগানের বধ্যভূমির একটু দূরে পাহাড়ি জমি আবাদ করেন। শুরু করেন সবজি চাষ। কিন্তু জমিতে প্রচুর ঘাসের কারণে সবজি চাষে এগোতে পারছিলেন না। 

গরু কিনলেন। ফসলের জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করে গরুকে খাওয়াতে শুরু করেন। গরুর গোবরও কাজে লাগালেন। ব্যবহার করলেন ক্ষেতে। এতে ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। লালন পালন হচ্ছে গোয়ালের গরুগুলো। এতে তার মনে উৎসাহ তৈরি হয়। সরেজমিন গেলে চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান বিদ্যুৎ সাঁওতাল এসব কথা জানান। 

তিনি বলেন, কিছু সফলতা পাওয়ার পর প্রায় ১১০ শতক পাহাড়ি জমিতে কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ফসল চাষ করছি। এতে ভালো আয় হচ্ছে। আয়ের টাকা পরিবারের ভরণপোষণে ব্যয় করছি। আগের চেয়ে আমাদের যৌথ পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরেছে।

তিনি জানান, একই জমিতে লেবু, পেঁপে ও আনারস গাছ রোপণ করেছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো বিক্রি করতে পারছেন। এ মৌসুমে রোপণ করেছেন কুমড়া, ঝিঙ্গা ও কচু মুখী। এসব ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। চাষাবাদে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।  আয় হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। 

তার ভাই বাচ্চু সাঁওতাল বলেন, দুই ভাই মিলে ক্ষেতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। তাতে নিরাশ হতে হচ্ছে না, আসছে অর্থ। ক্ষেতের ঘাসে গরুগুলো লালন পালন করতে পারছি। চা বাগানে প্রতি পরিবার থেকে এক থেকে দুই জনের চাকরি থাকে। পরিবারের বাকি সদস্যদের চাকরি হয় না। তাই আমরা শ্রমিক পরিবারের সন্তান হলেও বাগানে কাজ নেই। তাই নিজেদের জীবন সচল রাখতে কৃষি কাজে মনযোগী হয়েছি। কৃষি কাজে অনেক লাভ। পাওয়া যায় অর্থ। কঠোর পরিশ্রমের কারণে শরীর থাকে সুস্থ। বাজার থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে না, নিজের উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি খেতে পারছি।

বাগানের বাসিন্দা সনজিত বাউরী বলেন, নিজের শ্রম ও মেধা কাজে লাগালে যে কোনো কাজে সফল হওয়া যায়।  বাগানের অনেকেই বেকার সমস্যা দূর করেছেন পাহাড়ি পতিত জমি আবাদ করে। এখানে বিদ্যুৎ ও বাচ্চু সাঁওতাল কৃষিতে পিছিয়ে নেই। তারাও শ্রম-মেধা কাজে লাগিয়ে নিজ চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে বাগানের চাষিরা ফসল চাষে অনেক দূর এগোবেন।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, কৃষি বিভাগের কাজই হলো কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। আর হবিগঞ্জ কৃষি বিভাগ এ কাজটি গুরুত্বের সাথে করে যাচ্ছে। ফলে জেলাজুড়ে ধান, সবজি, ফল চাষে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। লালচান্দ বাগানে পতিত জমি আবাদ করে বিদ্যুৎ, বাচ্চু সাঁওতাল ছাড়াও অন্যান্য কৃষক চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আমরা তাদের পাশে আছি।

হবিগঞ্জ/মাহি 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়